মাঠে নামছে জামায়াত, ঈদের পর বিভাগে সমাবেশ
দৈনিকসিলেটডেস্ক
দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে কোণঠাসা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হঠাৎ করে নড়েচড়ে বসেছে। ১০ বছর পর রাজধানীতে প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি জানান দেয় দলটি। এবার নয় (৯) সাংগঠনিক বিভাগীয় শহরে সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ঈদের পর ধারাবাহিকভাবে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও ঢাকায় পালিত হবে এ কর্মসূচি। এ লক্ষ্যে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে নেওয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সমাবেশের অনুমতির জন্য পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন করতে স্ব স্ব সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্রমতে, ‘কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে’ এ কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকার সমাবেশের মতোই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চায় দলটি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রকাশ্যে নিজেদের শক্তি দেখাতে চাইছে তারা। একই সময়ে বিএনপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটেরও এক দফা আন্দোলনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের যুগান্তরকে বলেন, ‘ঈদুল আজহার পর সব সাংগঠনিক বিভাগে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে জামায়াতে ইসলামী। অতীতের মতো শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ হবে। দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কোন তারিখে করবে তা সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীল নেতাদের এখতিয়ারে দেওয়া হয়েছে। কোন বিভাগ থেকে শুরু হবে তাও কেন্দ্র থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বিভাগীয় নেতারা তাদের সুযোগ মতো তারিখ নির্ধারণ করে সমাবেশ করবেন।
এজন্য সব বিভাগে অনুমতির জন্য পুলিশের কাছে আবেদন করতে বলা হয়েছে।’
১০ জুন ঢাকায় ঘরোয়া সমাবেশের অনুমতি পেয়ে বড় জমায়েত করেছিল জামায়াত। প্রায় এক দশক ধরে অনেকটা ‘নিষিদ্ধ’ থাকার পর হঠাৎ জামায়াতকে সরকার ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি দেয়। এটি আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে ‘সমঝোতার’ সূত্রপাত নাকি ওই সমাবেশ যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির ‘সুফল’-এমন নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
সরকারের সঙ্গে সমঝোতার গুঞ্জন প্রসঙ্গে ডা. তাহের বলেন, ‘যারা কখনো জামায়াতে ইসলামীকে ভালো চোখে দেখিনি তারাই এসব কথা বলছেন। সরকারের সঙ্গে কোন ধরনের আঁতাত বা সমঝোতার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ এই সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির।’
সূত্রমতে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বিএনপির সিনিয়র দুই নেতার সঙ্গে সম্প্রতি জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ হয়েছে। জামায়াত সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকবে বলে বিএনপিকে জানানো হয়েছে। আন্দোলনে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো জামায়াতও পৃথক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে। এরই অংশ হিসাবে বিভাগীয় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, এবার তারা কোনো ফাঁদে পা দেবেন না। সরকারি ছুটির দিনেই সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চাইবেন। ঢাকার মতোই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে।
রোববার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে এক সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান সরকার অবৈধভাবে রাতের ভোটে ক্ষমতা দখল করেছে। জনগণের এখন একটাই দাবি, স্বৈরাচার সরকারের পতন। ফলে এই এক দফা দাবি আদায়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঈদুল আজহার পর সব রাজনৈতিক দল ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাব। এই সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করার প্রশ্নই আসে না।’
রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। বৃহত্তর বেঞ্চের দেওয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দলটি। সেই আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিচারাধীন এই আপিলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন দাবি করায় জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী যেন সভা-সমাবেশ, মিছিলসহ কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারে সে বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে দুটি আবেদন করা হয়। আগামী ৩১ জুলাই এ আবেদনের ওপর আপিল বিভাগে শুনানি হবে। জামায়াতের সিনিয়র এক নেতা জানান, এ নিয়ে করণীয় ঠিক করতে দলের আইনজীবীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ডা. তাহের বলেন, ‘আমরা মনে করি এটি অযাচিত এবং হয়রানিমূলক একটি পদক্ষেপ। এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করার জন্য এটি করা হয়েছে।’
সূত্র:যুগান্তর