সুনামগঞ্জ জেলা আ.লীগের সম্মেলন, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

শাহীন আহমদ :
দফায় দফায় তারিখ পরিবর্তনের পর অবশেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। আগামীকাল ১১ ফেব্রুয়ারি শনিবার সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জোরসে চলছে প্রস্তুতি। জেলার ১২ উপজেলা থেকে লক্ষাধিক নেতাকর্মী এসে উপস্থিত হবেন সম্মেলন মাঠে। বিশাল এই জমায়েতকে বরণ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
সাত বছর পর আগামীকাল শনিবার সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসবে, নাকি পুরোনোই নেতৃত্বে থাকবেন—এ নিয়েই নেতা–কর্মীদের আলোচনা বেশি। পাশাপাশি বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ড নিয়েও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এক পক্ষ পরিবর্তনের কথা বলছে। আরেক পক্ষ বলছে, কমিটির শীর্ষ দুই পদে পুরোনোদেরই থাকা উচিত।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের পর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর আর সম্মেলন হয়নি। দলের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জেলা কমিটির সভাপতি পদে মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পদে এনামুল কবিরের নাম ঘোষণা করেন। সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান তখন জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। এনামুল কবির ছিলেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জেলা পরিষদের প্রশাসক।
এর প্রায় দুই বছর পর ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হিসেবে রাখা হয় জেলা কমিটিতে ১৫ বছর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নূরুল হুদা ওরফে মুকুটকে। জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা এবার সভাপতি পদপ্রত্যাশী। তিনি সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের টানা দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তবে তিনি দুটি নির্বাচনেই নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করেছেন।
সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি দলকে গতিশীল করার এবং সফল হয়েছি। সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। সম্মেলন হবে। নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। তবে নেতৃত্ব কারা আসছেন, সেটা জানেন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা।’
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে সভা-সমাবেশে প্রকাশ্য কিংবা আকারে-ইঙ্গিতে একে-অপরের সমালোচনা করলেও সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতারা বেশ সহনশীল। গত সোমবার দলের বর্ধিত সভায় সমালোচনার বদলে একে-অপরের প্রশংসা করেছেন। ওই সভায় থাকা দলের এক নেতা বলেছেন, ‘বড় পদপ্রত্যাশী সবাই একধরনের টেনশনে আছেন। এবার পরিস্থিতি জটিল মনে হচ্ছে। কারও পদই নিশ্চিত নয়। এবারের সম্মেলনে চমক আছে—এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে।’
এবার সভাপতি পদে যাঁদের নাম আলোচনায় আছে, তাঁরা হলেন বর্তমান সভাপতি মতিউর রহমান, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নুরুল হুদা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার চৌধুরী।
নুরুল হুদা বলেন, এবার পরিবর্তন দরকার। তাঁরা ঢাকায় থাকেন। মাঠের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। সংকটে নেতা-কর্মীরা তাঁদের কাছে পায়। সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী এবং বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবিলা করতে সভাপতি পদে তাঁর কোনো বিকল্প নেই।
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পলিন বখত, জেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখতের নাম শোনা যাচ্ছে।
করুনা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, ‘৪৫ বছর ধরে দল করছি। তৃণমূলের কর্মীদের সঙ্গে থেকে সব সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবিচল ছিলাম। কখনো দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। আশা করি দল এবার মূল্যায়ন করবে।’
বর্তমান কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান বলেছেন, ‘আমি দীর্ঘদিন সুনামগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। আমার সময়ে দল সুসংগঠিত হয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। আমি আমার কাজে সন্তুষ্ট। আবার সভাপতি হব কি না, এই সিদ্ধান্ত দেবেন আমাদের নেত্রী। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই আমি মানি।’
সম্মেলনে অতিথি যাঁরা
শনিবার বেলা ১১টায় শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হবে। উদ্বোধন করবেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। প্রধান অতিথি থাকবেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।