দেশ নিয়ে ছিনিমিনি আর কেউ খেলতে পারবে না: প্রধানমন্ত্রী

দৈনিকসিলেটডেস্ক
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, এই দেশ নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। আমরা কাউকে দেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ চলবে। এ মাটিতে (টুঙ্গিপাড়া) বসে এই প্রতিজ্ঞা করছি- কেউ যাতে বাংলাদেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতির গতিরোধ করতে না পারে, তার জন্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যন্ত প্রত্যেক নেতাকর্মী সজাগ থাকবে এবং দৃঢ় থাকবে। যে কোনো অপকর্ম প্রতিরোধ করবে। এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব।
গতকাল শনিবার দুপুর দেড়টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের নতুন কেন্দ্রীয় জাতীয় কমিটি, কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম যৌথসভায় শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা সঞ্চালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভায় দলের নবনির্বাচিত কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মিলনায়তনের বাইরে স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীও উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এ বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। তাদের ঘৃণা জানাতে হবে। তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। হত্যা, খুন ও গুম জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল। খালেদা জিয়া ও তার ছেলে মিলে ২১ আগস্ট থেকে শুরু করে অনেক মানুষ হত্যা করেছে এবং অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। আগামীতে যদি একটা মানুষকেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত করে, তা হলে যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, ওই আগুনে সেই হাত পুড়িয়ে দেওয়া হবে। মানুষ খুন করলে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হবেÑ এ কথাটি যেন সবার মনে থাকে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তারা (বিএনপি) আন্দোলন করতে চায়, আমরা বাধা দেব না। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি আবারও কোনো নাশকতা করে, তা হলে জনগণ তাদের ছাড়বে না।
শেখ হাসিনা বলেন, তারা বলে আওয়ামী লীগ নাকি দেশের সর্বনাশ করেছে। তা হলে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নই কি তাদের সর্বনাশ? তাদের জিজ্ঞেস করতে হবেÑ ক্ষতিটা দেখল কোথায়? একই দিন ১০০ সেতু ও ১০০ সড়ক উন্নত এবং উদ্বোধন করা কি সর্বনাশ? এগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরা উচিত। আমরা আছি জনগণের পাশে, আর তারা আছে ধ্বংস করতে।’
আগামীতে এলে আগে কোটালিপাড়ায় যাবেন বলে নেতাকর্মীদের জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের নেতাদের টুঙ্গিপাড়া সফরের অনুরোধ জানান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনাদের সবার দাওয়াত থাকল, যে কোনো সময় চান টুঙ্গিপাড়ায় আসতে পারেন। আমাদের আতিথিয়েতা নিতে পারেন। আমাদের দেশের লোক আপনাদের সাদরে গ্রহণ করবে।
শীতের তীব্রতার কারণে সভা মুলতবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রচণ্ড শীত। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন। তাই সভার মুলতবি হওয়াই ভালো। আগামী শুক্রবার বা শনিবার সভাটি পুনরায় করার ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, আগামী সপ্তাহের যে কোনো দিন সভা হবে। সেখানে সবাই উপস্থিত থাকবেন।
যৌথসভার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশের মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পাচ্ছে। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য যা দরকার, তা তার সরকার করবে। পরে দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যরিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে সভায় শোক প্রস্তাব পাস হয়।
এদিকে যৌথসভায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৭ মার্চ, গণহত্যা দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়। শেখ হাসিনা জানান, কোভিড মহামারীর কারণে গত দুই বছর জাতীয় শিশু দিবস জাঁকজমকভাবে করা হয়নি। এবারে আমরা দিবসটি ভালোভাবে পালন করব।
যৌথসভার আগে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালিপাড়ায় ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ১টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত শুক্রবার টুঙ্গিপাড়ায় আসেন শেখ হাসিনা। তিনি বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পর সড়কপথে খুলনায় গিয়ে মায়ের নামে কেনা সম্পত্তি ঘুরে দেখেন। খুলনা থেকে আবার সড়কপথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ফিরে নিজ বাসভবনে রাতযাপন করেন। গতকাল সকালে তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী ইউনিয়নের পুবের বিলে নিজেদের পৈতৃক জমি পরিদর্শন করেন। এ জমিতে বছরের ৮ থেকে ৯ মাস পানি থাকে। এ কারণে তাতে ভাসমান বেডে সবজি ও অন্যান্য ফসল চাষ করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল দুপুরে দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ড. মশিউর রহমান, ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন, রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু, রমেশচন্দ্র সেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সতীশচন্দ্র রায়, আধ্যাপক আবদুল খালেক, আধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক, কাজী আকরাম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ও অনুপম সেন উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্যাহ, ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন, পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, শাহজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান। এ ছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শেখ হেলালউদ্দিন আহমেদ ও শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সাধারণ সম্পাদক জিএম সাহাবুদ্দিন আজম ও টুঙ্গিপাড়া পৌর মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল।সূত্র:আমাদের সময়