পরিবেশ দূষণ করায় হবিগঞ্জ এগ্রো কোম্পানীকে ১২ লাখ টাকা জরিমানা
নুর উদ্দিন সুমন, হবিগঞ্জ :
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ওসমানপুর ইউনিয়নে প্রাণ আর এফ এল কোম্পানীর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড কোম্পানীর শিল্প কারখানার সৃষ্ট বর্জ্য ও নিষ্কাশিত দূষিত পানিতে পরিবেশ দূষণ করায় অবশেষে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেট অঞ্চল।
এ তথ্য নিশ্চিত করেন, সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট অঞ্চলের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন। তিনি জানান, নীতিমালা উপেক্ষা করে গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ওসমানপুর গ্রামে হবিগঞ্জ এগ্রো লিমিটেড নামক ওই শিল্প কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে। এখানে মুরগী থেকে ডিম উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি মুরগীর বিষ্ঠা থেকে উপৎপাদন হচ্ছে সার। ফার্মের দূষিত পানি ও বিষাক্ত বর্জ্য কোন প্রকার পরিশোধন না করেই ফেলা হচ্ছে ওই এলাকার ধলাজাই খালে। আর খালের পানি ভূঁইছড়া হয়ে খোয়াই নদীতে যাচ্ছে। ফলে পানি সম্পূর্ণভাবে দূষিত হয়ে গেছে। মরে গেছে খালের মাছ। আর দূর্গন্ধ নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বর্জ্য যুক্ত বিষাক্ত পানি বাতাসে মিশে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। এ সংক্রান্ত স্থানীয় দৈনিক ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর গত (২৫ মার্চ) সরেজমিনে তদন্ত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর মমিনুল ইসলাম। তদন্ত শেষে সিলেট আলমপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এক শুনানি শেষে ১২ লাখ টাকা এ জরিমানা করা হয়।
হবিগঞ্জ এগ্রো কোম্পানী পরিবেশ দূষণ করে ও পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিল। সরজমিনে দেখা যায়, কারখানার পূর্ব পাশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম উত্তর অংশে লোকজনের বসবাস ও কৃষি জমি। অপরিকল্পিতভাবে এই কারখানার পশ্চিম উত্তর অংশে কোম্পানির ভেতর থেকে কালো পানি প্রথমে ধলাজাই গ্রামের খালে প্রবেশ করে। পরে ভূঁইছড়া হয়ে খোয়াই নদীতে কালো পানি প্রবেশ করছে। এমনকি কোম্পানির মরা মুরগী অর্ধশত কুকুর দলবেঁধে টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে খেয়ে মানুষের বাড়ির আঙ্গিনায় ফেলে রাখছে। অপরিকল্পিতভাবে এসব দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্যের কালো পানি ও মরা মুরগী রাখায়, যা রোদে শুকালে দুর্গন্ধের মাত্রা বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ। বাতাসে মিশে ভারী করে তুলে আশপাশের পরিবেশ। শুধু তাই নয়, এসব পচনশীল বর্জ্য থেকে ছড়িয়ে পড়ছে মশা-মাছি। আর কোম্পানির নিষ্কাশিত দুষিত পানিতে বিনষ্ট হচ্ছে এলাকার খাল-বিল, নদী-নালার পানি, মাছ ও কৃষি জমি। বিষাক্ত শিল্পবর্জ্যের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ আশপাশের কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ৷ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৬/৭ বছর আগে মুরগী পালনের নাম করে ফার্মের যাত্রা শুরু হয়। ক্রমেই এলাকাবাসির কাছে কর্তৃপক্ষের আসলরূপ প্রকাশ পায়। ফার্মের আকার সম্প্রসারণ করে শুরু করে মুরগীর বিষ্ঠা পুরানো, জৈব সার উৎপাদন। খামারের বর্জ্য ও দূষিত পানি কোন প্রকার পরিশোধন না করেই ফেলা হয় ধলাজাই খালে। স্থানীয় কৃষক আব্দুল মতিন জানান, ফার্মের বর্জ্য ও দূষিত পানি নিষ্কাষণের কোন ড্রেন নাই। দূষিত পানি ধলাজাই খালে উপর প্রবাহিত হয়। আমাদের দু:খের কথা কেউ শুনেনা এ কারখানার দুর্গন্ধে আমরা বাড়িতে থাকতে পারছিনা অসুস্থ হয়ে মারা যাব।
একই এলাকার রহিমা খাতুন বলেন, কোম্পানির মরা মুরগী ও মুরগির বিষ্ঠার গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিষ্ঠার দুর্গন্ধে খামারের চারদিকে মানুষের বসবাস করা দায় হয়ে পড়েছে। জায়েদা খাতুন বলেন, সার তৈরিতে ব্যবহৃত পচনশীল বর্জ্য দুর্গন্ধে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় বসবাস করা তো দূরের কথা, নিশ্বাস নেওয়াই হয়ে পড়েছে দুরূহ। রাত-দুপুরের খাবারও সারতে হয় মশারির নিচে।
স্থানীয় স্কুলের অভিভাবকরা জানান, এলাকার অনেক শিশু শিক্ষার্থীরা দুর্গন্ধে ঘরে ঘুমাইতে পারেনা, খাইতেও পারে না। ঘরের পাশেই কারখানার বর্জ্য থেকে সবসময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। রোদ-বৃষ্টিতে বাতাসে গন্ধ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। দূর্গন্ধে বমি আসে, খাওয়া-দাওয়া করা যায় না। গন্ধে ঘুমাতেও কষ্ট হয়। সবচেয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন শিশু ও বৃদ্ধরা। কোম্পানীর ম্যানেজার চঞ্চল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দিতে অনিহা প্রকাশ করেন। সোমবার দুপুরে পূনরায় কোম্পানী
পরিদর্শন করেন, হবিগঞ্জের পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক মোমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, এর আগে ওসমানপুর এগ্রো লিমিটেড কারখানা সরেজমিন তদন্ত করে পরিবেশ দূষণ ও দূর্গন্ধ পাওয়ায় জরিমানা হয়েছে।