‘বনবিবি’ গানের বাদ্যযন্ত্রে বিলুপ্তপ্রায় গাইল-ছেহাইট ও কুলা

দৈনিকসিলেটডেস্ক
ধান ভানা বা শস্য কোটার জন্য সারা দেশের মানুষের কাছে ঢেঁকি পরিচিত। তবে অনেক এলাকায় এক সময় ব্যবহৃত হয়েছে গাইল-ছেহাইট।
যা বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত।
মূলত গাছের গুঁড়ির মধ্যে গর্ত করে তৈরি হয় গাইল। আরেকটি কাঠের দণ্ড হচ্ছে ছেহাইট। ঢেঁকিতে যেখানে পায়ের মাধ্যমে শস্য কোটা হয়, সেখানে গাইল-ছেহাইটে শস্য কোটা হয় হাত দিয়ে।
এবার সেই বিলুপ্ত প্রায় গাইল-ছেহাইট ব্যবহার করা হয়েছে গানের মিউজিক নির্মাণে। শুধু তাই নয় পাশাপাশি ব্যবহার করা হয়েছে বহুল প্রচলিত গৃহস্থালী বস্তু কুলা।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশ হয়েছে কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয় সিজনের নতুন গান। গানটির শিরোনাম ‘বনবিবি’। ফোক ফিউশন ঘরনার এই গানে অংশ নিয়েছে বিখ্যাত ব্যান্ড ‘মেঘদল’ এবং জোহরা বাউল। গানটির সুর ও প্রযোজনা করেছে ‘মেঘদল’। এই গানের গাইল-ছেহাইট ও কুলার ব্যবহার দেখা গেছে। মূলত গানটির সুরে ভিন্নতা আনার জন্যই এর ব্যবহার করা হয়েছে।
‘বনবিবি’র দৃশ্যকল্প দর্শকদের নিয়ে যায় প্রকৃতির গভীরে। ‘বনবিবি’ একটি পৌরাণিক চরিত্র। লৌকিক বিশ্বাস অনুসারে সকল অশুভের হাত থেকে তিনি বনকে রক্ষা করেন। এই চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই গানটি তৈরি করা হয়েছে।
পুরো গানটিতে একটি রহস্যময় ও আধ্যাত্মিক বিষয় রয়েছে, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হলেই যা অনুভব করা যায়। গানটির মূল গায়ক ‘মেঘদল’। বাংলাদেশি রক ব্যান্ডের সম্বৃদ্ধ ধারার সঙ্গে এখানে খুব সুন্দরভাবে মেশানো হয়েছে খনার বচনের গভীরতা। শত শত বছর ধরে খনার বচন বাঙালিদের প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে শিখিয়েছে। সেই সঙ্গে জোহরা বাউলের পরিবেশনা গানে যুক্ত করেছে লোকসঙ্গীতের স্বাদ। এর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে চমৎকার একটি ফোক ফিউশন।
গাইল-ছেহাইট ও কুলার মতোই বনবিবির সেটের সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহৃত হয়েছে এস এম সুলতানের শিল্পকর্ম। বরেণ্য এই শিল্পীর কাজে প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারটি সবসময়ই গুরুত্ব পেয়েছে। সেই বিষয়টি আরো একবার সবার সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে গানটিতে।
বনবিবি সম্পর্কে ব্যান্ড মেঘদলের ভাষ্য, এটি এমন একটি গান, যা দর্শক-শ্রোতাদের এই পৃথিবীর যতো কোলাহল ও জটিলতা ভুলিয়ে দেয়। আমরা আশা করছি, এই গান শোনার পর সবাই নিজেদের প্রকৃতির আরো কাছে অনুভব করবেন। কোক স্টুডিও বাংলার প্রতিভাবান শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করাও একটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল।
দর্শক-শ্রোতাদের গানের পরিপূর্ণ স্বাদ দেওয়ার জন্য গানটি রাত ১টায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই সময়টি বেছে নেওয়ার বিশেষ কারণ হচ্ছে, এই সময়ে বনের পরিবেশ থাকে শান্ত। তাছাড়া এই গভীর রাতে দর্শক-শ্রোতারাও তাদের দৈনন্দিন জীবনের কোলাহলমুক্ত পরিবেশে থেকে গানটি উপভোগ করতে পারবেন।
কোক স্টুডিও বাংলার সঙ্গীত প্রযোজক শায়ান চৌধুরী অর্ণব বলেন, বনবিবি গানটা প্রকৃতির বন্দনা করে। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার বিষয়টি এখানে গুরুত্ব পেয়েছে। আমাদের লোকসঙ্গীত ও নিজেদের শহুরে ইন্ডি সুরের মধ্যে চমৎকার একটা ফিউশন তৈরি করেছে মেঘদল। এই গানে তারা খনার বচন ও বনবিবি’র কিংবদন্তীর মতো বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে প্রকৃতিতে শুনতে পাওয়া নানা সুরের মিশ্রণ ঘটিয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গাইল-ছেহাইট ও কুলার শব্দ। গ্রামীণ বাংলার চিত্রের এখানে খুব সুন্দরভাবে উঠে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, এই গান আমাদের নিয়ে যায় দূরের কোনো বনে, যেখানে আমরা নিজেদের প্রকৃতির কাছাকাছি অনুভব করতে পারি। দর্শক-শ্রোতাদের আমরা একটি ম্যাজিক্যাল অভিজ্ঞতা উপহার দিতে চেয়েছি। মেঘদলের সঙ্গে কাজ করা আমরা দারুণ উপভোগ করেছি।
কোক স্টুডিও বাংলার অফিশিয়াল ইউটিউব ও স্পটিফাই চ্যানেলে এখন বনবিবি উপভোগ করা যাচ্ছে।