সোনিয়া হত্যা: রক্তমাখা প্যান্ট সজীবের, তবুও মুখ খুলছে না

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
সিলেটি নাটকের অভিনেত্রী সোনিয়া আক্তারের লাশ উদ্ধারের দিনই বাথরুম থেকে সজীবের রক্তমাখা প্যান্ট উদ্ধার হয়। সজীব সোনিয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ খুলছে না। ৩ দিনের রিমান্ডে থাকা সজীব প্রথম দিন পুলিশি জেরার মুখে নানাভাবে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়েছে। বিভ্রান্তও করছে পুলিশকে। পুলিশ জানিয়েছে, সজীব হচ্ছে ‘হেভিচ্যুয়াল ক্রাইমার’। এর আগে সে ঢাকায় একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে। মুক্তিপণের দাবিতে শিশু অপহরণ মামলার আসামি হয়ে সে জেলও খেটেছে। আচরণগত অপরাধী হওয়ার কারণে সে সোনিয়া হত্যা মামলা থেকে নিজেকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে, তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত তদন্তে যেসব তথ্য এসেছে সবই সজীবকে ঘিরে। ঘটনার ৭ দিন আগে থেকে সজীব তার ফুফাতো বোন সোনিয়াদের বাসায় ছিল।
খুনের আগের দিন সে চাকরির সন্ধানে সোনিয়াকে নিয়ে বিয়ানীবাজারেও গিয়েছিল। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সে এসব তথ্য জানিয়েছে। পরে পুলিশের কাছেও একই কথা স্বীকার করেছে। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কাহের জানিয়েছেন, ‘৩ দিনের রিমান্ডে থাকা সজীবের কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে সেগুলো আপাতত বলছি না। তবে, ঘটনার দিন বাথরুম থেকে যে প্যান্ট উদ্ধার করা হয়েছিল সেটি সজীবেরই। এ ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘খুনের আগে সোনিয়াকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা- ‘সেটি আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। মেডিকেল রিপোর্ট সেটি বলতে পারবে। তবে- আমরা ধর্ষণের ব্যাপারেও ডাক্তারের মতামত চেয়েছি। দেখি রিপোর্ট কী আসে।’ সিলেটের খুলিয়ারা আবাসিক এলাকার বাসার শয়নকক্ষ থেকে গত রোববার সিলেটি নাটকের অভিনেত্রী ও টিকটকার সোনিয়ার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ।
ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল তার মামাতো ভাই সজীব। ঘটনার দু’দিনের মাথায় ঢাকা থেকে সজীবকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। পরে ব্রিফিংয়ে র্যাব-৯ এর সিও উইং কমান্ডার মো. মমিনুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘ঘটনার আগের দিন সোনিয়া চাকরির সন্ধানে সজীবকে নিয়ে বিয়ানীবাজার যান। ওইদিন বিয়ানীবাজার থেকে ফেরার পথে সিলেট শহরের শেখঘাটে সোনিয়ার অসুস্থ খালাকে দেখে তারা রাত ১২টার দিকে বাসায় ফেরেন।’ তিনি জানান, ‘ঘটনার ৭ দিন আগে থেকেই সোনিয়াদের বাসায় অবস্থান করছিল সজীব। এ সময় সজীব সোনিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায়ও যায়।’ র্যাব আরও জানায়, সজীবের নামে ঢাকার ভাষানটেক থানায় মামলা রয়েছে। মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে নেশাজাতীয় দ্রব্য দিয়ে শিশু অপহরণ ও সহায়তার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এ মামলায় কারাভোগ করেছে সে। গত বুধবার সজীবকে সিলেটের কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে র্যাব। পুলিশ সজীবকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মঙ্গলবার নিহত সোনিয়ার ভাই পারভেজ আহমদ তারই মামাতো ভাই সজীবকে প্রধান আসামি করে সিলেটের কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। নিহত সোনিয়া সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কলাছড়া গ্রামের বিল্লাল আহমদের মেয়ে ও দক্ষিণ সুরমার একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। নিহত সোনিয়ার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সজীব ঢাকায় থাকতো। প্রায় সময় তাদের বাসায় আসতো। পরিবারের সদস্য হিসেবে তাকে কেউ কখনো সন্দেহ করেনি। তবে- ঢাকায় তার অপরাধের কথা জানতেন সবাই। তারা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সজীব, সোনিয়া ও তাদের ভাবীকে বাসায় রেখে পরিবারের অন্য সদস্যরা বাইরে চলে গিয়েছিলেন। এরপর ওইদিন দুপুরে শয়নকক্ষে সোনিয়ার গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়। কিন্তু সজীব ছিল না। অন্যদিকে- বাথরুমে তার ব্যবহৃত রক্তমাখা প্যান্টও পাওয়া যায়।
সুত্র: মানবজমিন