খাদ্যে ভেজাল মেশানো জঘন্য অপরাধ

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরগুলো দেখলে সত্যিই আঁতকে উঠতে হয়। নিরাপদ নয় শিশুখাদ্যও, শিশুদের প্রয়োজনীয় খাবারের পাশাপাশি চকোলেট, চিপস, জুস ইত্যাদিতে ভেজাল মেশানোর খবরগুলো জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু কিছু রাসায়নিক ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বিভিন্ন রকম জটিল রোগের জন্ম দেয়। যারা এগুলো করে, তারা কিন্তু না বুঝে করছে এমনটা নয়। তারা অতি মুনাফার আশায় জেনেশুনেই এমন জঘন্য কাজ করছে। তাদের কাছে কোনো মানুষ নিরাপদ নয়। অথচ ইসলাম কোনো মানুষকে এ ধরনের প্রতারণা করার অধিকার দেয়নি। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর কসম! তোমাদের কেউ পূর্ণ মুমিন হবে না, যে পর্যন্ত না সে নিজের ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ না করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে থাকে।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৫০১৭)
এরা যেকোনো মূল্যে মুনাফা কামানোর নেশায় দুনিয়া ও আখিরাত দুটোই হারিয়ে বসে। এক দিনে তারা মানুষের নিরাপদ খাদ্যের অধিকার কেড়ে নিয়ে মানুষকে বিপদে ঠেলে দিয়ে প্রকৃত মুসলমানের খাতা থেকে নাম কাটিয়ে নেয়। যেহেতু রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে, সে ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। আর যাকে মানুষ তাদের প্রাণ ও সম্পদের জন্য নিরাপদ মনে করে সে-ই প্রকৃত মুমিন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৬২৭)
অন্যকে অবৈধ পন্থায় উপার্জনের কারণে তাদের রিজিকের বরকত উঠে যায়। কেননা রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে তাকে বরকত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি অসংগত পন্থায় সম্পদ অর্জন করে সে এমন ব্যক্তির ন্যায়, যে আহার করে কিন্তু তৃপ্ত হয় না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৯৫)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা যতক্ষণ পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হয়, ততক্ষণ তাদের ইখতিয়ার থাকবে (ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা বা বাতিল করা)। যদি তারা সত্য বলে এবং অবস্থা ব্যক্ত করে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত হবে, আর যদি মিথ্যা বলে এবং দোষ গোপন করে, তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত মুছে ফেলা হয়। (বুখারি, হাদিস : ২০৭৯)
নবীজি (সা.) খাবারে বা পণ্যে ভেজাল মেশানো ব্যবসায়ীদের নিজের উম্মত বলে স্বীকার করেন না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এমন এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছিল। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে বিক্রি করছ? তখন সে তাঁকে এ সম্পর্কে জানাল। ইতিমধ্যে তিনি এ মর্মে ওহিপ্রাপ্ত হলেন, আপনি আপনার হাত শস্যের স্তূপের ভেতরে ঢোকান। তিনি স্তূপের ভেতরে তাঁর হাত ঢুকিয়ে অনুভব করলেন যে তার ভেতরের অংশ ভেজা। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করে তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫২)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘অভিশপ্ত সে, যে কোনো মুমিনের ক্ষতি করে অথবা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪০)
তাই যাঁরা জনপ্রতিনিধি আছেন, বাজার কমিটি, ব্যবসায়ী সমিতি কিংবা এতদসংশ্লিষ্ট যেকোনো দায়িত্বে আছেন, তাঁদের উচিত, নিজের অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব, এ ধরনের অপরাধ বন্ধে সচেষ্ট হওয়া। কারো পরিবারের সদস্য এ ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে অন্যদের উচিত, তাকে বুঝিয়ে এ ধরনের দুর্নীতি থেকে ফিরিয়ে আনা, তাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা, অন্যথায় সবাইকে আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।