নানির শেখানো কৌশলে জঙ্গলে ৪০ দিন বেঁচে ছিল ৪ শিশু
আন্তর্জতিক ডেস্ক ::
কলম্বিয়ায় আমাজন জঙ্গলের গভীরে গত ১ মে বিধ্বস্ত হয়েছিল একটি বিমান। দুর্ঘটনায় বিমানের পাইলটসহ প্রাপ্তবয়স্ক তিনজন মারা গেলেও নিখোঁজ ছিল চার শিশু। সবার মনে আশা ছিল বেঁচে আছে তারা।
অবশেষে পুরো জঙ্গল তল্লাশি চালিয়ে ৪০ দিন পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে সেই চার শিশুকে। এ ঘটনাকে ‘অলৌকিক’ বলছেন অনেকেই। অনেকের মনে প্রশ্ন, আমাজনের মতো জঙ্গলে এত দিন কীভাবে বেঁচে ছিল এই চার শিশু?
নিউইয়র্ক পোস্ট এবং এপিতে উঠে এসেছে দুর্ভেদ্য আমাজন জঙ্গলে এই চার শিশুর ৪০ দিন কাটানোর বিস্তারিত।
কলম্বিয়ান কর্তৃপক্ষের বরাতে নিউইয়র্ক পোস্ট জানায়, গভীর জঙ্গলে টানা ৪০ দিন থাকার পরও এই চার শিশু বেঁচে ছিল ওদের নানির কল্যাণে। ওদের নানি খুব ছোটবেলা থেকেই গভীর জঙ্গলে মাছ ধরা ও শিকার করা শিখিয়ে ছিলেন ১৩ বছরের শিশুটিকে। সাধারণত হুইতোত নামক ক্ষুদ্র এই গোষ্ঠী জঙ্গলে টিকে থাকার কৌশল ছোটবেলা থেকেই রপ্ত করে নেয় বলে জানায় গণমাধ্যমগুলো।
এ ছাড়া কীভাবে প্রকৃতি থেকে খাবার সংগ্রহ করতে হয় সেই উপায়ও শেখানো হয়েছিল তাদের। দুর্ঘটনার পর রপ্ত করা এসব কৌশলই চার শিশুকে আমাজনের গভীরে বেঁচে থাকার জন্য খাবার সংগ্রহে সহায়তা করেছে।
এদিকে মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপি বলছে, শিশুদের চাচা ফিদেনসিও ভ্যালেন্সিয়া জানান, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর শিশুরা বিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে ফারিনা বের করে সাথে নিয়েছিলো। ফারিনা হল একটি কাসাভা ময়দা যা আমাজন অঞ্চলের লোকেরা খায়। ফারিনা শেষ হয়ে গেলে তারা জঙ্গলে ফলমূল ও বীজ খেতে শুরু করে।”
কলম্বিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের প্রধান অ্যাস্ট্রিড ক্যাসেরেস বলেন, ” সময়টা বাচ্চাদের অনুকূলে ছিল। কারণ এই সময়টা জঙ্গলে শস্য ও ফলমূল উৎপাদনের সময়। তাই বাচ্চারা ফলমূল খেয়ে বেঁচেছিল।
উদ্ধার করা ১৩, ৯, ৪ বছর এবং ১২ মাস বয়সী চার শিশু বর্তমানে কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। কমপক্ষে দুই সপ্তাহ তাদের চিকিৎসা নিতে হবে বলে জানিয়েছে চিকিৎসকরা।
শিশুরা এখনো দুর্বল জানিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইভান ভেলাসকুয়েজ বলেন, শিশুদের রিহাইড্রেট করা হচ্ছে তবে তারা এখনও খাবার খেতে পারছে না।
এদিকে উদ্ধার তৎপরতার দায়িত্বে থাকা জেনারেল পেদ্রো সানচেজ জানান, দুর্ঘটনাস্থল থেকে ৫ কিলোমিটার (৩ মাইল) দূরে একটি ছোট পরিস্কার জঙ্গলে শিশুদের পাওয়া যায়। উদ্ধারের সময় তারা খুবই দুর্বল অবস্থায় ছিলো।
কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো এই চার শিশুদের ‘বেঁচে থাকার উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে তাদের এই যাত্রা ‘ইতিহাসে থাকবে।’