সিসিক নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ভাবনায় মেয়র আরিফ

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে বর্তমান মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুল হক চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন– এমনটা ভাবনায় রেখে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাই দলের নৌকার মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে নানা পরিকল্পনাও নিচ্ছে দলটি। কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো পৃথক বৈঠক করছে। প্রার্থী নিজেও সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বসছেন।
সর্বশেষ গতকাল বুধবার সিলেট রেড ক্রিসেন্ট অফিসে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আনোয়ারুজ্জামান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র আরিফুল হক দাঁড়ালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য তা কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে মনে করেই তাঁরা একযোগে মাঠে নামছেন। এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার সিলেট আসছেন দলের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আজ সন্ধ্যায় নগরীর আমান উল্লাহ কনভেনশন হলে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মিসভায় উপস্থিত থাকবেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। মূলত কর্মিসভা করে নেতাকর্মীকে চাঙ্গা করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধ ও মান-অভিমান ভুলে নৌকার পক্ষে কাজ করার বার্তা দেবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ছাড়া আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেট অবস্থান করে নির্বাচনী কাজে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান।
আরিফুল হক প্রার্থী হলে কোনো চ্যালেঞ্জে পড়বেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি প্রার্থী হলে নৌকার বিজয় আরও নিশ্চিত হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সিটি করপোরেশনে যে বরাদ্দ দিয়েছেন, তার অধিকাংশই লুটপাট করা হয়েছে। জনগণ কসমেটিক উন্নয়ন দেখে হয়তো লুটপাটের কথা ভুলে গেছে।
তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এটা মানছেন যে, আরিফুল হক প্রার্থী হলে বদলে যেতে পারে হিসাবনিকাশ। সেজন্য তাঁরা আগেই প্রচারণা জমিয়ে তুলেছেন। গত এক সপ্তাহে আওয়ামী লীগ কম হলেও ১০টি বৈঠক করেছে।
আরিফুল হকের সিদ্ধান্ত জানতে আগ্রহী আওয়ামী লীগসহ নগরবাসী। তিনি আগামী ২০ মে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারেন। তবে আরিফুল হক দলীয় বিরোধসহ বিভিন্ন কারণে নির্বাচনে না-ও দাঁড়াতে পারেন– এমন আভাস দিয়েছেন তাঁর এক ঘনিষ্ঠজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ঘনিষ্ঠজন সমকালকে বলেন, আরিফুল হকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। আরিফুল হক নির্বাচন করলে সেই সুযোগে দল থেকে তাঁকে বহিষ্কারসহ রাজনীতিতে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি ইভিএম পদ্ধতিতেও আস্থা নেই আরিফুলের। সব মিলিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত জানাতে সময় নিচ্ছেন।
স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত দুটি নির্বাচনে চমক দেখিয়ে ‘ম্যাজিকম্যানে’ পরিণত হয়েছেন আরিফুল হক। গত ১০ বছরে নগরীতে শক্তিশালী অবস্থানও তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। এবার তাঁর হ্যাট্রিক মিশন। ফলে অন্য অনেক প্রার্থীও তাকিয়ে আছেন তাঁর সিদ্ধান্তের দিকে।
এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, নৌকার কাণ্ডারি যিনি, তাঁকে সিলেটের লোকজন চেনে না। আরিফুল হক নির্বাচনে প্রার্থী না হলে আওয়ামী লীগের অনেক লোকজনও লাঙ্গলে ভোট দেবেন বলে দাবি করেন বাবুল। তিনি বলেন, আরিফুল নির্বাচনে প্রার্থী না হলে লাঙ্গলের বিজয় নিশ্চিত।
অনেক ইসলামী দলের সঙ্গে রয়েছে আরিফুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বিভিন্নভাবে ইসলামী দলগুলোকে সহযোগিতাও করে থাকেন তিনি। এ কারণে অনেক ইসলামী দলের প্রার্থীও আছেন তাঁর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরী সমকালকে বলেন, সবকিছু সময় বলে দেবে। আর আমি বলব ২০ মে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকুন।
মনোনয়ন সংগ্রহ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কুটুর
এতদিন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আলোচনায় ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের ১০ নেতা। মনোনয়ন না পেলেও এখন পর্যন্ত তাঁরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাননি। এ অবস্থায় হঠাৎ করেই মনোনয়ন কিনে আলোচনায় উঠে এসেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু। বুধবার তিনি সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। সিলেটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশি ও নব্বই দশকে সিলেটের ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন আবদুল হানিফ কুটু। এ ছাড়া যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। বর্তমানে আবদুল হানিফ দলীয় কোনো পদে না থাকলেও দলের রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। সুত্র: সমকাল