শান্তিগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৪: কাঁঠাল ছিল ‘উপলক্ষ’, পুরুষশূন্য গ্রাম

দৈনিকসিলেট প্রতিবেদক :
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ গ্রামে কাঁঠালের নিলামকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত বেড়ে চারজনে দাঁড়িয়েছে। গত সোমবারের এ ঘটনায় মোট আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত মামলা করেনি কোনো পক্ষ। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার পর থেকে আটক আতঙ্কে গ্রামটি প্রায় জনশূন্য।
গতকাল দুপুরে গ্রামের প্রবেশপথ হাসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, পুলিশের কয়েকজন সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন। কাউকে সন্দেহজনক মনে হলেই পরিচয় জানতে চাচ্ছেন তারা। গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ি তালাবদ্ধ। একটু এগোতেই একটি বাড়ি থেকে নারীর কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। সংর্ঘষের ঘটনায় আহত ওই বাড়ির মখলিছুর রহমান (৬০) সোমবার রাতে মারা গেছেন। ঘটনার পর থেকে বাড়িতে আছেন তাঁর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শাহেদা বেগমসহ কয়েকজন নারী।
নিহতরা হলেন, বাবুল মিয়া, নুরুল মিয়া, শাহজাহান মিয়া, মুখলেছুর রহমান। তারা সবাই হাসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।
শাহেদা জানান, সোমবার সকালে গ্রামের উত্তর মাথায় সংঘর্ষের ঘটনার পর দক্ষিণ মাথায় এসে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সময় তাঁর ভাসুর মখলিছুর লাঠি নিয়ে বের হন। এরপর উঠানের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ঘাড়ে ও মাথায় আঘাত করে প্রতিপক্ষরা। পুলিশ আসার খবর শুনে ওড়না দিয়ে তাঁর মাথা বেঁধে পাশের গ্রামে নেওয়া হয়। রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মখছুদ আলীর স্ত্রী রাজিয়া বেগম জানান, ঘটনার পর তাঁর স্বামী ও দুই ছেলে কোথায় আছেন জানেন না। দুপুরে হাসনাবাদ গ্রামের অবস্থা দেখতে আসেন পাশের ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সবুজ মিয়া। এ সময় তিনি বলেন, গ্রামটির কোনো পুরুষ বাড়িতে নেই।
জানা গেছে, সোমবারের ঘটনাটি একটি কাঁঠালের নিলাম নিয়ে ঘটলেও এর পেছনে রয়েছে ৫০ বছর ধরে চলা আধিপত্যের লড়াই। গ্রামের বড় গোষ্ঠী ছিল প্রয়াত সরাই মোড়লের। এই গোষ্ঠী এখন দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগের নেতৃত্বে দ্বীন ইসলাম, আরেক ভাগের নেতা মালদার আলী। গ্রামের চার গোষ্ঠীর লোকজন এখন এই দু’জনের নেতৃত্বে প্রায়ই সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
পাশের গ্রামের বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন দোলন বলেন, গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ স্বাধীনতার আগে থেকেই। স্বাধীনতার পর এই বিরোধে এক পক্ষে নেতৃত্ব দিতেন মালদার আলীর বাবা রিয়াছত আলী ছন্টই। আরেক পক্ষের নেতা ছিলেন সরাই মোড়ল। ৩০-৩৫ বছর আগে দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের আঘাতে নিহত হন রিয়াছত আলী। এর কয়েক বছর আগে সরাই মোড়লের পক্ষের একজন খুন হয়েছিলেন। এরপর কিছুদিন দু’পক্ষই নীরব ছিল।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, চার-পাঁচ বছর আগেও ঈদের দিন দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এ ঘটনায় সবাই মামলায় জর্জরিত ছিল। স্থানীয় এমপি এম এ মান্নানের হস্তক্ষেপে এ ঘটনায় সমঝোতা হয়। এরপর আবার সংঘর্ষে জড়াল তারা।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ জানান, এখনও কোনো পক্ষ মামলা করেনি। ঘটনার পর দুবাই যাওয়ার চেষ্টাকালে এবাদুল হক নামে একজনকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের আটকে অভিযান চলছে।