নারী নির্যাতন মামলায় বরখাস্তকৃত ইন্সপেক্টর মানিকুলের গ্রেফতারি পরোয়ানা

দৈনিক সিলেট ডট কম
পাশবিক নির্যাতন ও ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় বরখাস্তকৃত ইন্সপেক্টর মানিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। (৯ মার্চ) বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাদি পক্ষের আইনজীবী সিলেট বারের এপিপি প্রবাল চৌধুরী পূজন। এর আগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী অভিযোগ আমলে নিয়ে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন । ভিকটিমের তথ্যমতে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাশবিক নির্যাতন ও ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি এবং ক্রমাগত নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করে মামলা দায়ের করেন সিলেটের এক প্রবাসী ভিকটিম। নারী ও শিশু ট্রাইবুন্যালের বিচারক সিনিয়র জেলা জজ মোঃ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর আদালতে মামলাটি আমলে নিয়ে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপজেলা আনাসর ভিডিপিকে দায়িত্ব দেন। আনসার ভিডিপির তদন্তকারী কর্মকর্তা মানিকুলের মাধ্যমে সংঘটিত অপকর্ম, তথ্য-উপাত্ত, প্রদত্ত এভিডেন্স এবং সাক্ষীদের যথাযথ স্বাক্ষ্য গ্রহণসহ গোপনে এবং প্রকাশ্যে অনুসন্ধান সম্পন্ন করে বিজ্ঞ আদালত বরাবর ইতিমধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
মামলার এজাহার ও ভিকটিম সুত্রে জানা গেছে নিজেকে মেধাবী হিসেবে জাহির করার জন্য অরিজিনাল শিক্ষাগতো যোগ্যতা গোপন করে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট জাল করে অনার্স, মাস্টারস ও এম.বি এর ভূঁয়া শিক্ষা সনদ প্রদান করে। কিছুদিন পর ভিকটিম ও তার পরিবার জানতে পারেন যে, মানিকুল বিবাহিত এবং তার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে।
সহজাত প্রবৃত্তির ধারাবাহিকতায় বিয়ের কিছুদিন পর মানিকুল ইসলাম বাদিনীর নিকট ৫০ লাখ টাকা যৌতুক হিসাবে দাবী করলে বাদিনী মান সম্মান ও চাঁপের মুখে বিভিন্ন সময়ে তাকে বিশ লাখ টাকা প্রদান করেন। এর পরেও বাদিনী মানিকুলের দ্বারা প্রতারণা, জালিয়াতি, শারীরিক নির্যাতন, হত্যা চেষ্টাসহ বিভিন্ন পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন।
গত ২০১৭ সালের ১৮ জুন বাদিনী প্রবাস থেকে বাংলাদেশে আসলে মামলার বিবাদী মোঃ মানিকুল ইসলাম মানিক তাদেরকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদেরকে নিয়ে একটি কালো রঙ্গের গাড়িতে করে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে বিবাদী মোঃ মানিকুল ইসলাম মানিক বাদিনীর নিকট পুনরায় ৫০ লাখ টাকা দাবী করেন। ভিকটিম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গাড়ির ভিতরে মারধর শুরু করেন।তখন ভিকটিম গাড়ির ভিতর চিৎকার করিলে তাদের পাশ দিয়ে যাওয়া অপর একটি গাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানাধীন ঢাকা-সিলেট মহা সড়কের আউশকান্দি হিরাগঞ্জ বাজার এলাকায় মানিকুল ইসলামকে আটক করেন। ওই সময় মোঃ মানিকুল ইসলাম মানিক বাদীর কাছে থাকা তার পাসপোর্ট, ডেবিট কার্ড, নগদ ডলার ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনার পরে ভিকটিম হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দায়ের করলে মানিকুল ইসলাম ভিকটিমকে মামলা দায়ের করা থেকে বিরত রাখার জন্য কৌশলে ভিকটিমের পরিবারে এসে সংঘটিত অপকর্মের স্বীকারোক্তি দিয়ে ক্ষমা চেয়ে লিখিত অঙ্গিকারনামা দেন এবং ভবিষ্যতে এমন আর করবেন না বলে পারিবারিকভাবে ঘটনাটি মিমাংসা করেন।
পরে ভিকটিম তার পরিবারের পরামর্শে পুনরায় প্রবাসে চলে যান। এর পর ভিকটিম বাংলাদেশে ফেরত আসলে মানিকুল ইসলাম ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন। এসব নির্যাতনের শিকার হয়ে বাদিনী গত ২০২১ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন ও একই বছর গত ১ মার্চ পুলিশ প্রধান বরাবর আইজিপি কমপ্লেইন মনিটরিং সেলে এবং ২৭মে ২০২১ইং তারিখে টোন্স অব এভিডেন্স সহ অভিযোগ দায়ের করেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর অভিযোগ দায়ের করেন। ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টারস থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্তকালে অভিযুক্ত মানিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিস্তর সত্যতা পেয়ে ২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারী করে বিভাগীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্য, নৈতিক স্খলন, অদক্ষতা, অসদাচরনের দায়ে পুলিশ বিভাগ থেকে পুলিশ প্রধান কর্তৃক সাময়িক বরখাস্ত হন ।