কোরআনে ভিক্ষুকদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
পবিত্র মাহে রমজান এলে বাড়ি-ঘর বা দোকানপাটে ভিক্ষুকের আনাগোনা বেড়ে যায়। ব্যস্ততার সময় ভিক্ষুকের আগমন অনেককে বিরক্ত করে। তারা ভিক্ষুককে বিভিন্ন রকম কটু কথা শুনিয়ে দেয়। অনেক সময় ভিক্ষা না দিয়েই বকাঝকা করে তাড়িয়ে দেয়। প্রকৃত ভিক্ষুকের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ ইসলামে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের ভিক্ষুককে ধমক দিতে বারণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ভিক্ষুককে ধমক দেবে না।’ (সুরা আদ-দুহা, আয়াত : ১০)
অর্থাৎ তাদের প্রতি কোনো রকম কঠোরতা প্রদর্শন করবে না, অহংকার করবে না। কর্কশ ও কড়া ভাষায় কথা বলবে না। যদি ভিক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে ভিক্ষা দিয়ে দেবে, আর যদি সম্ভব না হয়, কোমল ভাষায় বুঝিয়ে দেবে।
ভিক্ষা দেওয়া দান-সদকা করা ইত্যাদি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। তাই এগুলো দেওয়ার সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশা করতে হবে। এবং আল্লাহ যেসব কাজে রাগান্বিত হতে পারেন, সেগুলো থেকে সতর্ক থাকতে হবে। যেমন পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে মহান আল্লাহ দান-সদকার সঙ্গে ক্রোধ সংবরণের প্রসঙ্গ এনেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও জমিনের সমান, যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩-১৩৪)
অর্থাৎ যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে, রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেয়।
অনেক সময় দান-সদকা করতে গেলে দানগ্রহীতারা এমন আচরণ করে বসে, যা বিরক্তিকর। সে সময় অনেকেই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বসে। কোরআনের এই আয়াতে যেহেতু দান-সদকার সঙ্গে সঙ্গে রাগ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমাশীলতার কথা একসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, দাতাদের উচিত দান-সদকা করার সময় বাকি দুটি বিষয়ের (রাগ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমাশীলতা) প্রতিও যত্নবান হওয়া। তাহলে আশা করা যায় তাদের দান মহান আল্লাহর দরবারে উত্কৃষ্ট দান হিসেবে কবুল হবে।
এর সঙ্গে অবশ্য তাকওয়ার বিষয়টাও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দান-সদকা করার সময় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যা তাকওয়াবিরোধী বা দানের মহিমা ক্ষুণ্ন করে। যেমন দান-সদকা করার সময় লোক দেখানো মনোভাব না রাখা, মনে অহংকার না রাখা ইত্যাদি।
সাধারণত জাকাত দেওয়ার সময় মানুষের কর্মপন্থার কারণে তা লোক দেখানোর পর্যায়ে চলে যেতে পারে। কিংবা অহংকারে রূপ নিতে পারে। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ জাকাত প্রদানের পাশাপাশি তাওকওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং জাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৬)
তাই দাতাদের উচিত, জাকাত, ফিতরা, দান-সদকা ইত্যাদি দেওয়ার সময় বিষয়গুলোর ব্যাপারে সতর্ক থাকা, এমন কোনো আচরণ না করা, যাতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন, অন্যের মনে কষ্ট পায় কিংবা কৃত্রিমতা প্রকাশ পায়।
জাকাত-সদকা দেওয়ার জন্য মানুষকে ডেকে অপমান করা বা প্রহার করার অধিকার কোনো মুসলমানের নেই। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের প্রাণ-সম্পদ ও মান-সম্মানে হস্তক্ষেপ করা অপর মুসলিমের জন্য হারাম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৩৩) মহান আল্লাহ সবাইকে সুবুদ্ধি দান করুন। আমিন