ফেঁসে যাচ্ছেন ইমরান খান?

দৈনিকসিলেটডেস্ক
গত বছরের এপ্রিলে এক অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন পাকিস্তানে তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। এরপর থেকে ইমরান খানের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হতে থাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় ইমরান খান জানান, দেশজুড়ে তার বিরুদ্ধে অন্তত ৮৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রতিদিনই তার বিরুদ্ধে কোনো না কোনো মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
তারকা ক্রিকেটার থেকে রাজনৈতিক বনে যাওয়া ৭০ বছর বয়সী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, আদালত অবমাননা, দাঙ্গা এমনি ব্লাসফেমির মতো মামলা আছে।
দুর্নীতি
২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন ইমরান খান। সেইসময় তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও কর্মকর্তাদের থেকে উপহার পান। সেসব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে বিক্রি করে নিজ পকেটে ভরেছেন বলে পিটিআই প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ।
গত ৭ মার্চ ইসলামাবাদের হাইকোর্ট এই মামলায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তবে ইমরান গ্রেপ্তার এড়িয়ে একই আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিলের আবেদন করেন।
এরপর ইমরান খানকে ১৩ মার্চ আদালতে হাজির হতে বলেন আদালত। তবে ইমরান খান সেইদিন হাজির হননি। তার পক্ষে একজন আদালতে হাজির হয়ে বলেন ইমরানের জীবন এতে ঝুঁকিতে পরতে পারে। এ নিয়ে আদালত ইমরান খানের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এতে করে পুলিশ ইমরান খানের বাসভবনে তাকে গ্রেপ্তার করতে যায়। টানা দুইদিনব্যাপী জামান পার্কের বাসভবনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পিটিআই সমর্থকদের। তবে পিএসএলের ম্যাচ আছে- এই কথা বলে সেখান থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার না করেই পিছু হটে পুলিশ।
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার ইমরান খানের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিলের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। এতে করে ইমরান খান ফের গ্রপ্তারের শঙ্কায় আছেন।
এর আগে ইসলামাবাদ আদালত ইমরান খানকে ১৮ মার্চের মধ্যে আদালতে হাজিরের সময়সীমা বেধে দেন। বৃহস্পতিবার আল-জাজিরাকে ইমরান বলেন, আমি ১৮ তারিখ আদালতে হাজির হচ্ছি। কিন্তু ১৮ তারিখের আগে তাকে পুলিশ যে গ্রেপ্তারের অভিযান চালায় তাকে বেআইনি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এই সময় তিনি তাকে দেওয়া উপহার বিক্রির অভিযোগ উড়িয়ে দেন। ইমরান বলেন, রাষ্ট্রীয় উপহার নিয়ে অভিযোগ সম্পর্কে আমায় পরিষ্কার করে বলতে দিন… যাকিছু আমি করেছি তা বৈধ।
সন্ত্রাসবাদ
ক্ষমতা হারানোর পর ইসলামাবাদসহ বড় বড় শহরে সমাবেশের আয়োজন করেন ইমরান খান। গত বছরের আগস্টে ইসলামাবাদের এক র্যালিতে তিনি তার বিরোধী পার্টি, পুলিশ ও বিচারকের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় ভাষণ দেন।
পিটিআই প্রধান সেদিন এক নারী বিচারককে হুমকি দেন যিনি তার এক ঘনিষ্ঠজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমন হুমকির পরেই ইমরান খানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের মামলা দায়ের করা হয়।
ইমরান খান এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি ভবিষ্যতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হতে অযোগ্যতার সম্মুখীন হতে পারেন। এদিকে ইমরান খান গ্রেপ্তার হলে তার দল দেশজুড়ে গণবিক্ষোভের হুমকি দিয়েছে।
দাঙ্গা
চলতি সপ্তাহের শুরুতে পিটিআই সমর্থক ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই নিয়ে লাহোর পুলিশ ইমরান খানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছে।
এফআইআরে ইমরানের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, খুনের চেষ্টা, সহিংসতা প্ররোচনা এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী আইন পাশ হয়। এর সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
গত বছরের অক্টোবরেও ইমরানের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। এছাড়া লংমার্চের পর ইসলামাবাদের বিভিন্ন থানায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে অন্তত ১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে আজ শুক্রবার ইমরান খান তার বিরুদ্ধে হওয়া একাধিক মামলার জামিনের জন্য লোহোর হাইকোর্টে (এলএইচসি) হাজির হচ্ছেন বলে জানিয়েছে জিও নিউজ। বিভিন্ন সূত্র জিও নিউজকে জানিয়েছে, আজ এলএইচসিতে দুপুর দুইটার পরে হাজির হবেন ইমরান খান।
এসব মামলার যেকোনো একটি দোষী প্রমাণিত হলে ইমরান খানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের। এছাড়া পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইমরানের দ্বন্দ্বও এখন সবারই জানা