কোরআন শরিফে প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ পড়ার নির্দেশ
মাওলানা মুহাম্মদ আনসারুল্লাহ হাসান :
পবিত্র কোরআন হলো মহান আল্লাহ তাআলার বাণী ও ইসলামী শরিয়তের মূল উৎস। এটা মানুষের হেদায়াত, ধর্মীয় উপদেশ ও আসমানি শিক্ষা-দীক্ষার প্রধান ভিত্তি ও মৌলিক স্তম্ভ। মানুষের দুনিয়াবি কল্যাণ, আখিরাতের মুক্তি ও কামিয়াবির শ্রেষ্ঠ উপাদান হলো কোরআন অধ্যয়ন করা এবং কোরআনি শিক্ষা ও হেদায়াতের দ্বারা জীবনকে আলোকিত করা।
এই পবিত্র কোরআনে আল্লাহপ্রদত্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ ও তাৎপর্যপূর্ণ বিধান হলো নামাজের আদেশ। এ কথা সবাই জানে-বোঝে, ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও ইসলামী বিধান হচ্ছে নামাজ। ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের দ্বিতীয়টি হলো নামাজ পড়া। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এই নামাজের ব্যাপারে বিভিন্নভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন এবং বিচিত্ররূপে নামাজের তাগিদ করেছেন। যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে সময়মতো নামাজ পড়ার আদেশ করেছেন। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—
পবিত্র কোরআনে কোনো বিষয়ে গুরুত্বারোপের সহজ-সরল পন্থা এবং নারী-পুরুষ উভয়কে সম্বোধনের স্বাভাবিক বর্ণনাভঙ্গি হলো আদেশ করা। নামাজের প্রতি তাগিদ ও বেশি গুরুত্বারোপের জন্য এ পদ্ধতিটি পবিত্র কোরআনে অনেক ব্যবহৃত হয়েছে এবং বারবার বিভিন্নভাবে করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে কখনো কখনো একবচনের শব্দে নবী (সা.)-কে সম্বোধন করে এই নামাজের আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন, ‘তুমি সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম করো এবং ফজরের নামাজ (কায়েম করো)। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজে সমাবেশ ঘটে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৮)
সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত জোহর, আছর, মাগরিব ও এশার নামাজের কথা বলা হয়েছে। আর ফজরের নামাজকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা এর বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব নির্দেশ করে। এই নামাজের বিশেষত্বের আরেকটি দিক হলো, এ নামাজের সময় ফেরেশতাদের সমাবেশ ঘটে। যারা আল্লাহর দরবারে বান্দার নামাজের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করে।
এ প্রসঙ্গে অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তুমি নামাজ কায়েম করো দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক আমল মন্দ কর্মগুলোকে দূর করে দেয়। স্মরণকারীদের জন্য এটি একটি স্মারক।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১১৪)
এই আয়াতে বর্ণিত দিনের দুই প্রান্ত ও রাতের কিছু অংশের নামাজ হলো ফজর, জোহর, আছর, মাগরিব ও এশা।
পবিত্র কোরআনে নামাজের আদেশ করা হয়েছে কখনো বহুবচনের শব্দে। যেমন—পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৩)
একই সুরার অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমরা নামাজ কায়েম করো ও জাকাত আদায় করো এবং (স্মরণ রেখো) তোমরা যেকোনো সৎকর্ম নিজেদের কল্যাণার্থে সম্মুখে প্রেরণ করবে, আল্লাহর কাছে তা পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যেকোনো কাজ করো আল্লাহ তা দেখছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১০)
নবী (সা.)-কে সম্বোধন করে আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘ওহির মাধ্যমে তোমার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা তিলাওয়াত করো ও নামাজ কায়েম করো। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে আর আল্লাহর জিকিরই সবচেয়ে বড়। আর তোমরা যা করো, আল্লাহ তা জানেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)
লোকমান হাকিম (রহ.) তাঁর সন্তানকে নানা বিষয়ের উপদেশ দিতেন, তার সেসব উপদেশ দানের কথা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। প্রিয় সন্তানকে প্রদত্ত অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ছিল নামাজের ব্যাপারে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে বৎস, নামাজ কায়েম করো, মানুষকে সৎকাজের আদেশ করো, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার যে কষ্ট দেখা দেয়, তাতে সবর করো। নিশ্চয়ই এটা অত্যন্ত হিম্মতের কাজ।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৭)
এই আয়াতেও নামাজের আদেশ করা হয়েছে। ‘নিশ্চয় এটা অত্যন্ত হিম্মতের কাজ।’ কেউ কেউ এই আয়াতের অর্থ করেছেন, ‘এগুলো বাধ্যতামূলক বিষয়াবলির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এ বিষয় তিনটি তোমাদের প্রতি অবধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো ঐচ্ছিক ব্যাপার নয় যে পালন না করলেও চলবে। বরং এগুলো নিজের দ্বিন ও মানবিক পূর্ণতা বিধানের জন্য অবশ্য পালনীয় হুকুম।
কোরআন-হাদিসে ইসলামী বিধান বর্ণনার ক্ষেত্রে সাধারণত পুরুষদের সম্বোধন করেই আদেশ করা হয়। যাতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সেইসব বিধানের অন্তর্ভুক্ত থাকে। এতদসত্ত্বেও পবিত্র কোরআনে নারীদের সম্বোধন করে নামাজ কায়েম করা এবং জাকাত প্রদান করার আদেশ করা হয়েছে। নবীপত্নীদের বিশেষভাবে সম্বোধন করে সব নারীর উদ্দেশে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে নবী পত্নীরা, তোমরা সাধারণ কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো, তাহলে তোমরা কোমলভাবে কথা বোলো না, অন্যথায় যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে লালসায় পড়বে। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলো এবং তোমাদের ঘরে অবস্থান করো। প্রাচীন জাহিলিয়াতের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না। এবং নামাজ কায়েম ও জাকাত আদায় করো। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের উত্তমভাবে পবিত্র করতে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩২-৩৩)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আল্লাহর আদেশ তথা নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন