মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করবেন কীভাবে
দৈনিকসিলেটডেস্ক
রান্নাঘরের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকায় এখন অনেকেই হয়তো মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে উপরের দিকে রাখবেন। আধুনিক বিশ্বে এই মাইক্রোওয়েভ এখন জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এতে দ্রুত খাবার গরম করার পাশাপাশি বেশ কিছু রান্নাও করে ফেলা যায় অনায়াসে।
পুরো খাবার রান্না করা এবং খাবার গরম করার পাশাপাশি, এই ওভেনের অনেকগুলো সহজ ব্যবহার রয়েছে যা রান্নাঘরে আপনার সময় এবং শ্রম বাঁচাতে পারে।
পেঁয়াজ নরম করা
চকলেট গলানো
শুকনো লতা বা গুল্মজাতীয় কিছু ঠিক করা (পানি দিয়ে একটু ভিজিয়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাইক্রোওয়েভে রাখলে সতেজ হয়ে যায়। তবে নির্দিষ্ট কিছু খাবারের ক্ষেত্রে এমনটা সম্ভব)
মাখন গলানো
চালের পুডিং বানানো
ইত্যাদি কাজগুলো অনায়াসে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে করা সম্ভব
তবে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্নার আগে কয়েকটি বিষয় মনে রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
১. সবসময় ধাতু পরিহার করুন
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে কখনোই ধাতুজাতীয় কিছু দেওয়া যাবে না। অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল বা ইস্পাত দিয়ে তৈরি কোনও কিছু ওভেনে দিলে আগুন ধরে যেতে পারে। কারণ এগুলো সহজেই উত্তপ্ত হয় ফলে ঝুঁকি থাকে অনেক।
রান্নাঘরে আগুন লাগার অনেক ঘটনা ঘটেছে শুধুমাত্র এই কারণে। সুতরাং রান্না করার সময় মাইক্রোওয়েভ ওভেনের জন্য নিরাপদ পাত্র ব্যবহার করতে হবে।
সবসময় ওভেনপ্রুফ বাটি ব্যবহার করা উচিত। আর প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করতে চাইলে সেটা ওভেন প্রুফ কিনা তা জেনে ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
২. রান্নার সময় অনুযায়ী খাবার আলাদা করুন
কিছু খাবার আছে যা একসাথে সিদ্ধ হয় না, কিছু খাবার বেশি সময় লাগে কিছু খাবার সিদ্ধ হতে কম সময় লাগে। এটা মাথায় রেখে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করতে হবে – যেন ওভারকুকিং এড়ানো যায়।
যেমন- শক্ত সবজি আর বড় বড় টুকরার মাংস হতে বেশি সময় লাগবে। সুতরাং এসব আইটেম একসাথে রাঁধতে কোনটা আগে সিদ্ধ হবে কোনটা পরে এমনভাবে আইটেমগুলো আলাদা করতে হবে।
৩. রান্নার সময় কমাতে খাবারগুলো কেটে নিন
মাংসের বড় টুকরা বা বড় বড় সবজির টুকরা যেমন আলু- এগুলো ছোট ছোট করে কাটার পরামর্শ দেন রন্ধন বিশেষজ্ঞরা। ছোট টুকরা হলে খুব তাড়াতাড়ি মাইক্রোওয়েভে রান্না করা সম্ভব।
৪. পাত্র অতিরিক্ত ভরে দেয়া যাবে না
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্নার সময় খাবার সিদ্ধ হয়ে পানি উপচে পড়তে পারে, সুতরাং এদিকটা মাথায় রাখতে হবে। খাবার গরম করার সময়ও খেয়াল রাখতে হবে। কোনও পাত্র একেবারে পরিপূর্ণ করে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে দেয়া উচিত নয়।
৫. ক্লিং র্যাপ দিয়ে খাবারের পাত্র ঢেকে রাখতে হবে
মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরম দেওয়ার সময় বা রান্না করার সময় খাবারের পাত্রটি ক্লিং র্যাপ দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। নয়তো খাবারের আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে ভাত,পাস্তা বা স্যুপের মতো পানিযুক্ত খাবারের জন্য এটি জরুরি।
ক্লিং র্যাপ দিয়ে না ঢাকলেও ওভেনপ্রুফ ঢাকনা ব্যবহার করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। খাবারের পানি শুকানোর ঝুঁকি যেমন এড়ানো যায় এর পাশাপাশি মসলাও ছিটে যাবার ভয় থাকে না। ফলে ওভেনের ভেতরটা নোংরা হবে না। তবে কেকের মতো শুকনা খাবার না ঢেকেই রান্নার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
৬. নির্দিষ্ট সময় পর পর খাবার নাড়তে হবে
রান্না করার জন্য টাইমার দিয়ে ভুলে গেলে চলবে না। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করার সময় খাবারের দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং মাঝে মাঝে নাড়তে হবে। এতে তাপ সবখানে পৌঁছাতে পারবে এবং মাঝেমাঝে নাড়লে নির্দিষ্ট জায়গার খাবার আধা সেদ্ধ অবস্থায় থাকবে না। সবখাবারই সেদ্ধ হবে ঠিকমতো। টাইমার এমনভাবে সেট করতে হবে যেন খাবারটা নেড়ে আবার নতুন করে টাইমার সেট করা যায়।
৭. ডিম দিলে সাবধান থাকতে হবে
মাইক্রোওয়েভে যদি ডিম পোচ করতে চান তাহলে কাঁটাচামচ বা টুথপিক দিয়ে কুসুমটা একটু ছিদ্র করে দিতে হবে। আরও কিছু খাবার আছে যেগুলো মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করার সময় বা রান্না করার সময়
৮. রান্নার পর মাইক্রোওয়েভ পরিষ্কার করতে হবে
রান্না করার সময় খাবারের ছিটা পড়তে পারে বা খাবার ছড়িয়ে পড়তে পারে ওভেনের ভেতরে। ঠিকঠাক পরিষ্কার না করলে জীবাণুর আনাগোনা বাড়তে পারে।
লেবুর রস এবং পানি মিশিয়ে ওভেনের ভেতরের অংশ পরিষ্কার করতে পারেন।
এ ছাড়া বাজারে ওভেন পরিষ্কারের জন্য লিকুইড সোপ, লিকুইড ক্লিনার পাওয়া যায়। এগুলো দিয়েও ওভেন পরিষ্কার করে গন্ধমুক্ত করা যায়।
কতটা নিরাপদ এই নিয়ে বিতর্ক
মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক আছে। কিন্তু এই ওভেনে খাবার গরম করা হলে বা খাবার তৈরি করা হলে রেডিয়েশন নিয়ে ঝুঁকি আছে বা মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করা খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর – এরকম কোনও প্রমাণ এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা পাননি।
সে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন নিয়ে চিন্তার কিছু নেই- বরং এরকম ওভেনে কম সময়ে রান্না করা যায় বলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে খাবারের কিছু পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে।
তবে এরকম ওভেনে খাবার কতটুকু গরম করছেন, কীভাবে গরম করছেন, খাবার কতটা গরম হলে বা কীভাবে রান্না করলে খাদ্যগুণ ও পুষ্টি বজায় থাকবে, প্লাস্টিকে খাবার গরম করছেন কিনা -এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
“কিছু প্লাস্টিক মাইক্রোওয়েভের জন্য ডিজাইন করা নয় কারণ সেগুলো নরম ফ্লেক্সিবল করার জন্য পলিমার দেয়া থাকে। মাইক্রোওয়েভ ওভেনের গরমে যা গলে যেতে পারে” – বলছেন ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির ফুড ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর জুমিং ট্যাং। সুতরাং এই দিকটা মাথায় রাখতে হবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা