সুনামগঞ্জে বিপদ সীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানি
আল-হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
গত কয়েকদিনের টানা অবিরাম বৃষ্টিপাত, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জ জেলা শহরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যার আশংঙ্কা দেখা দিয়েছে। সোমবার (৩ জুলাই) বিকাল ৩টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই এলাকায় গত ২৪ ঘন্টায় ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গতকাল কোন বৃষ্টিপাত হয়নি এবং সোমবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলা সদরে বৃষ্টিপাত বন্ধ ছিল। এর আগে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সুরমা নদী পয়েন্টে সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি বিপদ সীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পাশাপাশি সেখানে ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ফলে জেলার প্রধান নদী সুরমা,কুশিয়ারা,যাদুকাটা ও কালনী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার ছাতক,দোয়ারাবাজার,তাহিরপুর,শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
এদিকে দুর্যোগ মোকাবেলার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ঈদুল আযহার সময় থেকেই ১২টি উপজেলায় ৩০ মে: টন করে মোট ৩৬০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানিয়েছেন।
গত ৫ দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জ শহরের কাজির পয়েন্ট,উকিলপাড়া,নতুনপাড়া,বড়পাড়া সাহেববাড়ি ঘাট,ষোলঘর হাজিপাড়া,জামতলা,সুলতানপুর,পাঠানবাড়ি ও নবীনগরসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সাধারন জনগনের র্দূভোগ বেড়েই চলেছে। জেলা শহরের সাথে-বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর ও দিরাই শাল্লার একমাত্র সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান,বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মাঝারি ধরনের বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে বড় ধরনের বন্যার কোন আশংঙ্কা আপাতত নেই বলেও জানান তিনি।
এদিকে রবিবার দুপুরে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভা ডাকেন এবং আসন্ন বন্যা মোকাবেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সকল জনপ্রতিনিধিদেরকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকর্তা (ডিআরও) মো.শফিকুল ইসলাম বলেন,আমরা চলমান দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে বড় ধরনের কোন বন্যা এবার হবেনা ইনশাল্লাহ।
সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য এম মুহিবুর রহমান মানিক ও সুনামগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসসকে বলেন,এবার গতবারের ন্যায় ভয়াবহ বন্যা হবেনা। তবে নদনদীতে চলমান পানি বৃদ্ধিতে সৃষ্ট স্থানীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহনের জন্য আমরা জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছি।