গ্রীষ্মকালীন ফল খাওয়ায় সাবধানতা
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে ফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ঋতুতে যে ফল পাওয়া যায়, সে অনুযায়ী ঋতু ভেধে সে ফলগুলো কিন্তু আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।
* আম
গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ফল আম। পুষ্টিতে, স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় বলে আমকে ফলের রাজা বলা হয়। ফল হিসাবে খাওয়ার পাশাপাশি আম থেকে চাটনি, আচার, আমসত্ত্ব, মোরব্বা, জ্যাম, জেলি ও জুস তৈরি হয়। কাঁচা আম গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে প্রিয় ফলগুলোর মধ্যে একটি। এগুলোতে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যার সঙ্গে অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে। কাঁচা আম বা সবুজ আম হল অপরিপক্ব আম,যা দৃঢ় এবং টক স্বাদের হয়। পাকা আমের বা কাঁচা আমের শরবতে পটাসিয়াম থাকায় প্রচুর গরমেও শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
* সতর্কতা
▶ অতিরিক্ত পরিমাণে আম খেলে গলা বসে যেতে পারে। হজমে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়, এমন কি পাতলা পায়খানা হতে পারে।
▶ প্রতিদিন বেশি পরিমাণে খেলে ওজন বেশি বেড়ে যেতে পারে। বেশি কচি বা ছোট আম খেলে আমাশয় হয়।
▶ কিডনি রোগ হলে আম খাওয়া নিয়ে সচেতন হতে হবে। পুষ্টিবিদ বা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আম খাবেন না।
▶ অতিরিক্ত পরিমাণে আম খেলে অ্যাসিডিটি বা হজমে সমস্যা থাকলে আম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
▶ অন্য ফলের তুলনায় আমে বেশি চিনি রয়েছে, তাই পরিমিতভাবে আম উপভোগ করার কথা বিবেচনা করুন।
▶ অত্যধিক পরিমাণে কাঁচা আম খেলে পেটে ব্যথা এবং ক্র্যাম্পিং, বদহজম, ডায়রিয়া এবং আমাশয়ের পাশাপাশি গলা চুলকানিসহ হজমের সমস্যা হতে পারে।
* কাঁঠাল
জাতীয় ফল কাঁঠাল। এ ফলটির বীচিসহ সব অংশই ভক্ষণশিল। কাঁচা বা পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান।
* কাঁঠাল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ
▶ অতিমাত্রায় খেলে হজমে সমস্যা তৈরি হয়।
▶ বেশি খেলে গ্যাস হতে পারে।
▶ প্রায়ই বা প্রতিদিন বেশি পরিমাণে খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
* লিচু
মিষ্টি, রসালো স্বাদের ফলটি শিশু থেকে বয়স্ক সবাই পছন্দ করে। গ্রীষ্মকালীন এ রসালো ফল শুধু স্বাদই ভরপুর নয়, পুষ্টিগুণও আছে যথেষ্ট পরিমাণ। মিষ্টি ও পুষ্টিকর হওয়ার পাশাপাশি গ্রীষ্মের কঠোর তাপ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মানব শরীরের তাপমাত্রায় শীতল প্রভাব বৃদ্ধি করে। পুষ্টিগুণের দিক থেকে এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’। ক্যালসিয়াম দরকার হয় হাড়, দাঁত, চুল, ত্বক, নখ ভালো রাখতে।
* লিচু খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতাঃ
▶ পরিমাণে বেশি লিচু খেলে ওজন বেশ বৃদ্ধি পায়।
▶ মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। লক্ষণ হিসাবে শ্বাসকষ্ট হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, মাথা ঘোরানো, বমি ভাব ইত্যাদি হতে পারে।
▶ খাওয়ার পর ও ঘুমানোর আগে লিচু খাওয়া উচিত নয়। কারণ, এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
▶ কারও কারও লিচুতে অ্যালার্জি হয়, এমন ব্যক্তিদের ফলটি না খাওয়াই ভালো।
▶ লিচুতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিড নেই। ফলে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে তা শরীরের স্বাভাবিক ব্যালেন্স নষ্ট করে।
▶ খালি পেটে লিচু খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে।
▶ বেশি পরিমাণে লিচু খেলে কণ্ঠস্বর নষ্ট বা গলা ভেঙে যেতে পারে।
* জাম
গরমে জামের ভর্তা খাওয়ার চাহিদাও থাকে বেশ। দামে সস্তা ও সহজলভ্য এই দেশি ফলটি ছোট এবং বড় উভয়ই খেতে পছন্দ করেন।
▶ খালি পেটে জাম খেলে অ্যাসিডিটি হতে পারে।
▶ জাম খাওয়ার আগে ও পরে প্রায় ষংমফ ঘণ্টা দুধ খাবেন না।
▶ ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই জাম অল্প পরিমাণে খাবেন।
আমাদের দেশে প্রায় ৭০ রকমের ফল জন্মে। দেশি ফলগুলো রঙে, রসে, স্বাদে অনন্য। শুধু খাদ্য হিসাবেই নয় দেশীয় ফলগুলোর রয়েছে বৈচিত্র্যময় ব্যবহার। মানব জাতির সৃষ্টি ও বিকাশের সঙ্গে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। আদিমকালে মানুষকে ফলমুল আহরণ ও ভক্ষণ করেই বাঁচতে হয়েছে। প্রকৃতিতে যত রকম খাদ্যদ্রব্য উৎপাদিত হয় তার মধ্যে ফল বেশি পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু । এর মধ্যে রয়েছে মানব দেহের প্রয়োজনীয়তা সহ গুরুত্বপূর্ণ সব পুষ্টি উপাদান। সুস্থ, সবল জাতি গঠনে দেশিয় ফলের গুরুত্ব অপরিসীম।