সিসিক নির্বাচন: দলের ‘বর্জনের’ ভোটে প্রার্থী বিএনপি নেতারা!
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে ভোট বর্জনের ডাক দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে আরিফুল হক চৌধুরী। মেয়র পদে বিএনপির কোনো নেতা প্রার্থী না হলেও দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন অসংখ্য নেতাকর্মী।প্রার্থীদের মধ্যে সাতটি ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলররাও রয়েছেন। আছেন দলটির সাবেক কাউন্সিলরও।
তবে, দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও টানা চারবারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ছাড়া ভোটের মাঠে অন্যদের অবস্থান খুব একটা সুবিধাজনক নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বেশিরভাগই বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী বলয়ের নেতাকর্মী। দলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যাঁরা ভোটে লড়তে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তাদের অধিকাংশও আরিফপন্থী বলে পরিচিত। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলয়ের সমর্থকও আছেন বেশ কয়েকজন।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবার আগে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন ৪ নং ওয়ার্ডের টানা চারবারের কাউন্সিলর ও সাবেক প্যানেল মেয়র, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
জনপ্রিয় এই ওয়ার্ড কাউন্সিলরের এবারও ভোটে লড়ার প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু ১৮ মে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।সেই সঙ্গে তিনি আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করারও ঘোষণা দেন। কয়েস লোদী বলেন, ‘বিএনপি’র দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই সরকার ও সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে তিনি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো না।’
এর দু’দিনের মাথায় ২০ মে মেয়র পদে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেন টানা দুইবারের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। নগরের রেজিষ্ট্রারি মাঠে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনে কারচুপি নীলনকশার অংশ হিসেবে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে।একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে।এরকম অবস্থায় তিনি নির্বাচনে যেতে পারেন না। তিনি বিএনপির সিদ্ধান্তের সাথে সম্পূর্ণ একমত। এই প্রহসনের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।সমাবেশে নগরবাসীকে নির্বাচন বর্জনের আহবান জানিয়ে আরিফ বলেন, ‘এই নির্বাচন আসলে নির্বাচন নয়, এটি প্রহসন। তাই দলীয় নেতাকর্মীসহ সকল নাগরিককে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানান। বলেন, দয়া করে আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না।’
লোদী-আরিফের পথ ধরেই সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন ১৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর দিনার খান হাসু।
নাশকতার মামলায় গ্রেফতারের পর জামিনে মুক্তি পেয়েই নির্বাচনে না দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন মহানগর বিএনপির সাবেক এই যুগ্ম সম্পাদক।
দিনার খান হাসু বলেন, ‘আগামী সিসিক নির্বাচনে ১৯ নং ওয়ার্ডে আবারও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম।কিন্তু দলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালাম।’তিনি সবাইকে প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করারও আহবান জানান।
এর আগের রাতে (রোববার) প্রার্থী না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ২২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও এ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন।
তবে, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম. ১৪ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও নগর বিএনপির সাবেক সদস্য এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, সংরক্ষিত ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি নেত্রী শাহানা বেগম শানু ও সংরক্ষিত ৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর মহিলা দলের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রোকশানা বেগম শাহনাজ সাধারণ ২৫ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এছাড়াও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে মুফতি কমর উদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ডে মো. মিজানুর রহমান, ৪নং ওয়ার্ডে কামাল মিয়া ও শেখ মো. শাহেদ সিরাজ, ১০ নং ওয়ার্ডে আফতাব, ১২ নং ওয়ার্ডে আবদুল কাদির, ১৫ নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান, ১৮ নং ওয়ার্ডে সালমান চৌধুরী, ২১ নং ওয়ার্ডে আব্দুর রকিব তুহিন, ২৩নং ওয়ার্ডে মাহবুবুর রহমান মামুন, ২৬নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর সেলিম আহমদ রনি, ৩৯ নং ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন এবং সংরক্ষিত ৪ নং ওয়ার্ডে অ্যাডভোকেট জোহরা জাসমিন ও রাহেনা খানম মুক্তা, সংরক্ষিত ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর দিবারাণী, সংরক্ষিত ৮ নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর সালেহা বেগম শেপীসহ অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন।
এছাড়া জামায়াত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রাজিক মিয়া, ৭নং ওয়ার্ডে সাঈদ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ৮নং ওয়ার্ডে ফয়জুল হক, ১০নং ওয়ার্ডে আবদুল হক, ১২নং ওয়ার্ডে আবদুল কাদির, ১৬নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আবদুল মুহিত জাবেদ, ২৪ নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সোহেল আহমদ রিপন,২৭নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর আবদুল জলিল নজরুলসহ অনেকেই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
সুত্র: বাংলানিউজ