শিশুর মৃগীরোগ: লক্ষণ ও করণীয়
দৈনিকসিলেটডেস্ক
মৃগীরোগ স্নায়ুতন্ত্রের একটি দীর্ঘস্থায়ী জটিল রোগ। যেকোনো বয়সের পুরুষ-নারী এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
তবে বাচ্চাদের এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
এ রোগ সম্পর্কে জানাচ্ছেন — প্রফেসর ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।
গ্যান্ড মোল এপিলেপসি
সংখ্যানুপাতে এই ধরনের মৃগী রোগীর সর্বাপেক্ষা বেশি। খিঁচুনি হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে শিশুর আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। এরপর হঠাৎ করে খিঁচুনি শুরু হয়। খিঁচুনি হাত-পা ও সারা শরীরে হয়ে থাকে। চোখের মণি স্থির হয়ে থাকে, মুখ দিয়ে ফেনা ওঠে এবং গোঁ গোঁ আওয়াজ করতে থাকে। অনেক সময় দাঁতে দাঁত লেগে যায়। দাঁতে জিভ কেটে যাওয়া বা প্রস্রাব-পায়খানা করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। কিছুক্ষণ খিঁচুনির পর শিশু অনেকক্ষণ নিস্তেজ থাকে। পরে গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে। ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে গেলে প্রায় রোগীই সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়।
পেটিট মোল এপিলেপসি
এ ধরনের মৃগীরোগ সাধারণত শিশুর পাঁচ বছর বয়সের পর হয়ে থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়ে শিশুদের বেশি হয়। গ্র্যান্ড মোলের মতো এই খিঁচুনিতে শিশু মাটিতে পড়ে যায় না। খিঁচুনির স্থায়িত্বকাল মাত্র ১৫-৩০ সেকেন্ড। তবে মিনিটে অনেকবার হতে পারে। লিখতে লিখতে হঠাৎ হাত থেমে যাওয়া, টিভি দেখতে দেখতে হঠাৎ আনমনা হয়ে একদৃষ্টিতে একদিকে চেয়ে থাকা—এ ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। সঠিক চিকিৎসার সাহায্যে প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী ভালো হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে কিছু গ্র্যান্ডমোল এপিলেপসিতে পরিণত হতে পারে।
চিকিৎসা
এখন মৃগীরোগের অত্যন্ত কার্যকর অনেক ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়। মৃগীরোগীর ফিটের লক্ষণাদি শুনে, দেখে, তা কোন প্রকারের এপিলেপসি নির্দিষ্ট করে নেওয়া হয়। চিকিৎসা বিষয়ে মা-বাবা ও অভিভাবকদের যে কথাগুলো অবশ্যই মনে রাখতে হবে:
* খিঁচুনি এমন একটি লক্ষণ, যা দেখা গেলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞকে দেখানো উচিত এবং মৃগীরোগীর শিশুকে শিশু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে রেখে পরামর্শ মেনে চিকিৎসা চালানো জরুরি।
* ওষুধের কোনো ডোজ বাদ দেওয়া যাবে না
* চিকিৎসকের পরামর্শ মতো শেষ ফিট দেখা দেওয়ার কমপক্ষে দুই-তিন বছর যাবৎ ওষুধ একটানা চালিয়ে যেতে হবে
* চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে শিশুর ওজন বাড়া অনুপাতে ওষুধের ডোজ ঠিক করে নিতে হয়
* সম্পূর্ণ আরোগ্য না হওয়া পর্যন্ত এসব শিশুকে কখনোই একা একা নদী-পুকুর-জলাশয়, আগুনের কাছে যাওয়া বা গাছে ওঠা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি থেকে বিরত রাখা।