যেসব কারণে রোজা ভাঙার অবকাশ রয়েছে
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
রোজা মানুষকে সংযমের শিক্ষা দেয়। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর পবিত্র রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন, যাতে করে তারা এর মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
রোজা ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। বিনা ওজরে রোজা ভাঙার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। হাফেজ জাহবি (রহ.) তাঁর ‘কাবায়ের’ নামক গ্রন্থে বলেন, ষষ্ঠতম কবিরা গুনাহ হলো বিনা ওজরে রোজা ভাঙা। অন্যত্র তিনি বলেন, এ কথা মুমিনদের কাছে স্বতঃসিদ্ধ, যে ব্যক্তি বিনা ওজরে কোনো অসুস্থতা কিংবা যৌক্তিক কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গ করে, সে ব্যভিচারী, প্রতারক ও মদ্যপ ব্যক্তির চেয়েও নিকৃষ্ট। মুমিনরা তার মুসলমান হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে। তারা ধারণা করে যে লোকটি হয়তো জিন্দিক হয়ে গেছে।
তাই ইসলামের দৃষ্টিতে কোনো যৌক্তিক কারণ না পাওয়া পর্যন্ত রোজা ভাঙার অবকাশ নেই। তবে মহান আল্লাহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যক্তিদের এই বিধানে শিথিলতা দিয়েছেন, যেমন—অসুস্থ, মুসাফির ইত্যাদি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের সহজ চান এবং কঠিন চান না। আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করো এবং তিনি তোমাদের যে হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করো এবং যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
এর দ্বারা বোঝা যায়, বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের জন্য রোজা ভাঙার অবকাশ রয়েছে। যদি কেউ ইসলাম সমর্থিত যৌক্তিক কারণে রোজা ভাঙতে বাধ্য হয়, তবে তাকে তিরস্কার করার সুযোগ নেই। নবীজি (সা.)-এর যুগেও তাঁর সাহাবিরা বিশেষ কারণে রোজা ভেঙেছেন। তাঁদের রোজাদার সাহাবিরা কখনো তিরস্কার করেননি।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সাঈদ (রা.) বলেন, রমজান মাসে আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতাম। এ সময় আমাদের কেউ সাওম পালন করেছেন, আবার কেউ সাওম ছেড়েও দিয়েছেন। কিন্তু সাওম পালনকারী সাওম ভঙ্গকারীকে খারাপ মনে করতেন না এবং সাওম ভঙ্গকারীও সাওম পালনকারীকে খারাপ মনে করতেন না। তারা মনে করতেন যার সামর্থ্য আছে সে-ই সাওম পালন করছে, এটা তার জন্য উত্তম। আর যে দুর্বল সে সাওম ছেড়ে দিয়েছে, এটা তার জন্য উত্তম। (মুসলিম, হাদিস : ২৫০৮)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস (রা.) বলেন, আমরা এক সফরে আল্লাহর নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক যে তার চাদর দ্বারা ছায়া গ্রহণ করছিল। তাই যারা সিয়াম পালন করছিল তারা কোনো কাজই করতে পারছিল না। যারা সিয়ামরত ছিল না, তারা উটের দেখাশোনা করছিল, খিদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং পরিশ্রমের কাজ করছিল। তখন নবী (সা.) বলেন, ‘যারা সাওম পালন করেনি তারাই আজ সওয়াব নিয়ে গেল।’ (বুখারি, হাদিস : ২৮৯০)
অতএব, ঘরে যদি অসুস্থ কোনো মানুষ থাকে, যারা অসুস্থতার কারণে রোজা রাখতে অক্ষম, বা নারীরা যদি বিশেষ কারণে রোজা রাখতে না পারে, কেউ সফরে থাকার কারণে রোজা রাখতে অক্ষম হয়, তাদের তিরস্কার করার সুযোগ নেই।