সিলেটে প্লাস্টিকের আগ্রাসনে অনিরাপদ খাদ্যচক্র
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
সিলেটে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার শূন্যের কোটায়। প্লাস্টিক পণ্যের আগ্রাসন বেড়েই চলেছে। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ক্ষতি হচ্ছে প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্যের। ছড়া, নালা, নদীতে প্লাস্টিক পণ্য বিশেষ করে পলিথিন অবাধে ফেলার কারণে বিষাক্ততা বয়ে চলছে মাইলের পর মাইল। সর্বনাশ ঘটছে জলজ প্রাণের। আর এর মাধ্যমে বিষ ছড়াচ্ছে খাদ্যচক্রে। অপচনশীল এসব প্লাস্টিক ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ বাড়াচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
প্রায় দুই দশক আগেই দেশে পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপরও পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যে ছড়াছড়ি সারা দেশে। বাজারে আগে যেখানে পাটের ব্যাগ নিয়ে সদাই করা হতো, সে স্থান দখল করেছে পলিথিন। ব্যবহার-বহন সহজ ও দামে সস্তা হওয়ায় এর ব্যবহার বেড়েছে। বাজার, বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে অলিগলিতে প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। ভ্রমণকারীদের প্রথম পছন্দ একবার ব্যবহার্য (ওয়ান টাইম) গ্লাস, প্লেট। ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এগুলোর গন্তব্য হয় ছড়া-খাল-নদী।
সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটে ছড়া, খাল কিংবা নদীর পার পরিষ্কারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল, বাজারের পলিথিন ব্যাগ। কোমল পানীয়ের বোতল, ওয়ান টাইম গ্লাস, প্লেট থেকে শুরু করে এমন কিছু নেই যা পাওয়া যায় না। এ ছাড়া কসমেটিকসের মোড়ক, নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যও মেলে। আর এ কারণেই বর্ষা এলেই ছড়া, খাল উপচে সিলেট নগরীজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ব্যবহারের পর এসব জিনিস বিভিন্ন জলাশয়ে ও যত্রতত্র ফেলে দেওয়ায় তা ছড়া, খাল বেয়ে গিয়ে পড়ে সুরমা নদীতে। সেখান থেকে জলজ প্রাণি তা গ্রহণ করে। আর এসব প্রাণির মাধ্যমে তা মানুষের খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে। এতে দিন দিন তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে।
সিলেটের কালিঘাট, মহাজনপট্টি, বন্দরবাজার, আম্বরখানা, রিকাবীবাজার, মদিনা মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বাজার করতে আসা অধিকাংশই পলিথিন ব্যাগে ভর্তি করে পণ্য নিয়ে ফিরছেন। নিষিদ্ধ পলিথিনে বাজার সয়লাব থাকলেও পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা যেন নির্বিকার। সবজি কিংবা মাছ-মাংস পলিথিনের ব্যাগে মুড়িয়ে আনা নেওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ালেও এ ব্যাপারে উদাসীন বেশিরভাগ মানুষ।
সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেটে মাছ কিনতে আসা সেবুল হাসান বলেন, বাজারে মাছ কেনার পর মাছওয়ালা পলিথিনের ব্যাগে মাছ দিয়ে দেয়। এটা ক্ষতিকর জেনেও বেশিরভাগ মানুষ পলিথিন ব্যবহার করে। পলিথির সস্তা ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ার কারণে মাছ-তরকারির সঙ্গে ফ্রি দেয় বিক্রেতা। আমরা ছোটবেলায় পাটের থলেতে করে মাছ কিংবা সবজি কিনতাম। বহুবার ব্যবহারযোগ্য এসব পাটজাত ব্যাগ পলিথিনের আগ্রাসনে হারিয়ে গেছে।
সিলেট নগরীর যত্রতত্র গড়ে ওঠা চায়ের দোকানগুলোতে ওয়ান টাইম গ্লাসে চা বিক্রি হয়ে থাকে। চা পান শেষে অধিকাংশ প্লাস্টিকের গ্লাসের ঠাঁই হয় নগরীর ছড়া, ড্রেনে। এ ছাড়া কোমল পানীয়ের বোতল, চিপসের প্যাকেটও ঠাঁই পায় ছড়া কিংবা ড্রেনে। আর তা গিয়ে পড়ে সুরমা নদীতে। পাশাপাশি সুরমা নদীর তীরবর্তী অন্তত ২৫টি বৃহৎ বাজারের অচনশীল বর্জ্যও গিয়ে পড়ে সুরমা নদীতে। এসব বর্জ্য নদীর পানির মাধ্যমে জলজ প্রাণে প্রবেশ করে। আর তা ঢুকে যাচ্ছে মানুষের খাদ্যচক্রে।
সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের প্রধান নির্বাহী আবদুল হাই আল হাদী বলেন, প্লাস্টিক, পলিথিন নদীর পানি দূষণ করে। এতে জলজ প্রাণি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার প্রভাব আমাদের খাদ্যচক্রে সরাসরি পড়ে। অপচনশীল দ্রব্যের ব্যবহার না কমালে আমাদের জন্য রোগব্যাধিসহ বিভিন্ন জটিলতা অপেক্ষা করছে। সিলেটে পাটজাত ব্যাগের ব্যবহার একেবারেই নেই। পাঠপণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, পলিথিনের ব্যবহার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। এগুলো ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ। পলিথিনের ব্যবহার কমাতে হবে।
পরিবেশ অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক এমরান হোসেন বলেন, আমরা নিয়মিত পলিথিনবিরোধী অভিযান চালাই। পলিথিনের ব্যবহার নিয়ে আমাদের বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়াতে পারলে পলিথিনের ব্যবহার কমে আসবে।