সুনামগঞ্জে ছোট্ট এক সেতুতেই বদলে গেছে সীমান্তের জনপদ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
এক সময় আমরা বিরাট কষ্ট কইরা নদী পার হইয়া ওই পারে যাইতাম। নদী পার হইলে গোদারা ভাড়া দিতে হইতো, অনেক সময় গোদারা পার হইতে সময় লাগতো। রাইত-বিরাইতে বেশিরভাগ সময় গোদারা পারাপার বন্ধ থাকার কারণে পার হইতে পারতাম না। রোগী নিয়া নদী পার হইতে গেলে দেখা গেছে রাস্তায় রোগী মারা গেছে। এখন আর আগের মতো কষ্ট করতে হয় না। ঢাকা থাইকা সরাসরি গাড়ি আসছে আমাদের এখানে। এভাবেই বদলে যাওয়া জীবনমানের গল্প বলছিলেন সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের সীমান্তের কালাগড় গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আব্দুল খালেক।
৯২ মিটার দৈর্ঘ্যের ছোট্ট একটি সেতু বদলে দিয়েছে আব্দুল খালেকের মতো হাজার হাজার মানুষের জীবনমান। উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের কালাগড় গ্রাম হয়ে মেঘালয় থেকে নেমে আসা মহিষখলা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি সীমান্তবর্তী এ জনপদে সূচিত হয়েছে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত।
নেত্রকোণা জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সওজ বিভাগের নির্মিত সেতুটির কাজটি পায় মোজাহের এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেতুর পূর্বপাড়ে জেলার মধ্যনগর উপজেলা পশ্চিম পাড়ে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়ন। গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে এ সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল শুরু করেছে রাজধানী ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ ছোট-বড় শত শত যানবাহন।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন কালাগড় থেকে এই সেতুর ওপর দিয়ে পাঁচ-সাতটি ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এসব বাসে প্রায় কম-বেশি শতাধিক যাত্রী যাতায়াত করেন। জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট, শ্রীপুর উত্তর, শ্রীপুর দক্ষিণ, উত্তর বড়দল ইউনিয়ন ও মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ, বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের লাখো মানুষ এই সেতুর বদৌলতে যোগাযোগের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এতে সীমান্তের জনজীবনে যোগাযোগ দুর্ভোগের অবসান ঘটেছে। উপকারভোগী জনগণের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।
এ সেতুর উপকারভোগী সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষের উপার্জনের প্রধান খাত কৃষি। এতদিন যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকার কারণে মধ্যস্বত্বভোগীরা মাঠে গিয়ে বাজারদরের তুলনায় কম দামে কৃষকদের থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করতেন। এখন কৃষকরা নিজেরাই তাদের উৎপাদিত পণ্য দেশের বৃহত্তম বাজারে সরবরাহ করতে পারবেন।
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ বলেন, এক সময় এই অঞ্চলের মানুষ অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে ছিল। সেতুটি হওয়াতে এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান বলেন, নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলায় সওজের অর্থায়নে নির্মিত সেতুটি হাওরবেষ্টিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সীমান্তবর্তী জনপদের জন্য যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রুহুল আমিন খান বলেন, প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকায় জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হয়নি। সীমান্তবর্তী জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই সেতুটি বিশাল ভূমিকা পালন করবে।