যে কারণে শয়তানকে সৃষ্টি করেন আল্লাহ
জাওয়াদ তাহের
ইবলিস শয়তান আল্লাহ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। সে মানুষের প্রধান শত্রু। সৃষ্টি জগতের অধিকাংশ মাখলুক তাকে ঘৃণা করে। যখন আল্লাহ তাআলা তাকে আদম (আ.)-কে সিজদা করার জন্য আদেশ করেন, তখন সে আদেশ প্রত্যাখ্যান করে। আল্লাহর সামনে নিজের খোঁড়া যুক্তি তুলে ধরে, তখন থেকেই সে আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত হয়। সে থেকেই শয়তানের মানুষের সঙ্গে চিরশত্রুতা ও দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কারণ মানুষই তার বিতাড়িত হওয়ার অন্যতম কারণ। সে-ই আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-কে ধোঁকা দিয়ে জান্নাত থেকে বের করেছে।
শয়তানের প্রধান কাজ
শয়তানের প্রধান কাজ মানুষকে ধোঁকা দেওয়া, কুমন্ত্রণা দেওয়া, খারাপ ও হারাম কাজকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা, প্রবৃত্তির অনুসরণ শিক্ষা দেওয়া—এগুলোই তার প্রধান কাজ। মানুষ এসব কাজ করলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর ক্রোধান্বিত হবেন, মানুষ আল্লাহর নাফরমানির ক্ষেত্রে শয়তানের সমান হয়ে যাবে, এ জন্য শয়তান প্রতিনিয়ত এসব করে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য, মানুষকে এভাবেই বিভ্রান্ত করে চলে। এটাই তার প্রধান কাজ ও মিশন।
আল্লাহ তাআলা শয়তানকে কেন সৃষ্টি করেছেন
শয়তানকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন, যাতে পৃথিবীতে সে একটা নিদর্শন হিসেবে থাকে। অন্যরা তার থেকে শিক্ষা নেবে। বিশেষভাবে মানুষ যেন তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। যারা আল্লাহর অনুসরণ করে না, আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী চলে না, ভেতরে অহংকার লালন করে, তাদের পরিণতি কী হয়, এটার অন্যতম দলিল, শয়তান। যদি মানুষ শয়তানের অনুসরণ করে, তার মতো হয়, তাহলে তার পরিণতিও শয়তানের মতো হবে।
দুনিয়া মানুষের পরীক্ষাগার
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের বসবাসের জন্য পৃথিবীতে স্থান দিয়েছেন। মানুষের মধ্য থেকে তিনি প্রতিনিধি নির্ধারণ করেছেন। কাউকে শত শত নিয়ামত দিয়েছেন, যা গুনে শেষ করা যাবে না। জনজীবন সহজ করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি দুনিয়াকে মানুষের জন্য পরীক্ষাগার হিসেবে বানিয়েছেন। কে আল্লাহর অনুসরণ করে, আর কে তাঁর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়; আর এই অভিশপ্ত শয়তানকে সৃষ্টি করাও পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে তাঁর কুদরত প্রকাশ করা
আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নুর থেকে সৃষ্টি করেছেন। ইবলিস শয়তানকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। এই তিন ধরনের মাখলুককে তিন ধরনের বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন। এটা দেখানোর জন্য যে প্রকৃত সম্মান উপাদানের নয় যে কাকে কোন উপাদান দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মাঝে সম্মান নিহিত নয়। বরং সম্মানের মূল মন্ত্র তাকওয়া; কে কতটুকু আল্লাহ তাআলার নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা। কে আল্লাহর ইবাদত করে, আর সব বিধি-নিষেধের আনুগত্য প্রকাশ করে।
আল্লাহর ক্ষমার গুণ প্রকাশ করার জন্য
আল্লাহ তাআলার মহান এক গুণ আছে, তিনি ক্ষমাকারী। বান্দার গুনাহের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার এই মহান গুণবাচক নামের প্রকাশ ঘটে। বান্দা যদি গুনাহ না করে, তাহলে আল্লাহ তাআলার ক্ষমার গুণ কিভাবে প্রকাশ হবে! শয়তান মানুষকে নানাভাবে ধোঁকা দেবে, সে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, মানুষ গুনাহের সাগরে হাবুডুবু খাবে, আর আল্লাহর সামনে তাওবা করবে, আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। সুতরাং শয়তানকে সৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার এই গুণবাচক নামের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
বেশি নৈকট্য অর্জন করার জন্য
শয়তানের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তাআলার বেশি নৈকট্য অর্জন করতে পারে। তা এভাবে যে শয়তান ধোঁকা দেওয়ার ভয়ে প্রকৃত মুমিন আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি প্রার্থনা করবে এবং শয়তানের সঙ্গে লড়াই করে যুদ্ধে জয়ী হবে। এই কষ্টের পরে আল্লাহ তাআলা তাকে বেশি সওয়াব দান করবেন। পাশাপাশি একজন মুমিন সব সময় তার ভেতরে ভয় কাজ করবে যে যেকোনো মুহূর্তে শয়তান তাকে ধোঁকা দিয়ে দিতে পারে, তখন সেও আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত হবে। এ কারণে সর্বদা আল্লাহর পথে অভিমুখ থাকবে। তা ছাড়া আল্লাহর কাছে সবর তাওয়াক্কুল, আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা— এগুলো অনেক প্রিয় জিনিস। আর এসব প্রিয় জিনিস তখনই সম্ভব হবে, যখন মনের সঙ্গে মানুষ যুদ্ধ করবে। আর এসব করার জন্য মনকে শয়তান প্ররোচনা দিয়ে থাকে। আর শয়তানের মাধ্যমে এসব গুণে একজন মুমিন উত্তীর্ণ হবে।
ফেরেশতারা শিক্ষা লাভ করবে
পৃথিবীতে ফেরেশতাদের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা অনেক বড় বড় কাজ সম্পাদন করেন। শয়তান আল্লাহ তাআলার একটি মাত্র আদেশ অমান্য করার কারণে বিতাড়িত হয়েছে। এখান থেকে অন্য বড় বড় ফেরেশতা শিক্ষা লাভ করবে যে আল্লাহ তাআলার কথা না মানলে কী ধরনের শাস্তি আসতে পারে। ভবিষ্যতে আল্লাহর কোনো কাজে অবাধ্যতা প্রকাশ করবে না। তাদের ভেতরে অন্য রকম ভয় কাজ করবে।
ভালো-মন্দ নিরূপণ
আল্লাহ তাআলা আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এবং বলেছেন এখানে কে ভালো কে মন্দ এটা যাচাই করবেন। যাচাইয়ের প্রক্রিয়া কী হবে। আল্লাহ তাআলা শয়তানকে সৃষ্টি করে ভালো-মন্দকে এর মাধ্যমে যাচাই করেছেন। যারা তার অনুসরণ করবে তারা মন্দ, আর যারা করবে না তারা ভালো। আর মন্দ ছাড়া ভালো জিনিস নির্ণয় করা যায় না। বা ভালো জিনিসের কদর বুঝে আসে না। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ এরূপ করতে পারেন না যে তোমরা (এখন) যে অবস্থায় আছো মুমিনদের সে অবস্থায়ই রেখে দেবেন, যতক্ষণ না তিনি পবিত্র হতে অপবিত্রকে পৃথক করে দেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৭৯)-কালেরকন্ঠ