খুন্তির ছ্যাকায় সারা শরীর ঝলসানো শিশু জান্নাতের
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :
চেয়েছিলাম তিন বেলা ভালো-মন্দ খেয়ে মানুষ হবে আমার শিশু মেয়ে জান্নাত (১১)। ভালো থাকবে, সুস্থ থাকবে। বয়স হলে বিয়ে দেবো, তার ঘর-সংসার হবে। কিন্তু ওই বাড়ির লোকেরা খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়ে ঝলসে দিয়েছে হাত, পিঠ ও উরুসহ শরীরের অসংখ্য জায়গা।’
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টাফ নার্স সাবিহা আক্তার এর হাতে অমানবিক নির্যাতন শিকার হয়েছে ১১ বছরের কাজের মেয়ে জান্নাত। এঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়েছে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড়।
জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড ছৈলাখেল ৯ম খন্ড গ্রামের গরীব জাকির হোসেন পেশায় দিন মজুর অনেক অসহায় ফ্যামিলি দিন এনে দিনে খায় এর উপর ৬টি মেয়ে, ভাল করে ভরণপোষণ করতে পারে না, অনেকের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে চলেন। এর জন্য বাপ হয়ে নিজের একটি মেয়েকে একটু ভালভাবে খেয়ে বেচে থাকার জন্য অনেকের রিকুয়েস্টে পাশের এলাকার মেয়ে সরকারী চাকুরীজীবী সিলেট শহরস্থ বাসায় কাজের জন্য দেন, যাতে করে নিজের বাড়িতে না খেয়ে কষ্টে দিন পার করার চেয়ে ৩বেলা একটু ভালভাবে খেতে পারে।
ছৈলাখেল ৮ম খন্ডের দুলু মেম্বারের মেয়ে সিলেট শহরস্ত ওসমানী মেডিকেলের নার্স সাবিহা আক্তার ও ছোট বোন রেহেনা আক্তার সিলেট শহরের একটি বাসায় থাকেন। তাদের বাসায় ৯ম খন্ড গ্রামের অসহায় বাবা জাকির হোসেনের মেয়ে জান্নাত (১১)কে কাজের উদ্দেশ্যে ৮/৯ মাস আগে নেন।
সেই শুরু থেকে জান্নাতের উপর চলে অমানবিক নির্যাতন। সাবিহা আক্তার ও তার বোন ছোট মেয়ে জান্নাতের উপর দীর্ঘ ৭/৮মাস যাবত সারা শরীরে ভাজা কাটা পুড়ে ছেকা দেওয়াসহ আরো নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতন করে থাকে, এবং পিচ্চি মেয়ে জান্নাতকে সরকারি চাকরীর সুবাদে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখায় এগুলা যেনো কারো কাছে না বলে। জান্নাতের পরিবারের কাছেও মেয়ের নামে অনেক অভিযোগ দিয়ে রাখতো তারা। অসহায় জাকির তার মেয়েকে এনে নিজের কাছে রাখবে এ সাহসও করে উঠতে না পেরে সাবিহার করা মিথ্যা অভিযোগের পরেও তাদের বাসায় কাজের জন্য রাখেন।
এদিকে ছোট মেয়ে জান্নাত নার্স সাবিহার হুমকিতে বাড়িতে বলতেও পারে না, না বলতে পারে নিরবে তাদের নির্যাতন দীর্ঘ ৭/৮মাস ধরে সহ্য করে যাচ্ছে। এই ইদে সাবিহা তার স্বামীর বাড়িতে ইদের ছুটিতে যাওয়াতে জান্নাতকে তার নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। তারপর তার মেয়ের সারা শরীরে এরকম ক্ষত বিক্ষত চিহ্ন দেখেন। কয়েক যায়গায় ক্ষত অনেক পুড়নো হওয়ায় ইনফেকশন করেছে। নিরুপায় অসহায় বাবা এখন কি করবে?
যাদের কোন টাকা নাই ক্ষমতা নাই তারা কি ক্ষমতাসীনদের কাছে জিম্মি? অসহায় জাকিরের মেয়ের উপর অমানবিক নির্যাতনের বিচার কি আদৌ হবে নাকি ক্ষমতা আর টাকার কাছে হেরে যাবে? সুশীল সমাজ ও বিবেকবানদের কাছে অনুরোধ অসহায় জাকিরের মেয়ে জান্নাতের পাশে দাড়ান। কোন ক্ষমতার কারনে যেনো ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত না হয় এই অসহায় পরিবার। আজকে আপনি অন্যায় প্রশ্রয় দিবেন কালকে আপনার উপর অন্যায় হলে অন্যরা মজা নিবে মরার পরেও জবাব দিতে হবে।
দেশের বিচার ব্যবস্থার কাছে এরকম জুলুম শিশু নির্যাতনকারীর দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির আশা করেন সচেতন মহল। সকল বিবেকবানদের অসহায় জাকিরের পাশে থাকার জন্য আহবান জানিয়ে এই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এলাকার সচেতন মহল।