কেমন বালিশে, কীভাবে ঘুমালে ঘাড় ব্যথা করবেনা ?
দৈনিকসিলেটডেস্ক
ঘাড়ের ব্যথার অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন- দুঃশ্চিন্তা, দুর্বলতা, খেলাধুলা থেকে আঘাত, গাড়ি বা অন্যান্য দুর্ঘটনা এবং ফাইব্রোমায়ালজিয়ার মতো দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা। তবে আরেকটি কারণ রয়েছে, যা হয়ত আপনি বিবেচনাতেই আনছেন না। সেটি হল ঘুমানোর সময় আপনার শোয়ার ধরন।
ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার কেক স্কুল অফ মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ও ঘুম বিশেষজ্ঞ রাজ দাশগুপ্ত বলেন, “ঘাড় ব্যথা নিয়ে আপনার ঘুম ভাঙলে সেটির কারণ হল, আপনার বালিশটি সঠিক নয় অথবা আপনি যে ভঙ্গিতে ঘুমান তা আপনার ঘাড়কে আরাম দেয় না। ঘাড় ব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙার কারণ এই দুইটিই হতে পারে।“
এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা এমন একটি বালিশ বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন, যা আপনার ঘাড়ের বাঁক স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে সাহায্য করে।
আমেরিকান ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র স্পাইনাল এবং থেরাপিউটিক পেইন থেরাপিস্ট কলিন লু বলেন, “ঘুমানো একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।”
“একজন শারীরিক থেরাপিস্টের সাহায্য নিলে আপনি বুঝতে পারবেন কী কারণে ঘাড় ব্যথা বেড়ে যায় এবং কোন অবস্থান বা কৌশল অনুসরণ করলে আপনার ঘুম আরও আরামের হতে পারে।“
সাধারণত, চিৎ হয়ে বা পাশ ফিরে ঘুমানো ঘাড় বা পিঠের ব্যথা প্রতিরোধের জন্য সর্বোত্তম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থায় মেরুদণ্ডের বাঁকগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে।
চিৎ হয়ে শোয়া: ঘুমানোর আদর্শ ধরন হল চিৎ হয়ে শোয়া। অর্থাৎ এমনভাবে শোয়া যাতে আপনি আপনার ঘাড় সোজা রেখে সরাসরি সিলিংয়ের দিকে তাকাতে পারবেন।
এক্ষেত্রে যদি আপনার বালিশটি খুব তুলতুলে বা খুব বড় হয়, তাহলে সমস্যা। কারণ আপনাকে এমনভাবে ঘুমাতে হবে যাতে আপনার দৃষ্টি সামনের দেওয়াল বরাবর থাকে এবং চাইলে আপনি আপনার দৃষ্টি সিলিং এবং নিচের দিকে উঠানামা করাতে পারেন। এজন্য আপনার বালিশটি আপনাকেই নিজের সুবিধামত নির্ধারণ করতে হবে।“ বলেন ঘুম বিশেষজ্ঞ রাজ দাশগুপ্ত।
যারা চিৎ হয়ে ঘুমান তাদের দুই হাত দুই পাশে সমানভাবে রাখা উচিৎ বলেও মনে করেন তিনি।
২০১৭ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা এক হাত মাথার উপরে রেখে চিৎ হয়ে ঘুমান তাদের ঘাড় ও কাঁধ ব্যথা তুলনামূলক বেশি হয়।
আপনি যদি চিৎ হয়ে ঘুমান তাহলে হাঁটুর নিচে একটি শক্ত বালিশ রাখার চেষ্টা করুন, এতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে জানান কলিন লু্।
পাশ ফিরে শোয়া: আপনার পাশ ফিরে ঘুমানো ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিক আছে যতক্ষণ আপনার মাথা ও ঘাড় আপনার শরীরের সাথে সমান্তরাল আছে। এজন্যও আপনাকে সঠিক বালিশ নির্বাচন করতে হবে।
যারা পাশ ফিরে ঘুমান তাদের উপর ২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা পালকের বালিশে ঘুমান তারা শক্ত ল্যাটেক্স বালিশে ঘুমানোদের তুলনায় অনেক বেশি বার জেগেছেন, এইভাবে তাদের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
দাশগুপ্তর পরামর্শ ঘুমের সময় ঘাড়কে স্থিতিশীল করবে এমন বালিশ বেছে নিন।
“আপনি যদি পাশ ফিরে ঘুমান তবে আপনি মনে করতে পারেন যে, একটি শক্ত বালিশ আপনার ঘাড়ে ব্যথা দিতে পারে। তবে বিষয়টি তেমন নয়।
দাশগুপ্ত বলেন, “আপনার মাথা এবং গদির মধ্যে একটি ফাঁক থাকবে, তাই আপনার বালিশটি ফিলার হিসাবে কাজ করা উচিত।
উপুর হয়ে শোয়া: উপুর হয়ে ঘুমানোকে কখনই স্বাস্থ্যসম্মত হিসাবে ধরা হয়না। কারণ এ অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ ঘাড় শরীরের সমান্তরালে থাকেনা, বাঁকা করে রাখতে হয়। যার ফলে ঘাড় এবং পিঠে ব্যথা হয় দ্রুত। যারা এভাবে ঘুমান তাদের দ্রুত অভ্যাস পরিবর্তন করা উচিৎ।
সব নিয়ম মেনে ঘুমানোর পরেও যদি আপনার ঘাড় ব্যথা হয় তাহলে আপনি ঘাড়ে গরম সেঁক দিতে পারেন। এছাড়া হালকা মালিশ করতে পারেন এবং ধীরে ধীরে ঘাড় নাড়ানোর ব্যায়াম করতে পারেন।
সূত্র: সিএনএন