লাল রঙে সেজেছে তাহিরপুরের শিমুল বাগান

শাহীন আহমদ :
বসন্তের ফাগুনের রাঙা রঙে প্রকৃতি তার মনের মাধুরী মিশিয়ে শিমুল ফুলের লাল রঙে আপন মহিমায় সেজেছে শিমুল বাগান। মাঘের শেষ দিকে ও ফাল্গুনের শুরুর দিকে ফুটতে থাকে শিমুল ফুল। প্রিয়জনকে নিয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্তের প্রথম দিন কাটাতে পারেন তাহিরপুর শিমুল বাগানে। বসন্ত আসার আগেই ফাগুনের ‘আগুন লেগেছে’ সেখানে। প্রকৃতি আর কল্পনার অপরূপ মেলবন্ধন বলা যায়।
বিশাল শিমুল বাগানের একপ্রান্তে দাঁড়ালে অন্যপ্রান্ত দেখা যায় না। বাগানের ভেতর যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শিমুল গাছের সারি। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এত বিশাল শিমুল বাগান দেশের আর কোথাও নেই। গাছের নিচে মাটিতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ফুল। গাছ থেকে ফুল মাটিতে পড়ছে, থপ করে শব্দ হচ্ছে। ধুলোমাখা মাটি যেন ফুলে ফুলে সাজানো লালগালিচা! রূপকথার কোনো রাজ্য মনে হতে পারে একঝটকায়। বসন্ত আসার আগেই অজস্র ফুটন্ত শিমুল ফুল যেন বলে দিচ্ছে, বসন্ত সন্নিকটে!
ফাগুনের রাঙা রঙে লাল হয়ে আছে বাগান।
যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই লাল শিমুল ফুল। দেশের সবচেয়ে বড় এই শিমুল বাগান ইতি মধ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশি পর্যটকদেরও নজর কেড়েছে। বিশেষ করে বাঙালি প্রবাসীরা এই শিমুল বাগানের চিত্র দেখে মুগ্ধ হয়ে দেশে আসলেই ঘুরতে যাচ্ছেন শিমুল বাগানে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মানি গাঁও এ ২০০০ সালে ১০০ বিঘা জমির মধ্যে ৩ হাজার শিমুল গাছ লাগিয়ে এ বাগানটি গড়ে তুলেন বাধাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। বর্তমানে তার ছেলে-মেয়েরা এই বাগানটির দেখাশুনা করছেন।
দেশি বিদেশি পর্যটক মিলে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার লোকের সমাগম হয় বাগানে। জন প্রতি ২০ টাকা করে টিকেট কেটে বাগানে প্রবেশ করতে হয়। দলে দলে পর্যটকরা আসছেন বসন্তের শিমুল রঙে মনকে রাঙিয়ে নিতে। কেউ আসছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেউবা আসছেন বন্ধু বান্ধব বা প্রিয় মানুষকে নিয়ে।
শিমুল বাগানে কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। ঘোড়ায় চড়ে বাগান দেখার সুযোগসহ নাগর দোলনার ব্যবস্থা আছে। প্রিয় সময়ের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ফ্রেইম বন্দি করতে শিমুল ফুল দিয়ে তৈরি লাভের (ভালবাসার প্রতীক) ভিতরে ছবি বসে প্রিয়জনকে নিয়ে ছবি তুলছেন। মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা। পাখির কলতানে যেন এক নৈসর্গিক সৌন্দর্য বিরাজ করছে শিমুল বাগানে।
বিশেষ করে ১৪ই ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস ও বসন্ত উদযাপনের জন্য দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছেন। শিমুল বাগানে এসে ভারত থেকে নেমে আসা যাদুকাটার নদীর সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পারছেন পর্যটকরা।
মৌলভীবাজার থেকে আসা এক পর্যটক বলেন, বসন্তের শুরুতে শিমুল বাগানে আসতে পেরে অনেক ভাল লাগছে। এর আগে আমি শিমুল ফুল দেখিনি। মৌলভীবাজারে দিন ধরে থাকা হলেও এ বাগানে আসা হয়নি। বাগানে আসার জন্য রাস্তায় একটু দুর্ভোগ পোহাতে হলেও শিমুল বাগানে প্রবেশের পর সেগুলো ভুলে গেছি। তাই দেশের সবচেয়ে বড় শিমুল বাগান দেখতে আসলাম। অনেক ভাল লাগছে। তবে বাগানের পর্যটকদের জন্য আরও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা দরকার।
বাগান মালিক রাখাব উদ্দিন বলেন, আমরা পর্যটকদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। খাবারের জন্য ক্যান্টিন আরও উন্নত করা হবে। এছাড়া বাগানের পাশে খুব দ্রুত উন্নত ওয়াশ রুমের ব্যবস্থাও করা হবে।
যেভাবে যাবেন শিমুল বাগান: সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে নতুন ব্রিজ হয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কারেন্টের বাজার গিয়ে তাহিরপুর উপজেলায় প্রবেশ করলে বাদাঘাট বাজার হয়েই যেতে হয় শিমুল বাগান। বাদাঘাট বাজার থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা যাদুকাটা নদীর পাড়ে অবস্থিত এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ শিমুল বাগানে গিয়ে দেখা যাবে অদ্ভুত এক দৃশ্য। এ ক্ষেত্রে বাহন হিসেবে মোটরসাইকেলই সবচেয়ে সুবিধার। কিন্তু মাইক্রোবাস নিয়ে যেতে চাইলে কারেন্টের বাজার গিয়ে ডানে প্রবেশ না করে সোজা চলে যেতে হবে তাহিরপুর উপজেলা সদরে। সেখান থেকেই ভাঙাচুরা সড়কে আসতে হবে বাদাঘাট বাজার। তবে রাত্রি যাপনে ভালো মানের কোনো আবাসিক হোটেল না থাকলেও বাদাঘাট বাজারে থাকার মত একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। আছে কোনোরকম কয়েকটি খাবার রেস্টুরেন্ট। কিন্তু পথে যেহেতু কোনো পথনির্দেশক নেই সে ক্ষেত্রে মোড়ে মোড়ে প্রবেশের আগে পথচারীদের পরামর্শ নিয়েই চলা উচিত।