হার্ট ভালো রাখতে চান? দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন
দৈনিকসিলেটডেস্ক
আমাদের শরীর যদি একটা ছোট্ট শহর হয় তবে এই শহরের প্রধান সমাজবিরোধী হচ্ছে কোলেস্টেরল। এর সাথে কিছু সাঙ্গ পাঙ্গ আছে। তবে একেবারে ডানহাত ট্রাইগ্লিসারাইড। এদের কাজ হচ্ছে রাস্তায় রাস্তায় মাস্তানি করে রাস্তা ব্লক করা, শহরকে ব্যতিব্যস্ত রাখা। হৃৎপিন্ড হলো এই শহরের প্রাণকেন্দ্র। শহরের সব রাস্তাগুলো এসে মিশেছে প্রাণকেন্দ্রে। সমাজবিরোধীর সংখ্যা বেশি হলে কি হয় আপনারা সবাই জানেন। এরা নিত্য নতুন হাঙ্গামা বাধিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রকে অচল করে দিতে চায়।
.
আমাদের শরীর নামক শহরে কি পুলিশ নেই ? যারা মাস্তানদের ক্রসফায়ার করবে, তাদের ছত্রভঙ্গ করে জেলে ভরবে?
হ্যাঁ, আছে। তার নাম (H D L -high-density lipoprotein) এইচডিএল অর্থ াৎ উচ্চ ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন। এই ব্যক্তি পাড়ায় পাড়ায় মাস্তানী করা এসব মাস্তানদের রাস্তা থেকে তুলে এনে জেলে ভরে রাখে। জেল মানে লিভার । লিভার এইগুলোকে বাইল সল্ট বানিয়ে শহরের পয়নিষ্কাশন লাইনের মাধ্যমে শহর থেকে বের করে দেয়। কি অদ্ভুত শাস্তি মাস্তানদের!
আর একজন আছে (L D L-low-density lipoprotein) এলডিএল অর্থ াৎ কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন, তিনি আবার ক্ষমতালোভী। তিনি ক্ষমতার জোরে তাদের জেলখানা থেকে তুলে আবার রাস্তায় বসিয়ে দেন। মাস্তানদের মাতলামো তে পুরো শহরে জ্যাম লেগে যায়।
এইচ ডিএল হায় হায় করে দৌড়ে আসে। কিন্তু সে এলি ডি এল আর মাস্তানদের যৌথ শক্তির সাথে পেরে ওঠেনা। পুলিশের এইচ ডি এল সংখ্যা যত কমে মাস্তানরা ততই উল্লসিত হয়।
শহরের পরিবেশ হয়ে ওঠে অস্বাস্থ্যকর।
এমন শহর কার ভালো লাগে বলুন? আপনি মাস্তানদের কমিয়ে পুলিশ বাড়াতে চান?
তবে হাঁটুন। আপনার প্রতি কদমে পুলিশ পোস্টিং এইচ ডি এল বাড়বে, যত পুলিশ বাড়বে, ততই কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড (মাস্তানের চামচে) , এল ডিএল কমবে।
আপনার শহর (শরীর) প্রানচাঞ্চল্য ফিরে পাবে। আপনার শহরের প্রানকেন্দ্র (হার্ট) মাস্তানদের অবরোধ (হার্ট ব্লক ) থেকে বাঁচবে। আর শহরের প্রানকেন্দ্র (হার্ট) সুস্থভাবে বাঁচা মানে আপনিও সুস্থভাবে বাঁচবেন।
আপনার সার্বিক সুস্থতার জন্যেই প্রতিদিন নিয়ম করে ৩০ মিনিট থেকে একঘণ্টা হাঁটুন।
হৃদরোগীদের সুস্থতার জন্যে নিয়মিত হাঁটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
প্রথমত, আমরা জেনেছি, এইচডিএল কোলেস্টেরল আমাদের শরীরের জন্যে ভালো। প্রয়োজনের তুলনায় এটি যাদের কম, নিয়মিত হাঁটলে তাদের শরীরে এইচডিএল কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে। দ্বিতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, গবেষণায় দেখা গেছে— নিয়মিত হাঁটেন যারা, তাদের হৃৎপিণ্ডের চারপাশে কোলেটারাল সার্কুলেশন তৈরি হয়। সেটা কেমন?
আমরা অনেক সময় শুনি, কারো একটি বা কখনো দুটি করোনারি ধমনীতেই রক্ত চলাচল শতভাগ বন্ধ অর্থাৎ ১০০% ব্লকেজ। মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক—তবে তিনি বেঁচে আছেন কী করে? কারণ রক্তনালী শতভাগ বন্ধ হয়ে পড়লে তো হৃৎপিণ্ডের কোষ আর পেশিগুলো প্রয়োজনীয় রক্ত ও পুষ্টির অভাবে পুরোপুরি অকেজো হওয়ার কথা এবং রোগীর মারা যাওয়ার কথা। কিন্তু তার ক্ষেত্রে সেটি হচ্ছে না কেন?
এর অন্যতম কারণ হলো, এদের হৃৎপিণ্ডের ব্লকেজ- আক্রান্ত ধমনীর চারপাশে কিছু পরিপূরক রক্তনালী সচল হয়ে ওঠার মাধ্যমে একটি কোলেটারাল সার্কুলেশন গড়ে ওঠে।
ধমনীর চারপাশে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালী থাকে, যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন, ব্যায়াম করেন, বিশেষত যারা নিয়মিত হাঁটেন, তাদের এই রক্তনালীগুলো সচল হয়ে ওঠে এবং মূলত এই বিকল্প রক্ত সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমেই হৃৎপিণ্ডের সব অংশে প্রয়োজনীয় রক্ত পৌঁছে যায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালীর সংখ্যা কারো কারো ক্ষেত্রে ২০০-২৫০টি পর্যন্ত হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘ন্যাচারাল বাইপাস’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
আর আপনার হৃৎপিণ্ডে ন্যাচারাল বাইপাস বা কোলেটারাল সার্কুলেশন দারুণভাবে তৈরি হতে পারে জোরকদমে হাঁটার মধ্য দিয়ে। প্রতিদিন নিয়মিত অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। ডাক্তারের বারণ না থাকলে হাঁটার পাশাপাশি কিছুক্ষণ হালকা জগিং করতে পারেন। এতে ন্যাচারাল বাইপাসের সম্ভাবনা আরো ত্বরান্বিত হবে।
তৃতীয়ত, নিয়মিত হাঁটলে দেহের বাড়তি ওজন কমে। উল্লেখ্য, অতিরিক্ত ওজন করোনারি হৃদরোগের একটি অন্যতম কারণ। তাই করোনারি হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে হাঁটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
শুধু তা-ই নয়, যারা নিয়মিত হাঁটেন, তাদের বয়সজনিত স্মৃতিভ্রম রোগ আলঝেইমার্সের ঝুঁকি কমে অনেকখানি। এ-ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত হাঁটার গুরুত্ব এখন কমবেশি সবাই জানেন ।
কীভাবে হাঁটবেন? আপনার হাঁটার গতি হবে ঘণ্টায় চার মাইল। অর্থাৎ মিনিটে প্রায় ১৩০ কদম। কিন্তু প্রথমদিন হাঁটতে নেমেই এ গতিতে হাঁটতে যাবেন না; হাঁটার গতি প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ান। যদি আপনার হার্টের অবস্থা বিবেচনা করে কার্ডিওলজিস্ট ঘণ্টায় চার মাইল বেগে হাঁটার অনুমতি না দেন, তবে তিনি যেভাবে বলবেন প্রথমে সেভাবেই হাঁটুন। এরপর ধীরে ধীরে গতি বাড়ান।