সিসিক নির্বাচনে ‘ডাব-ছক্কা’ আতঙ্কে সিলেটের শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীরা
সংগ্রাম সিংহ
সিলেটে প্রতীক বরাদ্দের আগেই ভোটের মাঠ নতুন মোড় নিয়েছে। শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামনে হাজির হয়েছে আরেক নতুন আতঙ্ক। গাজীপুরের নৌকাডুবি ও অতীতের ডাব-ছক্কার ঘটনা। এতে চরম টেনশনে শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীরা। কড়া পর্যবেক্ষণে তাদের দল ও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্তরা। প্রথমে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর প্রার্থিতা নিয়ে নানা নাটকীয়তা রহস্যের সৃষ্টি করেছিল প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে। তিনি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার পর এর অবসান ঘটে। এরপরই গাজীপুরের নির্বাচনে নৌকাডুবির ঘটনা সামনে চলে আসে। এছাড়া নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি ও তাদের অনুসারীরা ভোটকে অনেকটা তামাশায় পরিণত করতে তৎপর বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কয়েক দায়িত্বশীল, সমর্থক এবং অনুসারী।
তারা জানান, বিএনপির লোকজন নির্বাচনে ভোট প্রদান থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না এমন ভোটারদের উসকে দিচ্ছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দিতে গেলেও মেয়র পদের ভোট যেন শীর্ষ প্রার্থীদের না দিয়ে অন্যদের দেন। যাতে গাজীপুরের নৌকাডুবি আর ছক্কা-ডাবের মতো একটা ফলাফল আসে। এমন তৎপরতাকে গোপন ষড়যন্ত্র-নীলনকশা বলে অভিহিত করেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর সমর্থক-অনুসারীরা। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি নেতা ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেছেন শীর্ষ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী রোববার সকালে এবং ওইদিন রাতেই জাতীয় পার্টি নজরুল ইসলাম বাবুল সাক্ষাৎ করে সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাচনে আলোচিত বাবুর্চি, ঠেলাগাড়িচালক ছয়ফুর রহমান (ছক্কা ছয়ফুর) চেয়ারম্যান পদে প্রভাবশালী নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইফতেখার হোসেন শামীমকে পরাজিত করেন। তার প্রতীক ছিল ডাব। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত আরও বেশ কয়েকটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। বই লিখেছিলেন ‘বাবুর্চি রাষ্ট্রপতি হতে চায়’। ১৯৯০ সালে তার জয়ের সেই ইতিহাস এখনও মানুষের মুখে মুখে। সেই থেকেই সিলেটে নির্বাচন এলেই ‘ডাব ডাব ছক্কা ছক্কা’ স্লোগান ওঠে।
এদিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। নির্বাচন এলেই অপপ্রচার, কিছু হবেই। আমরা সবকিছু পর্যবেক্ষণে রেখেই এগোচ্ছি। তবে নির্বাচনটা কিন্তু আওয়ামী লীগের নয়, এটা জনগণের মৌলিক অধিকার প্রয়োগের। এতে অভিমান করে কেউ পিছু হটলেও সিলেটের নির্বাচনে বিএনপির অসংখ্য প্রার্থী রয়েছেন। গুটি কয়েক নেতা দলীয় কারণে সরে থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে সমর্থন করা প্রার্থীকে বিজয়ী করতে আড়ালে থেকেও তৎপরতা চালাচ্ছেন। নির্বাচন নিয়ে তামাশা মানেই জনগণের মৌলিক অধিকার ভোট নিয়ে তামাশা বলে মন্তব্য করেন এ বর্ষীয়ান নেতা।
জাতীয় পার্টির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আব্দুস শহীদ লস্কর বশির বলেন, ভোট, নির্বাচন, মেয়র পদ, নগর ভবন এসব কোনো দলের নয়-তামাশারও নয়। তবে নির্বাচন এলেই কিছু কথা চালাচালি হয়, এবারের নির্বাচনও তার বাইরে নয়।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, যেখানেই যাচ্ছি আমরা শুধু ভোট নয়, সুষ্ঠু উৎসবমুখর ভোটের পরিবেশের জন্যও সবার সহযোগিতা কামনা করছি। নগরবাসী ভালোই জানেন, কার মাধ্যমে নগরীর উন্নয়ন আরও এগিয়ে নেওয়া যাবে। মেয়র আরিফুল হকের সঙ্গে দেখা করেছি, পরামর্শ চেয়েছি।
জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, নগরীর ভোটারদের সচেতনতা নিয়ে যাদের ধারণা নেই, যারা বোকার রাজ্যে বাস করেন তারাই বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। নগরবাসী আর যাই হোক ভোটের অপব্যবহার করবেন না। তারা জানেন, কাকে ভোট দিলে শাসক হবেন, কাকে দিলে সেবক হবেন।
মেয়র পদে এবারও প্রার্থী হয়েছেন সালাহ উদ্দিন রিমন। অতীতে ‘ভাঙারি ব্যবসায়ী’ বলে নির্বাচনি মাঠে পরিচিতি পাওয়া রিমন এবার বেশ আশাবাদী। ফোন পেয়ে উল্লসিত রিমন সিলেটি ভাষায় বললেন, ‘যার যেতা কুশি কইলাউকা, গত কদিনে জোয়ার উঠছে মাঠো। এবার মানষে আমারে ভোট দিলাইবা। যেন যাই অত আদর, অত মায়া আর কুনোদিন আর দেখছি না। চা-পান খাইন্না, উলটা আমারে খাওয়াইন। কুব সম্ভব পাবলিকে এবার গটনা ঘটাইলাইবা। এর লাগিয়ৌ এবার আমি ক্রিকেট আর ব্যাট প্রতীক চাইছি।’ রিমনের এমন উচ্ছ্বাসের আড়ালে কাজ করছে সিলেটের বহুল আলোচিত সেই ছক্কা-ডাব কাহিনি।
সিলেটের সাবেক ছাত্রনেতা ও প্রবাসী আব্দুল হানিফ কুটুও মেয়র প্রার্থী। তিনি জানালেন গাজীপুর ফলাফলের পর হঠাৎ করেই মাঠে ভোটারদের মধ্যে বিপুল সাড়া পড়েছে। এ সাড়া অব্যাহত থাকলে ভোটেই ফলাফল পক্ষেই আসবে এমন দৃঢ় বিশ্বাস আওয়ামী পরিবারের এ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর। সৌজন্যে:যুগান্তর