ভিডিও কনটেন্ট তৈরি নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা
দৈনিকসিলেটডেস্ক
ইদানীং মানুষের সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম বিভিন্ন ভিডিও ফ্ল্যাটফর্ম। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ সবাই ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট নিয়ে। বিশেষ করে যেই কনটেন্টগুলো সংক্ষিপ্ত হয়, সেগুলোর প্রতিই মানুষের আগ্রহ বেশি। একের পর এক কনটেন্টে চোখ বোলাতে বোলাতে কত মূল্যবান সময় যে শেষ হয়ে যায়, তার হিসাব নেই।
ফলে মানুষের আমল নষ্ট হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা নষ্ট হয়। এগুলোকে কেন্দ্র করে কারো কারো পরিবারই নষ্ট হয়ে যায়।
যারা কনটেন্ট তৈরি করেন, তারা শিক্ষণীয় কনটেন্টগুলোতে তেমন সাড়া না পাওয়ায় উদ্ভট কনটেন্টেই বেশি মনোযোগ দেন। যেগুলো আল্লাহর জিকির থেকে মানুষকে গাফেল রাখে।
অশ্লীলতা ও অবান্তর বিষয়গুলো শেখায়। পাপপ্রবণতা বৃদ্ধি করে। মানুষের চিন্তা-চেতনাতে বিকৃতি সৃষ্টি করে। পবিত্র কোরআনে এ ধরনের সব কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ওইগুলো হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আজাব।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)
তাই মুমিনের উচিত এসব কনটেন্ট দেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। এসব কনটেন্ট তৈরিতেও আত্মনিয়োগ না করা।
বাড়তি আয়ের আশায় এখন বিভিন্ন বয়সী মানুষ এই ময়দানে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। অধিক ভিউ পেতে নিজেদের দৈনন্দিন ব্যক্তিগত বিষয়গুলো পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও কনটেন্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ভিউ বেশি পাওয়ার জন্য কেউ কেউ উদ্ভট সাজে উদ্ভট বা অশ্লীল কনটেন্ট নিয়ে হাজির হচ্ছে। যা জঘন্য হারাম কাজ। বিপদের কথা হলো, যতজন মানুষ এই ভিডিওগুলো দেখে গুনাহ করবে, ভিডিও নির্মাতাও তাদের সবার গুনাহের একটি অংশ পেয়ে যাবে। যা ভিডিও নির্মাতার গুনাহের পাল্লা প্রতি মুহূর্তেই ভারী করবে।
এমনকি ভিডিও নির্মাতার মৃত্যুর পরও যদি কেউ ভিডিও দেখে, তার গুনাহও তার আমলনামায় পৌঁছে যাবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে নেক কাজের দাওয়াত দেবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; যারা তার দাওয়াত পেয়ে নেক কাজ করবে। অথচ তাদের সওয়াবের সামান্যও হ্রাস পাবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি মানুষকে গুনাহের কাজের দাওয়াত দেবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ গুনাহ পাবে, যারা তার দাওয়াত পেয়ে গুনাহের কাজ করবে। অথচ তাদের গুনাহ হ্রাস পাবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৯৮০)
কেউ কেউ আবার ভিডিও কনটেন্টের মাধ্যমে অন্যকে নিয়ে ট্রল করে মজা নেওয়ার চেষ্টা করে। এটি জঘন্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদাররা, কোনো সম্প্রদায় যেন অপর সম্প্রদায়কে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রুপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রুপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর তোমরা একে অন্যের নিন্দা কোরো না এবং তোমরা একে অন্যকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১১)
আবার কেউ কেউ বিভিন্ন ভুয়া তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ভিডিও তৈরি করছে। গুজব ছড়িয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে। কারণ এক শ্রেণির ভিউআর এসব ভিডিও বেশ পছন্দ করে। অথচ মিথ্যা ছড়ানো, গুজব ছড়ানো মুনাফিকের কাজ। (বুখারি, হাদিস : ৩৩)
অতএব আমাদের সবার উচিত, এ ধরনের কার্যক্রম থেকে নিজেকে ও সন্তানদের দূরে রাখা। এ ধরনের পেশায় কেউ কেউ লাখ টাকা আয় করলেও বেশির ভাগ মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে ফেলে। পরিবারব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়। মানুষের মধ্যে অশ্লীলতা ও গুনাহ ছড়িয়ে অর্থ উপার্জন করাও কোনো মুসলমানের জন্য হালাল নয়। আল্লাহ সবাইকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।