ইসলামের ইতিহাসে প্রথম ঈদ
মুফতি আব্দুল আজিজ
ঈদ শব্দটি আরবি। অর্থ খুশি, আনন্দ, অনুষ্ঠান, উৎসব, প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি। শব্দের মূল রূপ হলো আওদ, যার অর্থ ফিরে আসা। (আনওয়ারুল মিশকাত : ৩/৬০৫)
ঈদের পারিভাষিক অর্থ
আরবদের কাছে ঈদ বলা হয় এমন সময়কে, যে সময় আনন্দ ও দুঃখ ফিরে আসে। (লিসানুল আরব, ইবনে মুনজির : ৬/৫১০)
আল মুনজিদ অভিধানে বলা হয়েছে, ঈদ এমন দিনকে বলা হয়, যাতে লোকজনের সমাগম হয় বা কোনো সম্মানিত ব্যক্তি অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণা করা হয়। (আল মুনজিদ পৃ. ১০৩৮)
ইসলামের পরিভাষায় ঈদ
মুসলমানরা বছরে যে দুটি দিবসকে আনন্দ ও উৎসবের দিবস হিসেবে পালন করে থাকে, তাকে ঈদ বলা হয়। (আনওয়ারুল মিশকাত : ৩/৬০৫)
ঈদের নামকরণ
ঈদকে ঈদ বলে নাম করার কারণ হলো, তা প্রত্যেক বছরে ফিরে আসে, আর তার মূল রূপ হলো আওদ, যার অর্থ ফিরে আসা। (মেরকাত শরহে মেশকাত : ৩/৪৭৭)
ঈদের প্রবর্তন
মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর ঈদের প্রবর্তন হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছে দেখতে পান যে মদিনায় বসবাসকারী ইহুদিরা শরতের পূর্ণিমায় নওরোজ উৎসব ও বসন্তের পূর্ণিমায় মেহেরজান উৎসব উদযাপন করছে। তারা এ উৎসবে নানা আয়োজন, আচার-অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন আনন্দ উৎসব করে থাকে। মহানবী (সা.) মুসলমানদের এ দুটি উৎসব পালন করতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তোমাদের ওই উৎসবের বিনিময়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো পবিত্র দুটি দিন দান করেছেন। এতে তোমরা পবিত্রতার সঙ্গে উৎসব পালন করো। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) যখন মদিনায় আগমন করেন, তখন তাদের দুটি দিন ছিল, যাতে তারা উৎসব পালন করত। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এ দুটি কিসের দিন? তারা বলল, আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিন খেলাধুলা ইত্যাদি উৎসব পালন করতাম। এ নিয়মই চলে আসছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটির পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। (নাসায়ি, হাদিস : ১৫৫৬, আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৪)
মদিনায় প্রথম ঈদ
ঈদের নামাজ প্রবর্তিত হওয়ার সময় সম্পর্কে দুটি অভিমত পাওয়া যায়—
প্রথমত, আদ-দুররুল মুখতার গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে প্রথম হিজরিতে ঈদের নামাজের বিধান প্রবর্তিত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, বেশির ভাগ আলেমের মতে, দ্বিতীয় হিজরিতে তার বিধান প্রবর্তিত হয়। মুসলমানরা মদিনায় প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ে দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ বা ৩১ মার্চ।
এই অভিমতই অধিক যুক্তিযুক্ত। কেননা দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে রোজা ফরজ হয়। এ হিসাবে দ্বিতীয় হিজরিতেই ঈদের নামাজের বিধান প্রবর্তিত হয়। (মেরকাত শরহে মেশকাত : ৩/৪৭৭; আনওয়ারুল মিশকাত : ৩/৬০৫; আল বিদায়া ওয়ান নেহায়া : ৫/৫৪)
তখনকার ঈদে বর্তমান ঈদের মতো নতুন জামাকাপড়, কেনাকাটার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ-খুশি কম ছিল না।
মহানবী (সা.) ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি খেয়াল করতেন। মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ করতেন। শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত সব আনন্দ করার অনুমতি দিতেন।
ঈদ কেন পালন করা হয়
মূলত পুরো এক মাস রোজা রাখা ও তারাবি পড়ার পর ঈদের দিন আল্লাহ রোজাদারদের তাদের মেহনতের সওয়াব ও পুরস্কার দান করবেন। জাহান্নামিদের তালিকা থেকে তাদের নাম মুছে দেবেন। তাই রোজাদাররা খুশি হয়ে শুকরিয়াস্বরূপ দান-সদকা করে এবং ঈদের নামাজ আদায় করে।
এই নামাজকে নবীজি (সা.) এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে ইসলামের শুরু যুগে নারী ও শিশুদেরও ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া হতো; এমনকি ঋতুমতী নারীও ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে এক পাশে অবস্থান করত।
ইমাম তাহাবি (রহ.) বলেন, ইসলামের শুরুতে মহিলাদের ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের অনুমতির প্রেক্ষাপট হলো, যাতে ইসলামের শত্রুদের কাছে মুসলমানদের সংখ্যা অধিক মনে হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর তাদের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল না।
আয়েশা (রা.) বলেন, যদি রাসুল (সা.) জীবিত থাকতেন, তাহলে এ জামানায় মহিলাদের মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য যাওয়ার অনুমতি দিতেন না। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক : পৃ. ১৮৪ – দরসে তিরমিজির সূত্রে)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল আনসারি (রহ.) বলেন, আমাদের সময়ে দুই ঈদের জন্য যুবতী নারীদের বের হওয়ার প্রচলন ছিল না। (আল আওসাত ৪/৩০২; উমদাতুল কারী ৩/৩০৫)
মহান আল্লাহ সবাইকে ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক ঈদ পালন করার তাওফিক দিন। আমিন।