সুনামগঞ্জে কাঁচাবাজারে উত্তাপ, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

দৈনিকসিলেট প্রতিবেদক :
রমজানের আগেই বাড়তি উত্তাপ কাঁচাবাজারে। চড়েছে অধিকাংশ সবজি, মাছ ও মাংসের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম প্রকারভেদে কেজিপ্রতি প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর মাছ-মাংসের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে নাভিশ্বাস উঠছে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষের। বেশির ভাগ ক্রেতা পড়েছেন বিপাকে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, সংযমের মাস রমজান ঘিরেও মুনাফালোভীরা উঠেপড়ে লেগেছেন। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, বৃষ্টির কারণে বাজারে পণ্যর সরবরাহ কমায় দাম কিছুটা বেড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কয়েকটি কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, করলা ১০০ টাকা, বেগুন ৫০, গাজর ৫০-৬০, শসা ৫০-৬০, টমেটো ৩০, সিম ৫০-৬০, কাঁচামরিচ ১০০, ঢেঁড়শ ৮০-১০০, ঝিঙা ১২০, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা কেজি ও ফুলকপি প্রতিটি ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের কয়েক জানান, দুই দিন আগেও বাজারে ফুলকপি প্রতিটি ১০-২০, করলা ৫০, বেগুন ৩০, গাজর ৪০ ও শসা ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ রোজার আগের দিন প্রায় সব সবজির দাম কয়েকগুণ বেড়েছে।
উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওধার গ্রামের বাসিন্দা বশির আহমেদ। বাজারে দেখা হলে তিনি বলেন, সবজির দাম দিগুণ বেড়েছে। বুধবার প্রতিটি লেবুর দাম ছিল ৫ টাকা, তা আজ (বৃহস্পতিবার) ২০ টাকা হয়ে গেছে। শিম ছিল ৩০ টাকা, তা ৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে হলো। জানিগাঁওয়ের বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, বুধবার বেগুনের দাম ছিল ৩০, তা আজ (বৃহস্পতিবার) ৫০ টাকা। প্রতিটি সবজির দামই ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। মধ্যনগর সদরের বাসিন্দা লিপি আক্তার বলেন, রোজার জন্য সবজির দাম বেড়েছে। প্রতি বছর রোজা এলেই ব্যবসায়ীরা সবকিছুর দাম বাড়ায়। এ অবস্থায় সংসার চারাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
খুচরা ব্যবসয়ী পুতুল মিয়া বলেন, সিন্ডিকেট করে সবজির দাম বাড়ানো হয়েছে। সকালে আড়তে যখন কিনতে যাই, তখন সবজি পাওয়া যায় না। আড়তে সবজি লুকিয়ে রাখা হয়। বেলা বাড়লে বেশি দামে সবজি বিক্রি করা হয়। এ জন্য আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়।
পাইকারি ব্যবসায়ী মো. রবি মিয়া বলেন, বৃষ্টির জন্য বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। ক্ষেত থেকে কৃষকরা সবজি তুলতে পারছে না। এ জন্য চাহিদা মতো বাজারে সবজি পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলার ধর্মপাশা সদর ইউনিয়নের হলিদাকান্দ গ্রামের চাষি মো. জাকির হোসেন। তিনি জানান, তারা পাইকারি মূল্যে করলা ৭০, বেগুন ৩০, গাজর ৪০, শসা ২৫, ফুলকপি ১৫, টমেটো ১৫, শিম ২০, কাঁচামরিচ ৫০, ঢেঁড়শ ২০ ও চিচিঙ্গা ৪০ টাকা দরে কেজি বিক্রি করছেন। সবজির প্রত্যাশিত দাম না পেলেও যা পাচ্ছেন তাতেও খুশি তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার মাছ-মাংসের দোকানে দেখা যায় গরুর মাংস ৭৬০, বয়লার মুরগি ২৩০ ও রুই মাছ ২৬০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ ২-৪ দিন আগেও গরুর মাংস ৭০০ টাকা, বয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা এবং রুই মাছ ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের আলী আহমেদ বলেন, গরুর মাংস, বয়লার মুরগি ও মাছের দাম অনেক বেড়েছে। বুধবার গরুর মাংস ছিল ৭০০ টাকা, বৃহস্পতিবার তা ৭৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। তবে মাংস ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, দেশীয় গরু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে,তাই মাংসের দাম বেড়েছে। আমাদের কিছু করার নেই।
কাঁচাবাজারে অস্থিরতার বিষয়ে কথা হয় ধর্মপাশার ইউএনও শীতেষ চন্দ্র সরকার ও মধ্যনগরের ইউএনও নাহিদ হাসান খানের সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, এখন রমজান মাস এসেছে। এ জন্য ক্রেতারা একসঙ্গে অনেক বাজার করছেন। বাজারে চাহিদা বেশি হলে, পণ্যের দাম কিছুটা বেড়ে যায়। তবে আমরা চেষ্টা করছি দাম স্বাভাবিক রাখার। প্রতি দোকানিকে বলেছি মূল্য তালিকা রাখতে। প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা হচ্ছে।