যেসব আমলে হজের সওয়াব!
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
হজ মুমিনের ভালোবাসা ও স্বপ্নময় ভুবন। মুমিন জীবনজুড়ে স্বপ্ন দেখে বায়তুল্লাহর হজ ও জিয়ারতে মদিনার। মুমিন সারাটি জীবন ধরে কাবা, মাতাফ, তালবিয়া, মাকামে ইবরাহিম, হজরে আসওয়াদ, সাফা মারওয়া ও মসজিদে হারামের সম্মোহনে আবেগাপ্লত হয়ে থাকে এবং নবীজি (সা.)-এর রওজার শীতল শিশির, সাহাবাগণের স্মৃতিবিজড়িত মদিনার অলিগলি এবং হিজাজের প্রতিটি ধূলিকণার ছোঁয়া পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে।
তাই দেখা যায়, সামর্থ্যবানরা ব্যয়বহুল যাত্রা হওয়া সত্ত্বেও বারবার ছুটে যান মক্কা মদিনার পথে। আর সামর্থ্য যাদেরকে সঙ্গ দেয়নি তারা প্রভুর দরবারে হাত তুললে হজের তওফিক দানের প্রার্থনা করেন। এই স্বপ্ন, এই ভালোবাসা, এই ব্যাকুলতা ও প্রেরণা মুমিনের ঈমান, ঈমানের আবহ এবং রবের প্রতি ভালোবাসা ও ভালোবাসার উন্মাদনা। জান্নাতের আশা। বিরাট নেকি লাভের প্রত্যাশা। তবে সামর্থ্য যাদের সঙ্গ দেয়নি দয়াবান আল্লাহ তাদের হতাশ করেনি। হজ না করেও তারা যেন পায় হজের সাওয়াব সে জন্য রকমারি আমল বাতলে শান্ত করেছেন তাদের ব্যাকুল হৃদয়-মন।
জামাতে নামাজ আদায়: প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। পুরুষেরা মসজিদে জামাতের সঙ্গে ও নারীরা ঘরে আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়বেন। আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করল সে যেন হজ করে এলো। আর যে ব্যক্তি নফল নামাজ আদায় করতে মসজিদে গমন করল সে যেন ওমরাহ করে এলো।’ (তাবারানি : ৭৫৭৮)
মসজিদে ইলমের চর্চা : মানুষের বিশ^াস ও কর্ম আবর্তিত হয় জ্ঞানের মাধ্যমে। তাই ইসলামে জ্ঞানচর্চাকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমনকি মসজিদে ইলম চর্চায় মিলতে পারে হজের সওয়াব। আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গেল কোনো ভালো কথা শেখা বা শেখানোর জন্য, সে পরিপূর্ণরূপে হজ আদায়কারী একজন ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (তাবারানি : ৭৪৭৩; মাজমাউয যাওয়াইদ : ৪৯৯)
ফজরের পর ইশরাকের নামাজ: মুসলমানদের দিনের শুরু হয় ফজরের নামাজের মাধ্যমে। ফজরের পর যখন সূর্য ওঠে, তখনও আরও দুই রাকাত নামাজ পড়ার প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে হাদিসে। এতে মিরবে পরিপূর্ণ হজ ও ওমরাহর সওয়াব। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করে, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, সে ব্যক্তি হজ ও ওমরাহর সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি : ৫৮৬)
মা-বাবার সেবা ও সদ্ব্যবহার: হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি জিহাদে অংশগ্রহণ করতে চাই কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই। রাসুল (সা.) প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার মাতা-পিতার কেউ কি জীবিত আছেন?’ লোকটি বললেন, ‘আমার মা জীবিত।’ উত্তরে রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাহলে মায়ের সেবা করে আল্লাহর কাছে জিহাদে যেতে না পারার অপারগতা বা ওজর পেশ করো। এভাবে যদি করতে পারো এবং তোমার মা সন্তুষ্ট থাকেন তবে তুমি হজ, ওমরাহ এবং জিহাদের সওয়াব পেয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং মায়ের সেবা করো।’ (মাজমাউয যাওয়াইদ : ১৩৩৯৯)
রমজানে ওমরাহ পালন: সারা বছরই ওমরাহ পালন করা যায়। তবে রমজানে ওমরাহ পালন করলে লাভ হয় হজের সওয়াব। আরও আনন্দের বিষয় হচ্ছে, খোদ নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে হজ পালনের সওয়াব পাওয়া যাবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানে ওমরাহ পালন করলে আমার সঙ্গে হজ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।’ (বুখারি : ১৭৮২)
নামাজের পর আল্লাহর জিকির : হাদিসে বিবৃত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার কয়েকজন দরিদ্র লোক রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, সম্পদশালী ব্যক্তিরা বেশি সওয়াব এবং জান্নাত নিয়ে যাচ্ছে। আমরা যেমন নামাজ পড়ি, তারাও পড়ে। আমরা যেমন রোজা রাখি, তারাও রাখে। উপরন্তু তাদের রয়েছে অতিরিক্ত সম্পদ, ফলে তারা হজ করতে পারে, ওমরাহ করতে পারে, জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সদকাও দিতে পারে।’ রাসুল (সা.) তাদের বললেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন একটি আমল শিখিয়ে দেব না, যা করতে পারলে তোমরা অগ্রগামীদের স্তরে পৌঁছে যাবে এবং যারা তোমাদের পেছনে তারা তোমাদের স্তরে পৌঁছতে পারবে না, তোমরা হবে শ্রেষ্ঠতম মানব, তবে অন্য কেউ এটি করলে সেও তোমাদের মতো হয়ে যাবে? আমলটি হলো, প্রত্যেক নামাজের পর ৩৩ বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার পাঠ করবে।’ (বুখারি : ৮০৭)
মসজিদে কুবায় নামাজ আদায় : মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পথে যে মসজিদে নামাজ আদায় করেছিলেন এবং যে মহল্লায় অবস্থান করেছিলেন, সেটা কুবা মহল্লা। এখানেই ইসলামের ইতিহাসে প্রথম মসজিদ নির্মিত হয়। এই মসজিদে নামাজ আদায় করলেও মিলবে হজের সওয়াব। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজ ঘরে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর মসজিদে কুবায় এসে কোনো নামাজ আদায় করল, সে ওমরাহর সওয়াব হাসিল করল’ (ইবনে মাজা : ১৪১২)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের আমল করার তওফিক দান করুন।