ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নেই: তৃণমূল বিএনপির ভবিষ্যৎ কী

দৈনিকসিলেটডেস্ক
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ‘বহিষ্কৃত, ক্ষুব্ধ ও দলছুট’ নেতাদের নিয়ে পথ চলতে চেয়েছিল তৃণমূল বিএনপি- এমন খবর আগে থেকেই বিএনপির নেতাদের কাছেও ছিল। এই অবস্থায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তৃণমূল বিএনপি ইসির নিবন্ধন পেলে নানা আলোচনা তৈরি হয়। সেই আলোচনার ডাল-পালার বিস্তার ঘটতে থাকে। বিএনপিতেও এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা মারা গেলে এ অস্বস্তি কেটে যায়। উল্টো তৃণমূল বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় দলটির হাল কে ধরবে, ঘুরেফিরে বারবার এই প্রশ্ন সামনে আসছে।
জানা গেছে, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী আইনজীবী সিগমা হুদা এবং দুই কন্যা অন্তরা সামিলা ও শ্রাবন্তী আমিনা। এর মধ্যে মেয়ে ব্যারিস্টার অন্তরা তৃণমূল বিএনপি নিয়ে আগ্রহী নন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। দোহার-নবাবগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীরাও একই তথ্য জানান। তারা বলেন, নাজমুল হুদা ভিন্ন দল করলেও অন্তরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা করেছেন। ঢাকা জেলা বিএনপির কাউন্সিলের আগেও তাকে নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়নও চেয়েছিলেন। বাবার গড়া দলের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার স্ত্রী সিগমা হুদাও ‘তৃণমূল বিএনপি’র কোনো পদে নেই। স্বামীর অবর্তমানে তিনি এই দলের হাল ধরবেন- এমন কোনো আলোচনা নেই। তিনিও বেশ অসুস্থ। অন্তরা সামিলার সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এক ঘণ্টা পর ফোন দিতে বলেন। এক ঘণ্টা পরে কয়েক দফা ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
advertisement 4
প্রয়াত নাজমুল হুদার ঘনিষ্ঠজনরা বলেন, তৃণমূল বিএনপি নিয়ে রাজনীতিতে নানা আলোচনা আছে। আদালতের নির্দেশে ইসির নিবন্ধন পেলেও সবার ধারণা এখানে সরকারের ‘আশীর্বাদ’ আছে। নাজমুল হুদার পরিবারের কোনো সদস্য অথবা নাজমুল হুদার মতো বড় কোনো রাজনীতিবিদ যদি দলটির হাল ধরেন এবং সরকারের আশীর্বাদ পায়, তাহলেই তৃণমূল বিএনপি দল হিসেবে রাজনীতিতে আলোচনায় থাকবে।
তৃণমূল বিএনপি প্রতিষ্ঠাকালে মহাসচিব ছিলেন ডা. সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি চলে যাওয়ার পর চলচ্চিত্র অভিনেতা আহমেদ শরীফ মহাসচিব হন। এরপর দায়িত্ব নেন ব্যারিস্টার আকবর আমিন বাবুল। তিনিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দল ত্যাগ করেন। সেখানে মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমানকে মহাসচিব করা হয়। কিন্তু নিবন্ধনের আগে তিনিও চলে যান।
জানা গেছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দেওয়ার সময় ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি জমা দেয়া হয়েছিল। ওই কমিটির অনেকেই এখন নেই। দলের কেন্দ্রীয় কোনো কার্যালয় নেই। পল্টনে মেহেরবা প্লাজায় নাজমুল হুদার চেম্বারের একটি রুমে দলীয় কাজ পরিচালনা করা হতো। এখন নতুন কার্যালয়ের সন্ধানে নামবেন নেতারা। নেতারা জানান, নাজমুল হুদার অকাল প্রয়াণে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি সার্বিক পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ইসি নিবন্ধন পায় তৃণমূল বিএনপি। কিন্তু নাজমুল হুদা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি পরের দিন। ফলে আর দলীয় ফোরামের বৈঠক করতে পারেননি তিনি। কোনো নির্দেশনাও দিয়ে যেতে পারেননি। ১৯ ফেব্রুয়ারি নাজমুল হুদা মারা গেলেও এখন পর্যন্ত দলের কোনো চেয়ারম্যান ঠিক করতে পারেনি দলটি।
দলটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন জাহাঙ্গীর। তিনিও সক্রিয় নন। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আক্কাস আলী খানই যা করার করছেন। এক সময় দোহারে ছাত্রদল, যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। নাজমুল হুদা বিএনপি থেকে ছিটকে পড়ার পর তিনিও তার সঙ্গে চলে আসেন। ছিলেন তার রাজনৈতিক সচিব। একের পর এক রাজনৈতিক দল ও জোট গঠনের সময়েও তিনি ছিলেন নাজমুল হুদার সহচর। এখনো নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স জোটের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্প্রতি আক্কাস আলী খান জানান, নাজমুল হুদা অপ্রত্যাশিতভাবে চলে গেছেন। তার অবর্তমানে দলের হাল ধরার বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি, সিদ্ধান্ত হয়নি। নাজমুল হুদার পরিবার থেকে কেউ হাল ধরলে দল পরিচালনায় সহজ হবে। দলটিকে একটি ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো সহজ হবে। এ ছাড়া বৈঠকে আরও অন্যান্য বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর মধ্যে আগামী নির্বাচন, জোট গঠনের বিষয়গুলোও থাকবে।
বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামের একটি দল গঠন করেন নাজমুল হুদা। কিন্তু অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ২০১৩ সালে সেই দল বিলুপ্ত করে কয়েক মাসের মাথায় বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে আরেকটি দল গঠন করেন তিনি। তাতেও তিনি সফল হননি। পরে সাবেক দল বিএনপির নামের সঙ্গে মিল রেখে গঠন করেন ‘তৃণমূল বিএনপি’। ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নামসর্বস্ব বেশ কয়েকটি দল নিয়ে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্স’ নামের জোট গঠন করেন তিনি।-সৌজন্যে: দৈনিকআমাদেরসময়