জামালগঞ্জে আ’লীগ নেতার ভাগনা পরিচয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালী

মোঃ বায়েজীদ বিন ওয়াহিদ জামালগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দালালদের ইশারায়। উপজেলার ৫ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার ভরসা একমাত্র সরকারি হাসপাতালটি এখন নিজেই অসুস্থ। একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক উপজেলা আওয়ামীলীগের কথিত নেতার খুটির জোড়েই নাকি তার ভাগনা প্রকাশ্যে দিবালোকে হাসপাতালের ভেতর সেবা নিতে আসা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে করে টানাটানি। তার কথামতো পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে না আসলে চড়াও হয় রোগী ও তার স্বজনদের প্রতি।
জানাযায়, উপজেলার ৫০শয্যা বিশিষ্ট একমাত্র সরকারি হাসপাতালটিতে প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা এখন রয়েছেন চরম বিপাকে। যতই দিন যাচ্ছে ততই দালালের উৎপাত বেড়েই চলেছে। এসব দালালের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সেবা নিতে আসা হাওরাঞ্চলের সাধারণ রোগীরা।
একাধিক সূত্র ও সচেতন মহল বলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বর্তমানে রীতিমতো দালালদের দখলেই চলে গেছে। এছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু ডাক্তার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের যোগসাজশে দালালরা এত উৎপাত করার সাহস পাচ্ছে। ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কমিশনের আশায় এসব দালালদের লালন পালন করছেন জরুরী বিভাগে দায়িত্বে থাকা একশ্রেণীর কিছু ডাক্তার।
বুধবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ঘিরে মূল ফটকের পাশেই গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আর এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগীর যোগান দিতেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে বেপরোয়া ও উগ্র মেজাজের বখাটেপনা কিছু দালালের।
জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনরা যাওয়া মাত্রই এই যুবকদের তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। রোগীর স্বজনদের পেছনে ঘুরতে থাকেন তারা। অসুস্থ ব্যক্তির কী রোগ, কী করবে তা জানার পরপরই সুযোগ বুঝে স্বজনদের বাগিয়ে নিতে চেষ্টা করেন। দালালরা তাদের বলেন বাহিরে ভালো পরিক্ষা নিরিক্ষা হবে। এবং স্যার (ডাক্তার) ভালো করে দেখবেন। হাসপাতালে সরকারি ভাবে ভালো চিকিৎসা পাবেন না। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সম্প্রতি প্যাথলজিক্যাল ল্যাব সেবা চালু হওয়ার পর থেকেই চক্রটি বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে এই প্রতিবেদক গতকাল হাসপাতালে সরেজমিনে গেলে জরুরি বিভাগের ভেতরে দেখা গেছে এক যুবককে। তার উপস্থিতি সন্দেহজনক হলে নাম এবং ইমার্জেন্সি রুমে কেন আসছেন জিজ্ঞেস করলে হুমায়ুন কবির নাম পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদকের উপর চড়াও হয়ে সে বলে আমি এখানে আউটসোর্সিংয়ে কাজ করি। পরক্ষণেই বাহিরে এসে বলে আমি আওয়ামী লীগ নেতা ও মেহেরুন্নেছা ডায়াগনস্টিকের মালিক মিসবাহ উদ্দিনের ভাগিনা।
এছাড়াও গত কিছুদিন আগে এই হুমায়ুন কবির হাসপাতালের কল্লোল নামের এক স্টাফ ব্রাদারকে সে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
এদিকে গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে এরশাদ মিয়া নামের এক ব্যাক্তি গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য জরুরী বিভাগে গেলে ডাক্তারের বদলে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন রাজিব নামের এক সিনিয়র স্টাফ ব্রাদার, পাশেই বিভিন্ন কৌশলে বাহিরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবা সর্ম্পকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন দালাল হুমায়ুন কবির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা সিন্ডিকেট হুমায়ুন কবিরসহ আরো একাধিক দালালের কথা স্বীকার করেছেন। এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিরও দাবি করছেন তারা।
এদিকে আওয়ামীলীগ নেতা ও মেহেরুন্নেছা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মিছবাহ উদ্দিন জানান- হুমায়ুন আমার ভাগনা। সে হাসপাতালে আউটসোর্সসিংয়ে আছে। সে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবে আর আমার নাম ভাঙাবে এটা ঠিক না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.আব্দুল বাতেনের কাছে হুমায়ুন কবিরের ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি জানান- হুমায়ুন কবির আগে আউটসোর্সসিংয়ে ছিল, বর্তমানে প্রকল্প শেষ হওয়ায় সে সেচ্ছায় বিনা পারিশ্রমিকে হাসপাতালে কাজ করে।