কোরআনের জন্য অর্থ ব্যয়ে অফুরন্ত সওয়াব
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা :
অর্থসম্পদ মহান আল্লাহর দান। এর উপার্জন ও ব্যয় সঠিক পদ্ধতিতে হলে এই অর্থসম্পদ মানুষের ইহকাল ও পরকালের মুক্তির মাধ্যম হতে পারে। মানুষ পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পরও অনন্তকাল পর্যন্ত তার জন্য সদকায়ে জারিয়ার মাধ্যম হতে পারে। যেসব খাতে অর্থ ব্যয় মানুষের সদকায়ে জারিয়ার পথ খুলে দেয় তার মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্র কোরআনের জন্য ব্যয় করা।
মানুষের মধ্যে কোরআনের শিক্ষা ও দাওয়াত ছড়িয়ে দেওয়ার মিশনে আত্মনিয়োগ করা। পবিত্র কোরআনের জন্য খরচ করা আখিরাতের জন্য বিনিয়োগস্বরূপ, ইখলাস থাকলে যে বিনিয়োগে লোকসানের শঙ্কা নেই। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না।’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ২৯)
প্রশ্ন জাগতে পারে, এই আয়াতে তো কোরআন তিলাওয়াতের কথা বলা হয়েছে।
কোরআনের জন্য খরচের কথা তো বলা হয়নি। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভালো কাজের দিকে ডাকবে, সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে। অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অন্যদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে, সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে।
তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৯)
এই হাদিসের আলোকে যে ব্যক্তি নিজেও কোরআন তিলাওয়াত করবে এবং মানুষের মধ্যে কোরআন তিলাওয়াতের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে কাজ করবে, অর্থ ব্যয় করবে, সেও ওই তিলাওয়াতকারীদের তিলাওয়াত ও যাবতীয় আমলের সমপরিমাণ সওয়াব পেতে থাকবে। এবং তাদের দ্বারা যত দিন, যত প্রজন্ম কোরআন শিখতে থাকবে, আমল করতে থাকবে, যিনি এর উদ্যোক্তা ছিলেন, তিনি সবার সমপরিমাণ সওয়াব পেতে থাকবেন। কারণ তিনি কোরআনের ইলম শিক্ষায় ব্যয় করে এমন ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে শত শত বছর পরও মানুষ সেই ইলম থেকে উপকৃত হবে। আর হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তিনটি আমল ছাড়া, সদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।
’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৩১)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মৃত্যুর পর কবরে থাকা অবস্থায় বান্দার সাতটি আমলের প্রতিদান অব্যাহত থাকে, (১) যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষা দেবে অথবা (২) নদী খননের ব্যবস্থা করবে অথবা (৩) কূপ খনন করবে অথবা (৪) কোনো খেজুরগাছ রোপণ করবে অথবা (৫) মসজিদ নির্মাণ করবে অথবা (৬) কোরআন (তিলাওয়াতের জন্য অথবা এর আহকাম জীবনে বাস্তবায়নের জন্য) কাউকে দান করবে অথবা (৭) এমন কোনো সন্তান রেখে যাবে, যে মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।’ (মুসনাদে বাজজার, হাদিস : ৭২৮৯; সহিহুত তারগিব, হাদিস : ৭৩)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কোরআন শিক্ষা, তিলাওয়াত করা এবং কোরআন মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করুন এবং ইখলাসের সহিত কোরআনের জন্য অর্থ ব্যয় করে দুনিয়া-আখিরাতের অফুরন্ত সফলতা অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।