জগন্নাথপুরে দুর্ঘটনা এড়াতে মাঠে নেমেছে সামাজিক সংগঠন
জগন্নাথপুর প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের ধেবে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ডাক বাংলো সেতুতে দুর্ঘটনা এড়াতে ও যানজট নিরসনে কাজ করছে সামাজিক সংগঠন ‘ফেয়ার ফেইস জগন্নাথপুর’ এর সদস্যরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁদের মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে। ফলে যানজট কমেছে। তাদের এ কার্যক্রমে খুশি স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডাক বাংলো সেতুর দুই পাড়ের যানজট নিরসনে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে যানবাহনের চালকদের নির্ধারিত স্থানে যানবাহন রাখতে ট্রাফিক পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে সামাজিক ওই সংগঠনের সদস্যরা সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে যান না চালানোর জন্য সচেতনামূলক প্রচারণা চালায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবুর রহমান বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে উপজেলা সদরের নলজুর নদীর ওপর নির্মিত বেইলি সেতু পানিতে ডুবে যাওয়ায় নদীর ঝুঁকিপূর্ণ ডাক বাংলা সেতুতে যানবাহণের প্রচণ্ড চাপ বাড়ে। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসন সেতু দিয়ে যান চলাচল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও সেতু এলাকায় যাটজট সৃষ্টি হয়। এতে ট্রাফিক পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে। যানজট নিরসে ও নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে জগন্নাথপুরের একটি সামাজিক সংগঠনের সসদস্যরা যেভাবে সড়কে নিরসলভাবে কাজ করেছে এতে আমরা খুশি।
সংগঠনের সভাপতি সাইফুর রহমান মিনহাজ বলেন, নলজুর নদীর দুই সেতুই যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ বেড়েছে উপজেলাবাসীর। অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে যান বাহন চালানোর চেষ্ঠা করছেন। আমরা ওই সেতুতে দুর্ঘটনা এড়াতে ও জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে দিনভর কাজ করেছি। আমাদের এ কাজ অব্যাহত থাকবে।
সংগঠনের মহাসচিব এম. শামিম আহমদ বলেন, ২০১৯ সালে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘ফেয়ার ফেইস জগন্নাথপুর’ যাত্রা শুরু করে। সংগঠনের প্রতিষ্ঠা থেকে সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে। বৃক্ষরোপন, শিক্ষামূলক কার্যক্রম, ত্রাণ বিতরণ, সচেতনামূলক কাজসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে সময়ে সংগঠনের সদস্যরা কাজ করে আসছে। বর্তমানে আমাদের তিন শতাধিক সদস্য রয়েছেন।
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, জনসাধারণের দুর্ভোগ এড়াতে আমাদের সঙ্গে সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা স্বেচ্ছাশ্রমে মাঠে কাজ করেছে। এটি সত্যেই প্রসংশিত উদ্যোগ। ওই সংগঠন করোনা ও বন্যা পরিস্থিতিসহ সামাজিক বিভিন্ন কাজে অগ্রসর ভূমিকা রেখে আসছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নের গুদামের সামনে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি টেকসই থাকলেও এক সঙ্গে বড় দুটি যান চলাচল করতে না পারায় যানজটের সৃষ্টি হয়। যে কারণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির মাধ্যমে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরাতন এ সেতু ভেঙে নতুন দৃষ্টি নন্দন আর্চ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ২৬ মার্চ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নতুন সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। পরে বিকল্প হিসেবে নির্মিতি বেইলি সেতু হেলিপ্যাড এলাকায় দিয়ে উপজেলাবাসী যাতায়াত ব্যবস্থা অব্যাহত থাকে।
উপজেলাবাসীর অভিযোগ, ওই বেইলি সেতুটি নিচু করে তৈরী করায় আষাঢ়ের ঢলে নলজুর নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত সোমবার থেকে সেতুটি ডুবে যায়। ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, ১৯৮৮ সালে নলজুর নদীর ওপর ডাক বাংলো সেতুটি এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সেতুর কাজ শেষ হয়। সেই থেকে সরো এ সেতু দিয়ে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করে। বিগত ২০২১ সালে নলজুর নদী খনন কালে সেতুর পিলারের কাছ থেকে খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার সময় সেতুর দুটি অংশ দেবে যায়। এক বছর যান চলাচল বন্ধ থাকার পর গত ২৩ মার্চ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জগন্নাথপুর পৌরসভার উদ্যোগে সেতুর দেবে যাওয়া অংশে ষ্টীলের পাটাতন বসিয়ে সেতুটি চালু করা হয়।এদিকে দুই সেতু দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হওয়াতে পায়ে হেঁটে সেতু পারাপার করতে হচ্ছে জনসাধারণকে। ফলে চরম ভোগান্তি পড়েছেন উপজেলাবাসী।