নিউইয়র্কে প্রকাশ্যে এক বাংলাদেশিকে আরেক বাংলাদেশির গুলি
তোফাজ্জল লিটন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে :
নিউইয়র্কে প্রকাশ্যে এক বাংলাদেশি আরেক বাংলাদেশিকে গুলিবিদ্ধ করেছে। শনিবার (৩ জুন) দুপুরে সিটির এস্টোরিয়া এলাকায় ঘটনা ঘটে। বৈশাখী রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ ফুয়াদ গুলিবিদ্ধ হলে পুলিশে কল করে আতঙ্কিত জনতা।
সঙ্গে সঙ্গে এলমার্স্ট হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসা দেওয়া হয় ফুয়াদকে। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ১১৪ নম্বর প্রিসেন্টের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
৩৬ এভিনিউর ২৯ স্ট্রিটে অবস্থিত বাঙালি মালিকানাধীন বৈশাখী রেস্টুরেন্টের কর্ণধার আবু তাহের জানিয়েছেন, দুপুরে লাল হুডি এবং মাস্ক পরে বাঙালি আদলের একজন তরুণ আমাদের ম্যানেজারকে টার্গেট করে গুলি করতে থাকেন। তার গায়ে গুলি লেগেছে নিশ্চিত হওয়ার পর দোকান ত্যাগ করে। ফুয়াদের হিপে গুলি লাগে। গুলির শব্দে কাস্টমাররা ৯১১ মানে কল করে। পুলিশ এসে তদন্তের স্বার্থে সকাল পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখে। রেস্টুরেন্টের নিরাপত্তা ক্যামেরায় এই দৃশ্য দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাংলাদেশি বলেন, আমাদের দোকানের পাশের নোবেল গ্রোসারি শপের একজনের সঙ্গে আমাদের ম্যানেজারের ব্যক্তিগত ঝামেলা আছে। এর সঙ্গে আমাদের কোনো যোগসূত্র নেই।
তিনি বলেন, গত বুধবারে বাঙালি এক তরুণের নেতৃত্বে ম্যাক্সিকান, তুর্কি, আফ্রিকানসহ আরও কয়েকজন দোকানে এসে হুমকি দিলে ফুয়াদসহ আরও কয়জন মিলে তাদের তাড়িয়ে দেয়। তারই সূত্র ধরে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে হয়।
লেখক ও মানবাধিকারকর্মী রহমান মাহবুব বৈশাখী রেস্টুরেন্টের একজন নিয়মিত ক্রেতা। শনিবার সন্ধ্যায় রেস্টুরেন্ট বন্ধ দেখে বিস্তারিত খোঁজ খবর করেন তিনি। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, গতকালের এস্টোরিয়ার গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে যে দুটি গ্যাং গ্রুপের মধ্যে, এ দুটি গ্রুপেই বাঙালি তরুণরা ছিল। এটা দেখে একটু বিস্মিতই হয়েছি।
তিনি জানান, নিউইয়র্কের নানা নেইবারহুডে স্থানীয় গ্যাং ভায়োলেন্সও বাঙালি ছেলেরা সংঘটিত করছে। বিষয়টা এখন উদ্বেগের বলে মনে হচ্ছে। নিউইয়র্কে বেড়ে ওঠা বাঙালির সন্তানরা অনেক আগে থেকেই এখানকার মূলধারার সাথেই মিলেমিশেই বড় হচ্ছে। সেটা যেমন ইতিবাচক, আবার এর উল্টো পীঠও আছে। অনেক ক্ষেত্রে গ্যাং অ্যাক্টিভিটির সাথে জড়িয়ে পড়তেও দেখা গেছে নিউইয়র্কের বাঙালি ছেলেদের।
সাব্বির আহমেদ ফুয়াদের এক বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেন, দেড় বছর আগে পার্শ্ববর্তী নোবেল গ্রোসারের মালিকের কন্যা এবং ভাতিজির সঙ্গে টিকটকের মাধ্যমে পরিচয় হয় আমাদের এক বন্ধু টাইসির টিপুর সঙ্গে। টিপু এবং দুই মেয়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতার দিকে গড়ালে তাদের ভাই এবং চাচাতো ভাই বিষয়টি জেনে যায়। তারা অনেকদিন ধরে টিপুকে খুঁজছিল। সেই সূত্রে বন্ধু ফুয়াদকে চাপ দেয় টিপুর অবস্থান জানানোর জন্য। সেই থেকে তাদের মধ্যে ব্যাপক বৈরী সম্পর্ক এবং আজকের এই পরিণতি।