মাধবপুরের সীমান্তবর্তী দশ গ্রাম,
সন্ধ্যা হলেই জমে উঠে মাদক চোরাচালান

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
হবিগঞ্জের মাধবপুরের সীমান্তবর্তী ১০টি গ্রাম এখন মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রুট।এসব গ্রাম ঘিরে গড়ে উঠেছে চোরাকারবারিদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট।সূর্য ডুবে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় গ্রামগুলোর চিত্র।মাদক চোরাকারবারি ও মাদকসেবীদের সরব উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠে সীমান্তঘেষা জনপদ।
মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা ও শাহজাহানপুর সীমান্ত এলাকা ঘুরে মাদক চোরাচালানের ভয়াবহ চিত্র লক্ষ করা গেছে।
উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে সন্ধ্যা নামতেই তৎপর হয়ে ওঠে কয়েকটি পক্ষ। সুযোগ বুঝে ‘লাইনম্যান’ মুঠোফোনে সংকেত দেন ‘লাইন ক্লিয়ার’। এরপর সীমান্তের দিকে এগোতে থাকেন ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, চৌমুহনী ইউনিয়নের রামনগর, কমলপুর, রাজনগর, বহরা ইউনিয়নের শ্রীধরপুর, কৃষ্ণপুর, শাহজাহানপুর ইউনিয়নের বনগাওঁ, জালুয়াবাদ সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীরা।
এখন মাদক ব্যবসায় লাভ বেশি হওয়ায় অন্যান্য পণ্যের আদান প্রদান কমে গেছে। বেড়েছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, মদ ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন। সেই সাথে আসছে ভারতীয় মোবাইল ফোন এবং কসমেটিক্স।
সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাদক আসায় একদিকে জেলায় বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। অন্যদিকে মাদক পাচার করতে গিয়ে সীমান্ত এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে।
হবিগঞ্জের স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারী ২০২৩ পর্যন্ত সীমান্তে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, ডিবি সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্যসহ মাদক চোরাকারবারীরা আটক হয়েছে।
মাধবপুর থানার সূত্রমতে, উপজেলায় মাদকদ্রব্য পাচারের সবচেয়ে বড় রোড মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, রামনগর, শ্রীধরপুর, জালুয়াবাদ, বনগাওঁ সীমান্ত। ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের উল্লেখিত গ্রামের-অন্তত ১০০জন ব্যক্তি মাদকসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্য চোরাচালানের কাজে যুক্ত বলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাঁদের এক-তৃতীয়াংশই ১৫-৩৫ বছর বয়সী। মহাজন রয়েছেন অর্ধশতাধিক। খুচরা বিক্রেতা হিসেবে নারী মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বাড়ছে।
মাধবপুর সীমান্তে বিজিবি ৫৫ ও ২৫ ব্যাটালিয়নের অধীনে রয়েছে ৭টি বিওপি ক্যাম্প। হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবির অধীনে রয়েছে ৪টি বিওপি (মনতলা, হরিণখোলা, রাজেন্দ্রপুর, তেলিয়াপাড়া)ও ধর্মঘর ইউনিয়নের (ধর্মঘর বিওপি, হরষপুর বিওপি, বড়জ্বালা বিওপি) অংশ ২৫ বিজিবির অধীনে পড়েছে।
সীমান্ত দিয়ে যত মাদক আসে, তার খুব কমই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, মাধবপুর সীমান্ত এলাকায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারী পর্যন্ত থানা পুলিশের অভিযানে ৪০৮জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ধর্মঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ পারুল বলেন, সন্ধ্যার আগে থেকে শুরু হয় রাত ৯টা পর্যন্ত থেকে সর্বনিম্ন এক, দেড়শ মোটরসাইকেল ধর্মঘরের ভিতর আসে। প্রতিটি মোটরসাইকেলে দুই থেকে তিনজন পর্যন্ত আসে। মাদক সেবন করে চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করে একজন মাদকসেবী জানালেন, এ ক্ষেত্রে এমন অনেকেই আছেন, নিয়মিত একজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে মাদক নেন, কিন্তু সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। মাদক সেবন শেষে নির্দিষ্ট কিছু জায়গার চায়ের দোকানে আড্ডায় বসেন মাদকসেবীরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ধর্মঘর সীমান্ত বিটে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন বলেন, সীমান্ত এলাকায় মাদক নিমুর্লে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে।
সরাইল ২৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল সৈয়দ আরমান আরিফ সীমান্ত দিয়ে মাদক আসার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে বিজিবি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল ইমদাদুল বারী খান বলেন, মাদকের সাথে আমাদের কোন আপোষ নাই। ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের সদস্যরা রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে।