শয়তান কি মানুষের আকৃতি ধারণ করতে পারে?
মো. আবদুল মজিদ মোল্লা :
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে রমজানের জাকাত সংরক্ষণের দায়িত্বে নিযুক্ত করলেন। এক ব্যক্তি এসে অঞ্জলি ভর্তি করে খাদ্যসামগ্রী নিতে লাগল। আমি তাকে পাকড়াও করলাম এবং বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব। সে বলল, আমাকে ছেড়ে দিন।
আমি খুব অভাবগ্রস্ত, আমার ওপর পরিবারের দায়িত্ব আছে এবং আমার প্রয়োজন তীব্র। ফলে আমি ছেড়ে দিলাম। সকালে নবী (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হুরায়রা, তুমি রাতের বন্দিকে কী করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, সে তার তীব্র অভাব ও পরিবার-পরিজনের কথা বলায় তার প্রতি আমার দয়া হয়, তাকে ছেড়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, সাবধান! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে এবং সে আবার আসবে।
আমি তার অপেক্ষায় থাকলাম। এমন ঘটনা আরো দুবার ঘটে। শেষবার তিনি শয়তানকে নবীজি (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত করতে চাইলে সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব।
যা দ্বারা আল্লাহ তোমাকে উপকৃত করবেন। তখন শয়তান বলল, যখন তুমি রাতে শয্যায় যাবে তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে এবং ভোর পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না। কাজেই তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে নবীজি (সা.)-কে ঘটনা বর্ণনা করা হলে তিনি বললেন, হ্যাঁ, কথাটি সে তোমাকে সত্য বলেছে।
কিন্তু সাবধান! সে মিথ্যুক। এরপর বললেন, আবু হুরায়রা, তুমি কি জানো, তিন রাত ধরে তুমি কার সঙ্গে কথা বলেছিলে। আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, না। তিনি বললেন, সে ছিল শয়তান। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
আলোচ্য হাদিসের আলোকে শয়তান সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জানা যায়। যেমন—
১. শয়তান মানুষের আকৃতি ধারণ করতে পারে। তারা মানুষকে দেখে, কিন্তু মানুষ তাদের দেখে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সে নিজে এবং তার দল তোমাদের এমনভাবে দেখে যে তোমরা তাদের দেখতে পাও না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৭)
২. শয়তান মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারে। সে যেকোনো ভাষায় কথা বলতে সক্ষম।
৩. আল্লাহর নাম স্মরণ না করলে শয়তান মানুষের খাবারে অংশগ্রহণ করে। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ ও খাদ্য গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম নিলে শয়তান (তার সঙ্গীদের) বলে, রাতে এখানে তোমাদের থাকা-খাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যখন কোনো ব্যক্তি ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম নেয় না, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার স্থান পেলে। সে যখন খাবার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে না, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাতে থাকার জায়গা ও খাওয়ার দুটোর সুযোগই পেলে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩৭৬৫)
৪. আল্লাহর নাম স্মরণ করার মাধ্যমে মানুষ শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জিনের দৃষ্টি ও আদম সন্তানের লজ্জাস্থানের মাঝে পর্দা হলো (আল্লাহর নাম), যখন তাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করে সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬০৬)
৫. জিন ও শয়তান মানুষের সম্পদ চুরি করে।
৬. শয়তানের অভ্যাস ও কাজ হলো মিথ্যা বলা, যদিও সে কখনো কখনো সত্য বলে।
৭. শয়তান মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণের বিষয়গুলো জানে। সে কল্যাণ থেকে বিমুখ করার চেষ্টা করে।
৮. ভালো-মন্দের জ্ঞান শয়তানেরও আছে। তবে আমল না করায় সে উপকৃত হতে পারে না। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া শিখিয়েছেন—‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এমন জ্ঞান থেকে পানাহ চাই, যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় না।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৫৪৭০)
৯. আয়াতুল কুরসি শয়তানের হাত থেকে আত্মরক্ষার সর্বোত্তম উপায়।
১০. আল্লাহ তাঁর কোনো কোনো বান্দাকে শয়তান বন্দি করার ক্ষমতা দান করেছেন। যেমন আবু হুরায়রা (রা.)-কে দিয়েছিলেন। এটা তাঁর কারামাতস্বরূপ। নতুবা শয়তান মানুষের আয়ত্তের বাইরে।