হত্যা, ডাকাতি ও ছিনতাই
বিবিয়ানা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকায় একের পর এক ঘটনা

নূরুজ্জামান ফারুকী নবীগঞ্জ প্রতিনিধি
নবীগঞ্জ উপজেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকা “ক্রাইম জোন” হিসেবে পরিণত হয়েছে। গত ৫ বছরে একই কায়দায় হত্যার উদ্দেশ্যে ৪ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে করা হয়েছে ক্ষতবিক্ষত। এদের মধ্যে জায়েদ মিয়া নামে এক পান বিক্রেতা নিহত হন। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন অপর ৩ জন। এদিকে ওই এলাকায় মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় যুবকরাও। বিবিয়ানা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকায় সন্ধ্যার পর অবৈধ কার্যকলাপ রোধে কমিউনিটি পুলিশ টহল জোরদার, সিসি ক্যামেরা, স্ট্রিট লাইট স্থাপনের দাবীর ছিল এলাকাবাসীর। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরাধ প্রবণতা। সবশেষ গত শনিবার (১১ মার্চ) রাত ১১ টার দিকে ব্যবসায়ী দুই ভাইকে বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকার সড়কে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত মো. ফজলু মিয়া (৪৫) ও তাজু মিয়া (৪৮) নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের মৃত মো. জায়ফর উল্লার ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়-শনিবার রাতে শেরপুর বাজারস্থ লঞ্চঘাটে নিজেদের রেস্টুরেন্ট ব্যবসা বন্ধ করে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফিরছিলেন মো. ফজলু মিয়া (৪৫) ও তাজু মিয়া (৪৮)। পথিমধ্যে বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকায় পৌঁছামাত্রই একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাদেরকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাদেরকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ডালিম আহমেদ বলেন- দুই ভাইয়ের উপর হামলার ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি, প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব বিরোধের জের ধরে হামলার ঘটনা ঘটতে পারে ? আমরা তদন্ত করছি, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওসি আরও বলেন- বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকায় সিসি ক্যামেরা ও লাইট না থাকায় অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। অপরাধ প্রবণতা রোধে পুলিশি টহল জোরদার করা হবে। এদিকে এ ঘটনার পূর্বে একই কায়দায় আরও দুই ব্যবসায়ীর উপর বিবিয়ানা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকার একই সড়কে পৃথক হামলার ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত হলেও অন্যজন অল্পের জন্য রক্ষা পান। ২০১৯ সালের ১১ জুন মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শেরপুর থেকে বাড়ি ফেরার পথে পারকুল বিবিয়ানা বিদ্যুৎ পাওয়ার প্ল্যান্ট রোডে মুখোশ পড়া একদল দুর্বৃত্তরা নবীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সহ-সভাপতি ও শেরপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী ইউসূফ চৌধুরীকে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অল্পের জন্য রক্ষা পান তিনি। পুলিশের তদন্তে সন্দেহভাজন হিসেবে ওসমানী নগরের সাইফুর মিয়া (২৫) কে আটক করে পুলিশ। পরে ইউসুফ চৌধুরীকে হত্যার পরিকল্পনার দায় আদালতে স্বীকার করেন সাইফুর রহমান।
সাইফুরের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, হামলার প্রায় ৮-৯দিন পূর্বে এক প্রবাসীর নির্দেশনায় ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে হামলাকারী ৫-৬ জন সাইফুর এর বাসায় বসে ইউসুফ চৌধুরীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এরই জের ধরে হামলা করা হয় কিন্তু প্রাণে বেঁচে যান ইউসুফ চৌধুরী। ২০২০ সালের ৪ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে শেরপুর বাজার থেকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন রফিক মিয়ার ছেলে পান বিক্রেতা জাহেদ মিয়া। পথিমধ্যে পাওয়ার প্ল্যান্ট সড়কে তার সাইকেলের গতিরোধ করে দুর্বৃত্তরা। পরে জাহেদকে দাড়াঁলো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে সড়কের পাশে জমিতে পেলে যায়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। আসামীদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়- সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের দুস্তপুর গ্রামের জনৈকা হ্যাপি আক্তার সুখীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমেরে সম্পর্ক ছিল একই এলাকার ইচপুর গ্রামের ধনাই মিয়ার পুত্র মোহাম্মদ আলী রুবেলের। রুবেল-সুখীর প্রেম চলাকালে হ্যাপী তার খালাতো বোনের বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের উজিরপুর গ্রামে বেড়াতে আসে। হ্যাপি আক্তার সুখী’র খালাতো বোন রত্মা বেগমের স্বামী রিপন মিয়া। শ্যালিকা হ্যাপীকে নিয়ে দুলাভাই রিপন মিয়া বাড়িতে বসে গল্প করার সময় ওই বাড়িতে যায় রিপনের বন্ধু জায়েদ মিয়া। এ সময় সুখীকে একনজর দেখেই ভালো লেগে যায় জায়েদের। এক পর্যায়ে মোহাম্মদ আলী রুবেলের প্রেমিকা সুখীর সাথে নতুন করে প্রেমের গভীর সর্ম্পক গড়ে উঠে জায়েদের। জায়েদের সাথে হ্যাপি আক্তার সুখী’র নতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠায় সুখীর প্রথম প্রেমিক মোহাম্মদ আলী রুবেলের সঙ্গে ২ বছরের পুরনো প্রেমের সর্ম্পক ভেঙে যায়। উভয় পরিবারের সম্মতিতে জায়েদ-সুখীর বিবাহে দিনক্ষণ ওই বছরের ৬ মার্চ উভয় পক্ষ এক সাথে বসে নির্ধারণ করার কথা ছিল। এদিকে সুখীর সাবেক প্রেমিক মোহাম্মদ আলী রুবেল জায়েদ-সুখীর নতুন প্রেমের সম্পর্কটি কোনো ভাবে মেনে নিতে পারেনি। এরই জের ধরে জায়েদের বন্ধু রিপন মিয়া, রনি মিয়া সহযোগিতায় জায়েদকে কুপিয়ে হত্যা করে রুবেল।