এখনো দৃশ্যমান হয়নি ওসমানী বিমানবন্দরের প্রকল্পের কাজ

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই বিশ্বের দেশে দেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলেও এখনো বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা। মানও হয়নি আন্তর্জাতিক। এ কারণে ওসমানী বিমানবন্দরের আধুনিকায়নের দিকে নজর দেন বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে কাজ শুরু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের আন্তর্জাতিক মানের কার্গো ও যাত্রী লাউঞ্জসহ প্রায় সব সুযোগ সুবিধাই রয়েছে। এই প্রকল্পের ধীরগতিতে এখন ক্ষুব্ধ সবাই। বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। বৃহস্পতিবার তিনি এই প্রকল্প এলাকা পরির্দশন করে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন। কাজে কেন বিলম্ব হচ্ছে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্বাচনের অন্যতম ওয়াদার মধ্যে ছিল ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পুর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক রূপ দেয়া।
একইসঙ্গে বিমানবন্দর হাব করার চিন্তাও রয়েছে তার। এ কারণে তিনি সিলেটের কাছাকাছি ভারতের সেভেন সিস্টার এলাকার লোকজনের বহির্বিশ্বে যাতায়াতের জন্য সিলেটের এই বিমানবন্দরকে আধুনিক বিমানবন্দর গড়ে তোলার দিকে তার নজর ছিল। বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শাসনে এই কাজ শুরুও হয়েছিল। কিন্তু বার বার মুখ থুবড়ে পড়ার কারণে খোদ এখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন বৃহস্পতিবার ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে বিমানবন্দরের টার্মিনালের কাজ বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘ব্যয় বাড়াতে আমাদের দেশে উন্নয়ন কাজ বিলম্ব করার ট্রেডিশন রয়েছে। এটা চায়না বা জাপানিরা করে না। তারা মেয়াদের আগে কাজ শেষ করে। মেট্রোরেলের কাজও তারা ৬ মাস আগে শেষ করেছে, টাকাও ফেরত দিয়েছে। বাংলাদেশিদের চেয়ে চীনারা অনেক অভিজ্ঞ। তারা চাইলে জনবল ও ইকুইপমেন্ট বাড়িয়ে ২০২৩ সালেই নতুন টার্মিনাল ভবনের কাজ সম্পন্ন করতে পারে।’ মন্ত্রী বলেন- ‘জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবনের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল। সেটি আমরা সমাধান করেছি।’ সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় ৪৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি ৪১ পিসিএন থেকে ৯০ পিসিএনে উন্নীত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই কাজ শেষ করা হয়েছে। এখন এই বিমানবন্দরে পুরোদমে বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ অবতরণ করতে পারছে। ইতিমধ্যে এই রুটে লন্ডন-সিলেট ফ্লাইট চালু হয়ে গেছে। প্রকল্পের পর সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প ২৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ৩৪৯১৯ বর্গমিটার প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, ৬৮৯২ বর্গমিটারের কার্গো ভবন, কন্ট্রোল টাওয়ারসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ার কারণে সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার তাগিদ রয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের এক শীর্ষ কর্মকর্তার একগুঁয়েমির কারণে প্রকল্পটির এক-চর্তুথাংশ কাজও শেষ হয়নি। এখনো বিমানবন্দর এলাকায় দৃশ্যমান হয়নি প্রকল্পের কাজ। ফলে আগামী এক বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ না-ও হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে, পররাস্ট্রমন্ত্রী তার নির্বাচনী ওয়াদা রক্ষার জন্য আগামী নির্বাচনের আগেই প্রকল্পের কাজ চুড়ান্ত দেখতে চান বলে জানিয়েছেন। এদিকে, এ ব্যাপারে প্রকল্পের পরিচালক শাহ জুলফিকার হায়দার কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনা যথা সময়ের মধ্যে পালন করবেন কিনা সেটিও জানাননি। প্রকল্প সূত্র জানায়, নামমাত্র কাজ করেই ২১৩ কোটি টাকার বিল নিয়ে গেছে ঠিকাদার। অথচ অল্পকিছু পাইলিং ছাড়া এখনো কোনো ভবনই দৃশ্যমান হয়নি। বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তারাও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিবার বৈঠক করেছেন। গত ২ বছরে প্রকল্পের আওতায় প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবনসহ ল্যান্ডসাইড এলাকার শুধু মাটি খনন কাজের কিছু অংশ শেষ হয়েছে। কার্গো টার্মিনাল ভবনের বালি ভরাটকরণের কাজ চলমান রয়েছে। কার্গো টার্মিনাল ভবনের ২৭২টি পাইলের মধ্যে সব, টার্মিনাল ভবনের ১৪৪৩টি পাইলের মধ্যে ৮১১টি, প্রশাসনিক ভবনের ১২৯টি পাইলের মধ্যে ১০৬টির কাজ শেষ হয়েছে। মোট ১৯৩৮টি পাইলের মধ্যে ১২৮২টির কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া কার্গো টার্মিনাল ভবনের ৮৫টি পাইলের মধ্যে ৭৬টির ক্যাপ সম্পন্ন হয়েছে। এটি করতে তাদের দুই বছরের অধিক সময় ব্যয় হয়ে গেছে। এখন উপরের কাজ শেষ করতে আরও দুই বছরের অধিক সময় লাগার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা।