সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র কোটি টাকার ঘাটে দুই কোটি ‘খরচা’

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
ঘাটের ইজারা মূল্য ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে পেয়েছেন ব্যবসায়ী কাজী মোস্তাফিজুর রহমান। তবে অভিযোগ উঠেছে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদা পাথরের’ এ ঘাট পেতে তাঁকে ইজারা মূল্যের বাইরে খরচ করতে হয়েছে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা। মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সিন্ডিকেট করে ৩৭২টি দরপত্র কিনলেও জমা দেন মাত্র তিনটি। তার থেকে ঘাটের ইজারা পান কাজী মোস্তাফিজুর। পরে টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বিরোধ ও গত বুধবার দুই নেতার অনুসারীর মধ্যে মারামারি হলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ইজারাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদের ‘সমঝোতা বাণিজ্য’ এখন কোম্পানীগঞ্জের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘাট ইজারা হওয়ায় সরকার যেমন সঠিক রাজস্ব পাচ্ছে না, তেমনি প্রকৃত ইজারাদার বাদ পড়ছেন।
সমঝোতাকারী হিসেবে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে প্রক্রিয়ায় যুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী বলেন, ‘দরপত্রে পে-অর্ডারকারীদের টাকার ভাগ পাওয়ার কথা। কিন্তু এখন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালা মিয়াসহ অন্য যারা দরপত্র কিনেছেন, তাঁরাও ভাগ চাচ্ছেন। এ নিয়ে আলোচনাকালে বুধবার উপজেলা পরিষদের সামনে কালা মিয়ার লোকজন আমার দুই ভাইয়ের ওপর হামলা করে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘কালা মিয়া সমঝোতা মতো কাজ করছেন না, এমনকি খরচের কথা বলে নিজের কাছে ৪০ লাখ টাকা রেখে দিয়েছেন।’
কালা মিয়া বলেন, ‘দরপত্র নিয়ে সমঝোতা হয়ে থাকতে পারে। টাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। কারও কাছ থেকে আমি কোনো টাকা নেইনি।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আহমদ বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে সমাধানে শনিবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। তবে সাদা পাথর ঘাট ইজারায় অংশ নিয়ে কে কত টাকা পেয়েছেন, তা জানতে চাইলে এড়িয়ে যান তিনি।
উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, পর্যটন ঘাটের ইজারা আহ্বানের পর প্রথম দফায় গত ১৩ মার্চ ১৫টি দরপত্র বিক্রি হলেও জমা পড়ে পাঁচটি। কম মূল্যের অজুহাত দেখিয়ে উপজেলা প্রশাসন সেটি বাতিলের কথা জানায়। যদিও সমঝোতা করতে গিয়ে দ্বন্দ্ব ও এক সরকারি কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় দরপত্র বাতিল করা হয় বলে জানা গেছে। দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বানের পরই ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকায় ইজারাদারের সঙ্গে সমঝোতা করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। তাঁরা বিভিন্ন নামে ৩৭২টি দরপত্র কেনেন।
গত ২৮ মার্চ দরপত্র খোলার দিন সর্বোচ্চ ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা দরদাতা নির্বাচিত হয় কাজী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিষ্ঠান। তিনি আগামী ১ বৈশাখ থেকে সাদা পাথর ঘাট ইজারার দায়িত্ব পাবেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ২ কোটি ১০ লাখ টাকা দিয়ে কাজটি পাওয়ার কথা অস্বীকার করে কাজী মোস্তাফিজুর সমকালকে বলেন, ‘আমি কখনও কোম্পানীগঞ্জে যাইনি। শুধু টেন্ডার জমা দিয়ে এসেছি। পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা জমা করেছি। কাজ পেতে কাউকে সমঝোতার জন্য টাকা দেইনি।’ তিনি বিরোধের বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভ্যন্তরীণ বলে মন্তব্য করেন।
জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিসহ পাঁচ থেকে সাত নেতা ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে কাজী মোস্তাফিজুরকে কাজটি পাইয়ে দেন। আর এটি করতেই তাঁরা বিভিন্ন নামে দরপত্র কেনেন। কথা ছিল যারা পে-অর্ডার দেখাবেন, তাঁদের টাকার ভাগ দেওয়া হবে। ৩৭২টি দরপত্রের মধ্যে ১৮০ জন পে-অর্ডার কেটেছেন বলে জানা গেছে। তাঁদের মধ্যেই শুধু ওই টাকা ভাগ হওয়ার কথা। কিন্তু দরপত্র কেনা ও পে-অর্ডারকারীদের মধ্যে টাকা বণ্টন এবং খরচ দেখিয়ে ৪০ লাখ টাকা মূল সমঝোতাকারীদের কাছে রাখা নিয়েই মূলত বিরোধ দেখা দেয়। ‘লাভ’ হিসেবে পাওয়া ১ কোটি টাকা ইজারাদার ইতোমধ্যে পে-অর্ডারকারীদের মধ্যে বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, ‘১ কোটি ১৮ লাখ টাকায় ঘাট ইজারা হয়েছে, যা ভ্যাট-ট্যাপসহ ১ কোটি ৪০ লাখের মতো। ইজারার ক্ষেত্রে সমঝোতার বিষয় জানা নেই। নেতাদের মধ্যে মারামারি তাদের অভ্যন্তরীণ বলে শুনেছি।’ সুত্র: সমকাল