ব্যান্ডেজ নিয়েও কেন খেলেছিলেন, ২১ বছর পর জানালেন

দৈনিকসিলেটডেস্ক
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ভারতের মধ্যকার টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ গতকাল বুধবার শুরু হয়েছে। উইন্ডিজের মাটিতে এ দুদল টেস্ট খেলতে নামলেই ২০০২ সালের অ্যান্টিগা টেস্টের কথা উঠে আসে। ২১ বছর আগে সেই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলার মরভিন ডিলনের বাউন্সার ভেঙে দিয়েছিল ভারতের অনিল কুম্বলের চোয়াল। তবে ভাঙা চোয়ালে ব্যান্ডেজ বেঁধেই বল করেছিলেন ব্রায়ান লারার বিরুদ্ধে। কিন্তু কেন তাকে সেই অবস্থাতেও বল করতে হয়েছিল, এতদিন পর জানালেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
এক সাক্ষাৎকারে কুম্বলে বলেন, ‘আসলে কয়েকটা উইকেট নেওয়ার দরকার ছিল। চোট পাওয়ার পরে সাজঘরে ফিরে এসে দেখেছিলাম, শচীন টেন্ডুলকরকেও বল করতে হচ্ছে। স্পিন বল করার মতো দলে আর কেউ ছিল না। তখন ওদের ওয়াভেল হাইন্ডস ব্যাট করছিল। পরে কারা ছিল মনে নেই এখন। পরিস্থিতি দেখে মনে হয়েছিল, মাঠে নেমে গোটা দুয়েক উইকেট নিতে হবে আমাকে। ভেবেছিলাম দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন-চারটে উইকেট ফেলে দিতে পারলে আমরা সুবিধাজনক জায়গায় থাকতে পারব। জেতার ভালো সুযোগ থাকবে আমাদের। সে জন্যই আবার বল করতে নেমেছিলাম ব্যান্ডেজ জড়িয়ে।’
কুম্বলে মাঠে নামার কথা নিজেই ফিজিওকে বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘ফিজিও অ্যান্ড্রু লিপাসকে গিয়ে বলেছিলাম, আমি মাঠে নামব। তুমি ব্যবস্থা করো। চেয়েছিলাম, দেশে ফেরার আগে নিজেকে অন্তত যেন বোঝাতে পারি যে চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি।’
এদিকে কুম্বলে লিপাসকে যেমন বলেছিলেন তাকে মাঠে নামানোর ব্যবস্থা করতে, তেমনি স্ত্রী চেতনাকে বলেছিলেন দেশে ফিরলে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করতে। আহত হওয়ার পরেই ফোনে কথা হয়েছিল চেতনার সঙ্গে। ব্যান্ডেজ নিয়েই যে ওই ম্যাচে বল করবেন, সেটাও তখনই বলে দিয়েছিলেন স্ত্রীকে। কুম্বলের কথা বিশ্বাস করেননি চেতনা। কুম্বলে বলেন, ‘চেতনাকে ফোনে জানিয়েছিলাম, আমাকে অস্ত্রোপচার করাতে হবে। দেশে ফিরছি। তুমি ব্যাঙ্গালুরুতে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করো। তবে দেশে ফেরার আগে কয়েক ওভার বল করব। আমার কথা বিশ্বাস করেনি চেতনা। ভেবেছিল মজা করছি। আমার শেষ কথায় তেমন পাত্তা দেয়নি। পরে সত্যিই আমাকে বল করতে দেখে অবাক হয়েছিল।’
বিশ্বের প্রথম সারির অনেক ব্যাটারকে দীর্ঘ ক্রিকেটজীবনে বল করেছেন কুম্বলে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে সাবেক অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমার সময়ের কয়েক জন সেরা ব্যাটার আমাদের দলেই ছিল। একটা ম্যাচে শচীন, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলী, বীরেন্দ্র শেবাগ, ভিভিএস লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে বল করা মানে বুঝতে পারছেন কতটা কঠিন। একটা দুঃস্বপ্নের মতো। তবে কয়েক জন দুর্দান্ত ব্যাটারকে বল করার সুযোগ পেয়েছি।’
এদিকে বিদেশিদের মধ্যে অরবিন্দ ডি সিলভা, ব্রায়ান লারা, ইনজামাম উল হক, ম্যাথু হেডেন এবং জ্যাক কালিসকে সেরা ব্যাটার হিসাবে বেছে নিয়েছেন সাবেক লেগ স্পিনার। তিনি বলেন, ‘ডি সিলভাকে বল করা খুব কঠিন ছিল। আর এক জনের কথা বলব, লারা। প্রতিটি বলে অন্তত তিন রকম শট মারার ক্ষমতা ছিল ওর। কী করবে বোঝা যেত না। আপনি হয়তো এক রকম ভেবে বল করলেন, লারা সম্পূর্ণ অন্য রকম একটা শট মেরে দিল। এগিয়ে এসে মারার চেষ্টা করছে দেখে হয়তো ভাববেন গতিতে পরাস্ত করবেন। ও বলের গতি ব্যবহার করে এগিয়ে এসেও লেট কাট মেরে চার রান তুলে নেবে। এতটাই দক্ষ ব্যাটার ছিল লারা।’
বিশ্বের মাত্র তৃতীয় বোলার হিসাবে টেস্টের এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে কুম্বলের। ১৯৯৯ সালে দিল্লিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।