নিজস্ব ঠিকানায় ফিরছে সুনামগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
নিজস্ব ঠিকানায় ফিরছে সুনামগঞ্জের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। পুরো প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ১০৭ কোটি ৮৮ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা। প্রকল্পের কাজ আগামী বছর শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ মেডিকেলের দাপ্তরিক কার্যক্রম বর্তমানে শান্তিগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে চলছে।
গণপূর্ত বিভাগ সুনামগঞ্জ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুমিনুল হক বলেন, এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৪২ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ৫শ’ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে । বর্তমানে ভবনটির ফিনিশিং কাজ চলছে। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতেও এই প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে বলে জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. শামসুদ্দিন আহমদ প্রকল্পের ফিজিক্যালি ৪৫ ভাগ কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। একটি ভবনের কাজ শেষ হয়েছে। আরও অনেক ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। দিনরাত বিরামহীন কাজ চলছে।
তিনি জানান, আগামী জুন মাসে এখানে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার জন্যে আমরা চেষ্টা করছি। পুরো কাজ সম্পন্নের পরই হাসপাতালের কার্যক্রম চালু করা হবে।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মনোজিত মজুমদার সিলেটের ডাককে বলেন, কলেজের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে প্রথম ব্যাচের পরীক্ষা চলছে। দ্বিতীয় ব্যাচের চলছে ক্লাস। শান্তিগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে বর্তমানে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম চলছে।
তিনি জানিয়েছেন, কবে নাগাদ নিজস্ব ক্যাম্পাসে ফেরা সম্ভব হবে এ বিষয়ে তার কাছে কোনো ধারণা নেই।
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মদনপুর এলাকায় হাওরাঞ্চলবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩৫ একর বা ৩ হাজার ৫০০ শতক জমি। এতে মোট ২৯টি আধুনিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ভেতরে থাকবে খেলার মাঠ ও পুকুর।
নির্মাণ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেইজমেন্টসহ ৮তলা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। হাসপাতালে উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে থাকবে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ সব ধরনের সুবিধা। নির্মাণ করা হচ্ছে ৯ তলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন। এই ভবনেই কলেজের একাডেমিক সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। নির্মাণ করা হচ্ছে একটি ৮ তলা হোস্টেল ভবন। ৬ তলা ভিতের ওপরে ৬ তলা বিশিষ্ট একটি ইন্টার্ন ডক্টরস ভবন, ১০ তলা ভিত বিশিষ্ট একটি ১০ তলা সিঙ্গেল ডক্টরস একোমোডেশন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়াও ৬তলা ভিত বিশিষ্ট ৬তলা স্টাফ নার্স ডরমিটরি ভবন, ৬তলা ভিতের ৬ তলা স্টাফ ডরমিটরি ভবন নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।
৬ তলা ভিত বিশিষ্ট ৬ তলা নার্সিং কলেজের একাডেমিক ভবনও নির্মিত হচ্ছে। ৮ তলা ভিত বিশিষ্ট একটি ৮ তলা স্টুডেন্ট নার্স হোস্টেল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২ তলা ভিত বিশিষ্ট একটি ২ তলা টিচিং মর্গ অ্যান্ড মরচুয়ারি ভবন নির্মিত হচ্ছে। ৪ তলা ভিতের ওপর একটি ৪ তলা অডিটোরিয়াম ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ৩ তলা ভিত বিশিষ্ট একটি ৩ তলা লন্ড্রি ভবন, ৪ তলা ভিত বিশিষ্ট একটি ৪ তলা মসজিদ ভবন নির্মাণের কাজও চলছে। ৫ তলা ভিত বিশিষ্ট চারটি ৫ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ সাব স্টেশন, অধ্যক্ষ ও পরিচালকের বাসভবনসহ বিভিন্ন আয়তনের ৬টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। থাকবে পাবলিক টয়লেট, মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন, স্যুয়ারেজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন। হাসপাতাল ভবনও একাডেমিক ভবনের মধ্যে একটি লিংক করিডোর স্থাপন করা হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট পরিকল্পনামন্ত্রী (তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী) এম এ মান্নান এমপি হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুরোধ জানান। একনেক সভায় এম এ মান্নানের অনুরোধের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নীতিগতভাবে এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেক চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল- সুনামগঞ্জ নামে ১ হাজার ১০৭ কোটি ৮৮ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। এক পর্যায়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের পাঠদান কার্যক্রমও শুরু হয়। পরের শিক্ষা বছর আরেকটি ব্যাচ ভর্তি হয়। বর্তমানে এই দুই ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম শান্তিগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালেই চলছে।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সুনামগঞ্জ হচ্ছে-বাংলাদেশের ৪৭তম সরকারি মেডিকেল কলেজ। মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটির কার্যক্রম চালু হলে সুনামগঞ্জ তথা হাওরাঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।