তেলবাহী ট্যাংকার বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ৪
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
ঝালকাঠিতে তেলবাহী ট্যাংকার সাগর নন্দিনী-২ বিস্ফোরণের তৃতীয় দিনের উদ্ধার অভিযানে মোট তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নিখোঁজ চারজনের মরদেহই উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।
কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট শাফায়েত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণে জাহাজের ভেঙ্গে পড়া অংশ থেকেই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবুরিরা সোমবার সকাল ১১টার দিকে প্রথমে দুজনের এবং পরে দুপুরে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
এর আগে রোববার জাহাজটির ইঞ্জিন রুম থেকে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এখন আর কেউ নিখোঁজ নেই।
যাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে- তারা হলেন জাহাজের গ্রিজারম্যান আব্দুস সালাম হৃদয়, মাস্টার ইনচার্জ রুহুল আমীন খান, সুপারভাইজার মাসুদুর রহমান বেলাল এবং ড্রাইভার সারোয়ার হোসেন।
শনিবার দুর্ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজদের খোঁজে স্বজনরা সুগন্ধা নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছিলেন। মরদেহ উদ্ধারের পর স্বজনদের আহাজারী আর কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। মরদেহগুলো অনেকটাই বিকৃত হয়ে গেছে। স্বজনরা চুল, দাড়ি ও শরীরের গড়ন দেখে তাদের শনাক্ত করেন।
লেফটেন্যান্ট শাফায়েত হোসেন বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান সমাপ্ত করা হবে।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার সাগর নন্দিনী-২ ট্যাংকারটি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর পাড়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানির জন্য জ্বালানি তেল নিয়ে আসে। ৯ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে সেটি নোঙ্গর করা ছিল রাজাপুর গ্রামের কাছে।
শনিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে হঠাৎ করেই ট্যাংকারটিতে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে জাহাজের পাঁচজন দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঝালকাঠি জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসক ও জাহাজের উদ্ধার হওয়া বাবুর্চির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জাহাজটিতে মোট নয়জন ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন দগ্ধ হয়েছেন, নিখোঁজ ছিলেন চারজন।
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, বিস্ফোরণের পর সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটির একটি অংশ উড়ে গিয়ে সুগন্ধা নদীতে পড়েছিল। সোমবার সকাল থেকে নদী থেকে জাহাজটির অংশ উদ্ধারে কাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ ’নির্ভিক’।
এ বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে কোম্পানির ব্যবস্থাপককে (অপারেশন) প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড।
শনিবার দুর্ঘটনার পর থেকেই কমিটির সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন পদ্মা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান।
সাগর নন্দিনী-২ নামের এই জাহাজটি মাত্র ছয় মাস আগে ২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জ্বালানি তেল নিয়ে চাঁদপুরে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে যাওয়ার পথে ভোলার তুলাতুলি কাঠিরমাথা এলাকায় ডুবে গিয়েছিল। তখন কুয়াশার মধ্যে বালুবাহী একটি বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষে ট্যাংকারটির তলা ফেটে গিয়েছিল।
এর আগে, ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর সুগন্ধা নদীর একই স্থানে একই কোম্পানির সাগর নন্দিনী-৩ জাহাজটিতেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন।
সাগর নন্দিনী-২ এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটল।