চুনারুঘাটের বিভিন্ন চাবাগানে মাতোয়ারা ফাগুয়া উৎসবে

নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ :
বসন্তে নতুন হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। এরই মধ্যে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে ফাগুয়া উৎসব। লাল, কালো, নীল রঙের ছড়াছড়িতে শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী নারী-পুরুষ এখন মাতোয়ারা ফাগুয়া উৎসবে। গত তিন দিনব্যাপী শুরু হয়েছে এ উৎসব। ফাগুয়া চা-শ্রমিকদের এক অন্যতম উৎসব। হোলি নামেও এটি পরিচিত। এ উৎসব উপলক্ষে চা-বাগানগুলোতে শুরু হয়েছে লাঠি নাচ। উৎসবকে কেন্দ্র করে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসেন মেয়েরা। প্রতিটি চা-বাগানে তরুণ-তরুণীরা রঙের সাজে সেজে নাচের দল নিয়ে বের হন। মাদলের তালের সঙ্গে পাহাড়ি গানের সুর সৃষ্টি করে এক অন্য রকম আবহ, মাধুর্য। বাগান কর্তৃপক্ষ ফাগুয়া উপলক্ষে চা-শ্রমিকদের ছুটি ও উৎসব ভাতা দিয়ে থাকে। এ বছর ফাগুয়া উপলক্ষে দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে বাগান কর্তৃপক্ষ। চা- শ্রমিক মহা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি কাঞ্চনপাত্র বলেন, বছরে বেশ কটি উৎসবের মধ্যে এই উৎসবটি চা জনগোষ্ঠীর অন্যতম বড় উৎসব। এটা দোল উৎসব নামে সমধিক পরিচিত হলেও চা জনগোষ্ঠী ফাগুয়া উৎসব বলে থাকে। ফাগুয়া উৎসবের উৎপত্তি ভারতে। এটিকে সাধারণত হোলি খেলা উৎসব বলে। চা বাগানে এ উৎসব যে দিন শুরু হয় সেই দিন থেকে আরও ১৫ দিন পর্যন্ত তার রেশ থাকে। সরেজমিন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, নানান রঙের পসরা বসেছে বাগানের বস্তিতে। সকল চা শ্রমিকদের বাড়ির আঙিনা সাজানো হয়েছে নতুন রঙে। অনেকেই আঙিনা ও ঘরের দেয়ালে একেছেন আল্পনা। সবস্থানে রঙ মেখে একাকার। বেগুনি, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা লাল। যে দিকে তাকানো যায় সেদিকেই রঙের ছড়াছড়ি। নারী-পুরুষ, আবাল-বৃদ্ধ সব বয়সীরা মেতে ওঠেছে ফাগুয়া উৎসবে। শত দু:খকষ্ট, শত অভাব অনটনের মধ্যেও উৎসবের তিনটি দিন তারা পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করে থাকে। চা বাগানের বাজারগুলোতে দোকানিরা মিঠাই-মন্ডা সাজিয়ে বসেছে। উৎসবের কটা দিন ভালোই বিকিকিনি চলে। সারা দিনে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর চা-শ্রমিকেরা যে পারিশ্রমিক পায় তা দিয়ে পরিবারের সবার মুখে দুমুঠো ভাত কিংবা দুটো রুটি দুবেলা তুলে দেওয়াই যেখানে কষ্টকর, সেখানেও এই দুঃসহ সীমাবদ্ধ জীবনের আঙিনায় আনন্দের ছোঁয়া লাগে। রংধনু সাত রং উঁকি দেয় বছরের এই কয়েকটা দিনে। একে অপরের দিকে রং ছুড়ে মারছে, গান গাইছে, নাচছে। প্রাণের উচ্ছ্বলতায় বয়সের ভেদাভেদ ভুলে গেছে সবাই। একে অপরকে আবীর দিয়ে রাঙিয়ে দেয়ার পাশাপাশি চা বাগান এলাকায় কেউ এলে তাকে আনন্দ সহকারে রাঙিয়ে দেয়া হচ্ছিল। চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর, চন্ডিছড়া, নালুয়া, আমু, লস্করপুর, চাকলাপুঞ্জি, রেমা, পারকুল, শ্রীবাড়ি, দেউন্দিসহ বিভিন্ন চা বাগানে চলছে এ উৎসব ।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নিপের পাল জানান, আগের চেয়ে সব বাগানেরই এ উৎসব আয়োজন করা হয়েছে স্থানীয়ভাবে। এ উসবের মূল উদ্দেশ্য হল স্রষ্টা যেন প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দেন নানান রঙে। কারণ প্রকৃতি বিবর্ণ হলে শুধু চা শ্রমিকরাই নয়, সকল মানুষের জীবনে নেমে আসে কষ্ঠ।