৫ ছক্কা হাঁকিয়ে হলেন কলকাতার নায়ক

দৈনিকসিলেটডেস্ক:
আইপিএলের ম্যাচে গতকাল রোববার আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে গুজরাট টাইটানসের বিপক্ষে শেষ ওভারে কলকাতা নাইট রাইডার্সের দরকার ছিল ২৯ রান। বোলিংয়ে যশ দেয়াল আর স্ট্রাইকপ্রান্তে ছিলেন ‘মূলত বোলার’ উমেশ যাদব। ১ রান নিয়ে স্ট্রাইক এনে দেন তখন ১৬ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থাকা রিংকু সিংকে। শেষ ৫ বলে দরকার ২৮ রান। অর্থাৎ প্রায় প্রত্যেক বলেই দরকার ওভার বাউন্ডারি। দানবীয় ব্যাটিংয়ে সেই চূড়ান্ত কঠিন ম্যাচই বের করে আনেন রিংকু।
উনিশতম ওভারের শেষ দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখেন রিংকু। শেষ ওভারের প্রথম বলটি কোনোমতে লং অনে ঠেলে ১ রান এনে দেয়ার কাজটি পটুতার সঙ্গেই করেন উমেশ। এরপরই দেখা যায় সেই রিংকু শো।
দ্বিতীয় বলটি ওয়াইড ইয়র্কার করতে চেয়েছিলেন গুজরাটের বোলার দেয়াল। তবে সেটি অফস্ট্যাম্পের বাইরে ফুলটস হিসেবে পান রিংকু। ওয়াইড লং অফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারেন রিংকু। তৃতীয় বলে লেগ সাইড দিয়ে ফুলটস মারেন দেয়াল। সেটিও দড়ির ওপর দিয়ে সীমানাছাড়া করতে ভুল করেননি রিংকু। চতুর্থ বলটিও ফুলটস দেন গুজরাটের এই বোলার। এবার ছক্কা আসে লং অফের ওপর দিয়ে। শেষ দুই বল ফুলটস না দিলেও বলকে তখন ‘ফুটবল’ দেখা রিংকু সীমানার ওপারে আছড়ে ফেলতে ভুল করেননি মোটেই।
কলকাতাকে জিতিয়ে নায়ক বনে যাওয়া এই রিংকুর জীবনটা অবশ্য এত সহজ ছিল না। উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের সাধারণ ঘরের ছেলে তিনি। ছোট থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের যাত্রাপথ মোটেই মসৃণ ছিল না। বরং ক্রিকেটার হওয়াটা তার কাছে একটা সংগ্রাম ছিল।
আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে জানায়, আলিগড়ে ১৯৯৭ সালের ১২ অক্টোবর জন্ম রিংকুর। ৫ ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার এক বোন রয়েছে।
রিংকুদের ছিল অভাবের সংসার। তার বাবা বাড়ি বাড়ি এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার বিলি করতেন। এক ভাই অটোচালক। অন্য এক ভাইয়ের কোচিং সেন্টার রয়েছে। পড়াশোনাতেও ভালো ছিলেন না রিংকু। নবম শ্রেণিতে অকৃতকার্য হওয়ার পর আর স্কুল যাননি।
জানা যায়, টানাটানির সংসারে দু’বেলা খাবারের জন্য রিংকুকে ঝাড়ুদারের কাজে লাগিয়েছিলেন তার ভাই। টাকা উপার্জনের জন্য কাজের দরকার ছিল ঠিকই। তবে ঝাড়ুদার হতে চাননি তিনি। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ তখন। সেই সময় বাড়ি ফিরে রিংকু তার মাকে জানিয়েছিলেন যে, কোনো কাজ করার থেকে ক্রিকেটে মন দিতে চান তিনি।
অভাব থাকলেও ক্রিকেট খেলায় কখনও ইতি টানেননি রিংকু। তার যখন ১৭ বছর বয়স, সেই সময় প্রথম বার উত্তরপ্রদেশ রাজ্য ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ পান। এরপর ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয়।
২০১৭ সালে আইপিএলে ভাগ্য খুলে যায় রিঙ্কুর। ১০ লাখ ভারতীয় রুপিতে তাকে কিনেছিল কিংস ইলেভেন পঞ্জাব। তবে সেবার টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগই পাননি। তাই ব্যাট হাতে তার কেরামতি দেখার সুযোগ পায়নি বাইশ গজের দুনিয়া।
এরপর ২০১৮ সালে ৮০ লাখ রুপিতে রিংকুকে দলে ভেড়ায় কলকাতা। সেবার থেকেই কলকাতার দলেই রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের ছেলে। তবে খেলার সুযোগ খুবই কম পেয়েছেন তিনি। যোগ দেওয়ার পর একাধিক ম্যাচে ফিল্ডিং করতে দেখা গিয়েছে তাকে। দুর্দান্ত সব ক্যাচও ধরেছেন। কিন্তু সে ভাবে ম্যাচ খেলতে দেখা যায়নি তাকে।
সেই রিংকুই রোববার ৫ ছক্কা মেরে রাতারাতি ‘নায়ক’ হয়ে উঠলেন। ঠিক যেন কোনও সিনেমার ক্লাইম্যাক্স দৃশ্য।
চলমান আইপিএলে রিংকুকে ৫৫ লাখ রুপিতে কিনেছে শাহরুখ খানের দল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, রিংকুর মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৬ কোটি রুপি। আইপিএলের হাত ধরেই কোটিপতি হন তিনি।