হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু
সৌদিতে সমবেত ১৬০ দেশের ২০ লক্ষাধিক মুসলমান
শাহেদ চৌধুরী মিনা, সৌদি আরব থেকে :
ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূতির মধ্য দিয়ে ইসলাম ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। সৌদি আরবে তাঁবুর শহর হিসেবে খ্যাত মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে আজ রোববার থেকে হজ পালনের পাঁচ দিনব্যাপী এই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
বাংলাদেশসহ ১৬০টি দেশের ২০ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিচ্ছেন। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান প্রতিটি মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য সারাজীবনে অন্তত একবার হজ পালন করা ফরজ, অর্থাৎ অবশ্যই পালনীয়।
হজ পালনের উদ্দেশে হজযাত্রীরা আগামী ১২ জিলহজ পর্যন্ত (সৌদি আরবে সময় অনুযায়ী) পর্যায়ক্রমে মিনা, আরাফাত ময়দান, মুজদালিফা, মিনা ও মক্কায় অবস্থান করবেন। তাঁদের মুখে উচ্চারিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ ধ্বনি। অর্থাৎ ‘আমি উপস্থিত হয়েছি হে আল্লাহ। আমি উপস্থিত হয়েছি তোমার সমীপে। তোমার কোনো শরিক নেই। পুনরায় আমি উপস্থিত হয়েছি। নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও সকল নিয়ামত শুধু তোমারই জন্য। সব সাম্রাজ্যও তোমার এবং তোমার কোনো শরিক নেই।’
পবিত্র হজ পালনের প্রথম আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে হজযাত্রীরা সোমবার সারাদিন মক্কার মসজিদুল হারাম (কাবা শরীফ) থেকে পূর্ব দিকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে দু’দিকে পাহাড় পরিবেষ্টিত এলাকা মিনায় অবস্থান করবেন। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় জিকিরে মশগুল থাকবেন। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নামে গুঞ্জরিত হবে পুরো মিনা এলাকা। হজযাত্রীরা সেখানে যার যার তাঁবুতে (সুউচ্চ ফায়ার প্রুফ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) অবস্থান করে সোমবার জোহর থেকে মঙ্গলবার ফজরসহ মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করার পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। তাঁদের কেউ কেউ সোমবার মিনায় এসে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন। এদিন রাতে মিনায় অবস্থান করা সুন্নত।
মক্কা থেকে মিনায়
মিনায় আসার আগে রোববার পবিত্র নগরী মক্কায় জোহরের নামাজ আদায় করেছেন হজযাত্রীদের অনেকে। এরপর তাঁরা পবিত্র নগরী মক্কায় কাবা শরীফ তাওয়াফ করেছেন। তাওয়াফ করার পর হজযাত্রীরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে মিনায় জড়ো হতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে পুরুষরা হজের প্রথম রুকন ইহরাম (শরীরের নিচের অংশে আড়াই হাত বহরের আড়াই গজের এক টুকরা কাপড় আর গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য একই বহরের তিন গজের এক টুকরা সাদা রংয়ের সেলাইবিহীন কাপড়) পরিধান করেছিলেন। নারীরা ছিলেন পর্দায় আচ্ছাদিত। তাঁরা ইহরামের নিয়তে দুই রাকাত নামাজ আদায়ের পর মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চেয়ে অঝোরে কান্নাকাটি করেন। সারাক্ষণ জিকিরে মশগুল ছিলেন।
মিনা থেকে আরাফাত ময়দানে
মঙ্গলবার (৯ জিলহজ, সৌদি সময়) পবিত্র হজ। পাঁচ দিনব্যাপী হজের এটাই প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। পবিত্র হজ পালনের জন্য সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিতে সৌদি আরবে আসা মুসলমানরা হজের দ্বিতীয় রুকন আদায়ের জন্য ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই ময়দানের চারদিকে হলুদ বোর্ড দিয়ে চিহ্নিত এলাকার ভেতরে অবস্থান করবেন সারা বিশ্ব থেকে আসা লাখ লাখ মুসলমান। এখানেই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে। এ নিয়ে মিনায় সমবেত হজযাত্রীদের মধ্যে এক ধরণের ধর্মীয় আবেগ ও অনুভূতি তৈরি হয়েছে। তাঁরা আরাফাতের ময়দানে আসার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন।
আরাফাত ময়দান হলো বিদায় হজের স্মৃতিবিজড়িত এলাকা। মঙ্গলবার এই ময়দান প্রকম্পিত হবে লাখ লাখ হজযাত্রীর প্রায় সার্বক্ষণিক জিকিরে। তাঁদের তালবিয়া অর্থাৎ ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক… লা শারিকা লাক’ ধ্বনিতে গোটা আরাফাত ময়দান প্রকম্পিত হবে।
১৪০০ বছরের বেশি সময় আগে এই আরাফাত ময়দানেই বিদায় হজের খুতবা দিয়েছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)। এ কারণে আরাফাত ময়দানে উপস্থিত না হলে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। তাই ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে আসার পর যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন, তাঁদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে আনার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। কেউ কেউ হুইল চেয়ারে করে এই ময়দানে আসেন।
ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানের তিন দিকে রয়েছে জাবাল বা পাহাড়। এই পাহাড়ের নাম রহমতের পাহাড় (জাবালে রহমত)। এই পাহাড়টি দোয়া কবুলের স্থান। এ কারণে কোনো কোনো হজযাত্রী জাবালে রহমত পাহাড়ে উঠেও ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। তবে কোনো কোনো হজযাত্রী আরাফাত ময়দানে যার যার মতো সুবিধাজনক জায়গা বেছে নিয়ে ইবাদত বন্দেগী করবেন। প্রায় দুই মাইল দৈর্ঘ্য এবং দুই মাইল প্রস্থের অর্থাৎ প্রায় চার বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিরাট ও বিশাল আরাফাত ময়দানে একটি উঁচু পিলার রয়েছে। এই পিলারটিও দোয়া কবুলের স্থান। এখানেই আদি পিতা প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) এবং আদি মাতা হাওয়া (আ.) আরাফাতের ময়দানে এসে পুনর্মিলনের সুযোগ পেয়েছিলেন। এ জন্য তাঁরা এই ময়দানেই মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন।
আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরা থেকে জোহরের নামাজের আগে মিম্বরে দাঁড়িয়ে আরবি ভাষায় হজের খুতবা পাঠ করা হবে। এবার খুতবা দেবেন শায়খ ড. ইউসুফ বিন মোহাম্মদ । তিনি নামাজের ইমামতিও করবেন। হজের খুতবা বাংলাসহ প্রায় ১৪টি ভাষায় অনুবাদ করে শুনানোর প্রস্তুতি রয়েছে। এই খুতবা বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। হজযাত্রীরা হজের খুতবা শুনবেন।
পবিত্র হজের খুতবার পর মসজিদে নামিরায় সমবেত মুসলমানরা এক আজান এবং দুই ইকামতে জোহর ও আছরের নামাজ এক সঙ্গে জামাতে আদায় করবেন। কারোর অবস্থান মসজিদে নামিরা থেকে দূরে থাকলে তিনি নিজের তাঁবুতে জোহর এবং আছরের নামাজ আলাদাভাবে আদায় করবেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের পর কিছু সময় পর্যন্ত হজযাত্রীরা আরাফাতের ময়দানেই অবস্থান করবেন। সূর্যাস্তের পর কিছু সময় পর্যন্ত এই ময়দানে অবস্থান করাটা ওয়াজিব।
মুজদালিফায় এশার নামাজ আদায়ের পর হজযাত্রীরা খোলা আকাশের নীচে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে রাত যাপন করেন।
আরাফাত ময়দান থেকে মুজদালিফায়
৯ জিলহজ ( সৌদি আরবে মঙ্গলবার) সূর্য অস্ত যাওয়ার কিছু সময় পরে মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই আরাফাত ময়দান থেকে হজযাত্রীরা প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা দেবেন। মুজদালিফায় গিয়ে এশার নামাজের সময় এক সঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায়ের পর তাঁরা সেখানেই খোলা আকাশের নীচে বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে রাত যাপন করবেন। রাতে প্রতীকী শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপের জন্য সেখান থেকে ৭০টি পাথর সংগ্রহ করবেন। সুবহে সাদিক পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করাটা সুন্নতে মুআক্কাদাহ।
এদিন ভোরে ফজরের নামাজ আদায়ের পর রেওয়াজ অনুযায়ী, প্রতি বছরের মতো কাবা শরীফ আচ্ছাদিত করা হবে নতুন গিলাফে। হজযাত্রীরা আরাফাত ময়দান থেকে মক্কায় ফিরে এসে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন রেশম দিয়ে তৈরি কালো রংয়ের মজবুত রেশমি কাপড়ের বুননে গড়া নতুন গিলাফে আচ্ছাদিত কাবা শরীফ দেখতে পাবেন। পরস্পর সেলাইযুক্ত পাঁচ টুকরা গিলাফের চারটি টুকরা কাবা ঘরের চারদিকে এবং একটি টুকরা দরজায় লাগানো হবে। ৪৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্তের কাবা ঘরের দরজা একটি।
মুজদালিফা থেকে মিনায়
১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায়ের পর সূর্যোদয়ের আগে কিছু সময় অবশ্যই মুজদালিফায় অবস্থান করবেন হজযাত্রীরা। এরপর তাঁরা ট্রেনে, গাড়িতে অথবা পায়ে হেঁটে মুজদালিফা থেকে মিনায় যাবেন। সেখানে মিনার জামারায় (শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোঁড়ার স্থান) বড় শয়তানের উদ্দেশে প্রতীকী সাতটি পাথর নিক্ষেপ শেষে পশু কোরবানি এবং রাসুলুল্লাহর (সা.) আদর্শ অনুসরণে পুরুষরা মাথা মুণ্ডন ও গোসল করবেন। নারীরা চুলের অগ্রভাগ থেকে প্রায় এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল কাটবেন। এরপর হাজীরা সেলাইবিহীন ইহরাম খুলে ফিরবেন স্বাভাবিক পোশাকে।
১০ জিলহজ বুধবার সৌদি আরবে পবিত্র ঈদুল আজহা। হাজীদের কেউ কেউ নিজে কিংবা বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে মুস্তাহালাকায় (কোরবানির পশুর হাট ও জবাই করার জায়গা) গিয়ে কোরবানি দেন। কেউ কেউ কোরবানি দেন সৌদি আরব সরকারের বেঁধে দেওয়া ৮১০ সৌদি রিয়াল ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকে জমা দিয়ে।
হজের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ রুকন আদায়ের জন্য মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে সুবহে সাদিকের পর থেকে কাবা শরীফ তাওয়াফ কররেন হাজিরা।
মিনা থেকে মক্কায়
পশু কোরবানি দেওয়ার পর হাজীরা স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করে হজের তৃতীয় অর্থাৎ শেষ রুকন আদায়ের জন্য মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে সুবহে সাদিকের পর থেকে কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন। কাবা শরীফের সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাতবার ‘সাঈ’ (দৌড়ানো) করবেন। এই জায়গায় হজরত হাজেরা (রা.) পানির জন্য দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার ফিরে যাবেন মিনায়, নিজেদের তাঁবুতে।
হাজীরা ১১ জিলহজ আবার মিনার জামারায় গিয়ে জোহরের নামাজের পর থেকে পর্যায়ক্রমে ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে সাতটি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। একইভাবে ১২ জিলহজ আবারও ছোট, মধ্যম ও বড় শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপের পর সন্ধ্যার আগে তাঁরা মিনা ত্যাগ করবেন। ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময়ে কাবা শরীফকে ফরজ তাওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। অবশ্য মক্কা ত্যাগ করার আগে হাজীরা কাবা শরীফকে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন। এটা ওয়াজিব।
মিনায় আসার আগে প্রতিদিনই কাবা শরীফে ছিল উপচেপড়া ভিড়। বিশেষ করে প্রতি ওয়াক্ত নামাজের আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হজযাত্রীদের সঙ্গে বাংলাদেশি হজযাত্রীরাও দল বেঁধে কাবা শরীফের উদ্দেশে রওয়ানা হতেন। এ সময় নামাজ আদায়ের জন্য কাবা শরীফের আশপাশের প্রতিটি সড়কে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ঢল নামত। লাখো মুসলমান নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য প্রকাশ করতো। সবার মুখে উচ্চারিত হতো মহান আল্লাহর বানী। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য।
অবশ্য অনেক সময় হাঁটতে থাকা মুসলমানদের অনেকেই রোদের তীব্রতায় ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। তাঁদের পিপাসা মেটাতে সৌদি আরবে বসবাসরত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আশপাশের সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে বিনামূল্যে পবিত্র জমজমের পানি বিতরণ করা হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে যাতে হজযাত্রীদের কষ্ট না হয়, সেই দিকে খেয়াল রেখে নামাজ শুরু হওয়ার পরপরই সড়ক বিভাজকগুলোতে স্থাপিত উঁচু ফোয়ারা থেকে শীতল পানি স্প্রে করা হয়েছে। এরপরেও আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেকেই শারীরিকভাবে কিছুটা কাবু হয়ে পড়ছেন। আবার ভাষার ভিন্নতা, নতুন দেশ ও নতুন পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণেও নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন কিছু হজযাত্রী।
বাংলাদেশের হজযাত্রী এক লাখ ২২ হাজার
২০২০ এবং ২০২১ সালে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকায় শুধুমাত্র সৌদি আরবের সীমিত সংখ্যক পুরুষ ও নারী হজ পালনের সুযোগ পেয়েছিলেন। ওই সময়ে সৌদি আরব সরকারের কঠোর বিধি-নিষেধ থাকায় এর বাইরে অন্য কোনো রাষ্ট্রের মুসলমানরা হজ পালনের সুযোগ পাননি। পরবর্তীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ার পর শর্ত সাপেক্ষে বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল করায় দুই বছর পর ২০২২ সালে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশ (সৌদি আরব ছাড়া) থেকে প্রায় সাড়ে আট লাখ মুসলমান পবিত্র হজ পালন করতে পেরেছেন।
অন্য সব বছরের মতো এবারও প্রতিটি দেশের জন্য হজ যাত্রীদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সৌদি আরব সরকার। তবে ব্যয় বাড়ায় এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের নির্দিষ্ট সংখ্যা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ জন্য কয়েক দফায় হজ নিবন্ধনের সময় সীমা বাড়ানোর পরেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২২ হাজারের বেশি পরুষ ও নারী হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
এ বছর বয়সের সর্বোচ্চ সীমার শর্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরাও হজ পালনের সুযোগ পেয়েছেন। এবার সরকারিভাবে হজ পালনে খরচ হচ্ছে ছয় লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা। বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে হজ পালনে সর্বনিম্ন ব্যয় হচ্ছে ছয় লাখ ৬০ হাজার ৮৯৩ টাকা।