টাঙ্গুয়ার হাওরে হিজলবাগ কেটে রাস্তা তৈরীর অভিযোগ!

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রসিদ্ধ একটি হিজলবাগের গাছ ও কান্দা কেটে স্থানীয় কিছু লোক রাস্তা তৈরি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মেঘালয় সীমান্তসংলগ্ন বিনোদপুর ও মন্দিয়াতা গ্রামের নিকটবর্তী এই হিজলবাগটি ফইল্লার বিলের হিজলবাগ নামে পরিচিত।
জানা গেছে, গত সোমবার (৬ মার্চ) ও পরদিন মঙ্গলবার এক্সেভেটর দিয়ে রাস্তার জন্য কান্দার মাটি কাটতে গিয়ে পঞ্চাশটি হিজলবাগের গাছ কাটা পড়েছে এবং আরো পঞ্চাশটি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের সংরক্ষিত এই হিজলবাগটি ক্ষতিগ্রস্ত করে রাস্তা নির্মাণ করায় স্থানীয় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
এ ঘটনার জন্য দায়ী করা হচ্ছে হিজলবাগ সংলগ্ন উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের তেরঘর গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ মিয়া (৬২) ও গোলাপ নূরকে (৬০)। এ বিষয়ে ইউসুফ মিয়া বলেন, রতনপুর, মন্দিয়াতা, তেরঘর, কামনাপাড়া, কান্দাপাড়া ও বিনোদপুর গ্রামের কৃষকরা ‘এরাইল্যাকোনা’ হাওরে ধান রোপন করেছেন। হাওরের ফসল রক্ষায় হিজলবাগের ভেতর দিয়ে রাস্তা করা হয়েছে।
মন্দিয়াতা গ্রামের বাসিন্দা ও মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানজু মিয়া বলেন, এখানে ফসলরক্ষা বাঁধ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই কখনোই এ স্থানে ফসলরক্ষা বাঁধ দেওয়া হয় না। টাঙ্গুয়ার হাওরের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হিজলবাগ এটি। মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম এ বাগানের অর্ধশতাধিক হিজলগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আরো শতাধিক গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফসল রক্ষার বিষয়টি অজুহাতমাত্র। আসলে এদের অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে।
জানা যায়, হিজলগাছ বর্ষায় মাছ ও পাখির আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করে। মাছের প্রজনন ও খাদ্য জোগানেও হিজলগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই হিজলবাগটি টাঙ্গুয়ার হাওরের মাছের একটি নিরাপদ আবাসস্থল। হিজলগাছের পাতাতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক জন্মায় যা মাছের খাদ্য হিসাবে কাজে লাগে।
টাঙ্গুয়ার হাওরপারের বাসিন্দা ও হাওরটির সাথে জড়িত লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাওরটিকে নিয়ে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ হলো- ‘নয়কুড়ি কান্দা ও ছয়কুড়ি বিল’ নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর গঠিত। এক সময় এ সকল কান্দা ভরে ছিল হিজল-করচ, নলখাগড়া, গুইজ্জাকাটা, বনতুলসী, চাইল্যা, বউল্যা ও উকল বনে। ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে ইজারাপ্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবং ২০০৩ সালের নভেম্বর মাস থেকে হাওরটি রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্ব পায় জেলা প্রশাসন।
টাঙ্গুয়ার হাওরপারের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা ও হাওরপারের ৪০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবির জানান, ২০০৩ সালের পর হাওরটির পঞ্চাশ ভাগ করচগাছ, দশভাগ হিজলগাছ আর সত্তর ভাগ নলখাগড়া, গুইজ্জাকাটা, বনতুলসী, চাইল্যা, বউল্যা ও উকল উজাড় হয়ে গেছে। জ্বালানীর জন্য হিজল স্থানীয়দের পছন্দ নয়, তাই এখনো অধিকাংশ হিজলগাছ এখনো টিকে আছে। তবে কান্দা আর গাছ কেটে এ রাস্তা নির্মাণ যদি না ঠেকানো যায়, তবে হিজলবাগও উজাড় হবে।
প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওর গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের আধার। হিজলগাছ, কান্দা কাটা পড়লে মাছ ও প্রাণীর খাদ্য, আবাসস্থল নষ্ট হবে। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে হাওরের বাস্তু সংস্থানে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা বলেন, খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।