২৪ মে তাহিরপুরে শাহিদাবাদ বর্ডার হাটের উদ্বোধন
দৈনিকসিলেট ডটকম :
কয়েকদফা পিছিয়ে যাওয়ার পর অবশেষে আগামী ২৪ মে বাংলাদেশ সীমান্তে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শাহিদাবাদ বর্ডার হাটটি চালু হচ্ছে। উপজেলার সীমান্তের বাদাঘাট ইউনিয়নের শাহিদাবাদ ও ভারতের মেঘালয়ের নালিকাটা (গুমাঘাট ওয়েস্ট খাসিয়া হিলস) এলাকার মধ্যবর্তি স্থানে নির্মিত বর্ডারহাটটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করবে দুই দেশের দায়িত্বশীলগন। এ উপলক্ষে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।
তবে এখনও বর্ডার হাটে গিয়ে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা ক্রয় বিক্রয় করার জন্য আবেদন কারীরা পাস কার্ড পায়নি। এনিয়ে আবেদনকারীদের মধ্যে পন্য ক্রয় ও বিক্রয় করতে না পারার আশংকা বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আবেদনকারীগন জানান, শুনেছি ২৪ মে বর্ডার হাট উদ্বোধন করা হবে কিন্তু এখনও পর্যন্ত পাস কার্ড পাইনি। কবে পাব তাও জানিনা। পাস কার্ড পেলে ব্যবসা করে খেতে পারব। আমাদেরকে দ্রুত পাস কার্ড দেয়ার দাবী জানাই। এই হাট চালু হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় সম্প্রসারণ ঘটবে। ভারতীয় বিভিন্ন পন্যের চোরাচালান বন্ধ হবে।
২৪ মে বর্ডার হাট উদ্বোধনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল। তিনি জানান, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতেই সীমান্তে হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এই হাটটি দেশের অন্যান্য হাটের সাথে আরো আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। এখন আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হবে। এনিয়ে দু দেশের মধ্যে কয়েকদফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বর্ডার হাট চালু হওয়ায় দু-দেশের মধ্যে বন্ধুপূর্ন সম্পর্ক আরও গভীর হল। আর সুসম্পর্ক তৈরী হবে। ব্যবসা বানিজ্য প্রসারিত হবে।
এদিকে, এহাট চালুর লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার (১১ই মে) দুপুরে দুই দেশের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট(এডিএম)পর্যায়ে বৈঠকে আগামী ২৪শে মে সাম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। এসময় ভারতের এডিএম এল জিং কিং,মেঘালয় শিলং এর এডিএম জারার মোহন ও বাংলাদেশের পক্ষে এডিএম এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ। এছাড়াও ভারতের নিয়োজিত সহকারী হাই কমিশনার ভারতীয় দুতাবাস সিলেট নিরাজ কুমার জাসুয়াল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা, ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন, বাদাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন,বিজিবির কর্মকর্তাসহ বর্ডার হাট পরিচালনা কমিটির সদস্যগন উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ মিয়া,আবু রহমান জানান, বর্ডার হাটে কি ধরনের পণ্য সামগ্রী ক্রয় বিক্রয় হবে,ব্যবসায়ীরা কি ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবে আর সাধারন ক্রেতারাইবা কতটুকু সুবিধা ভোগ করতে পারবে এনিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে জল্পনা কল্পনা চলছে। তবে এই হাট চালু হলে আমাদের এলাকায় মানুষ উপকৃত হবে।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১লা জানুয়ারি ২০১৮সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সীমান্তে হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিন এ সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারতের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল। সীমান্তের ১২০৩/৭-এস এবং ১২০৩/৮ এর মধ্যবর্তী জিরো লাইনে উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের শাহিদাবাদ ও ভারতের মেঘালয়ের নালিকাটা(গুমাঘাট ওয়েস্ট খাসিয়া হিলস)এলাকাতে বর্ডার হাটের স্থান নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী হাট এরিয়ার দৈর্ঘ্য ৭৫ফুট ও প্রস্থ ৭৫ফুট,হাটে বাংলাদেশ অংশে ১২টি এবং ভারতের অংশেও ১২টি দোকান কোটা রয়েছে। দু দেশের উভয় প্রান্তে দুটি গেইট তেরী করা হয়েছে। হাটে উভয় দেশ মসলা,মাংস,বনজ দ্রব্য,বাঁশ,লুঙ্গি,সিরামিক সামগ্রী,প্লাস্টিক দ্রব্যদি ও ফলের রসসহ ২৫টি পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। আর সীমান্ত এলাকার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী জনগণ হাটটিতে ক্রয়-বিক্রয় অংশগ্রহণ করতে পারবে। বর্ডার হাটে ব্যবসা করতে হলে ব্যবসায়ীদের নির্দিষ্ট কার্ডধারী হতে হবে। কার্ডধারী ব্যতীত অন্য কেউ ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে না। ৫০ ইউএস ডলারের বেশী নিয়ে হাটে যাওয়া যাবে না। কবে হাট বসবে,কতক্ষণ চলবে তা উভয় দেশের হাট পরিচালনা কমিটি নির্ধারন করবে।
বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন জানান,এই হাট চালু হলে সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান বন্ধ হবার পাশাপাশি এলাকার ব্যবসায়ীরা এর সুফল পাবে।পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের ১৩টি বর্ডার হাট চালু আছে। আশা করছি অন্যান্য হাটের মতই এই হাটের কার্যক্রম চলবে। হাট হওয়ায় দুই দেশে অনুপ্রবেশ কমে যাবে। অবৈধ পাচারও রোধ হবে। দুই দেশের পণ্য হাটের মাধ্যমে আদান-প্রদান হলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। এমন হাট আরও হলে ভালো হবে। এলাকায় নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা বলেন,ইতিমধ্যেই হাটে বসার জন্য দোকান কোটা তৈরী করে চারিদিকে কাঁটাতারের বেড়ার কাজসহ অন্যান্য সকল সম্পন্ন হয়েছে।এছাড়া হাটে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য হাট এলাকার আবেদনকারীদের পাস কার্ড প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উদ্বোধনের সকল প্রস্তুতিই সম্পন্ন হয়েছে। ক্রেতাদের প্রবেশের জন্য বর্ডার হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে যাচাই বাচাই করে কার্ড বিতরণ করা হবে।